পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাঙ্কন বেশী উদাহরণের দরকার নাই—ইংরেজী সাহিত্যের কথা উল্লেখ করিয়া উদাহরণের পালা শেষ করিব । বৰ্ত্তমান ইংরেজ জাতির আদিপুরুষ ছিল য়্যাংলো-স্তাক্সন জাতি। এই জাতির একটা নিজস্ব ভাষা ও সাহিত্য ছিল, তাহা ছিল নানা বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ, ঐশ্বৰ্যশালী ও আত্মরক্ষার সকল অস্ত্রে সজ্জিত। এই জাতি ইংলণ্ড বিজয় করিয়া তথায় নিজেদের ভাষাকেই প্রচলিত করিল এবং তাহারই সেবা করিতে লাগিল, ইহাতে ইংরেজী ভাষা আরও পুষ্টি লাভ করিল। কিন্তু অল্প দিনের মধ্যেই অপেক্ষাকৃত পরাক্রান্ত বৈদেশিক জাতির আক্রমণের ফলে তাহারা সাময়িকভাবে স্বাধীনতা হারাইল । ডেনজাতি, নৰ্ম্মানজাতি প্রভৃতি দলে দলে ইংলণ্ডে আসিয়া জোর করিয়া নিজেদের সাহিত্য, সভ্যতা ইত্যাদি চালাইতে লাগিল । বিশেষতঃ নর্মান প্রভুত্বের সময় দরবারে, বিচারালয়ে, যুদ্ধক্ষেত্রে, রাজনীতিতে এমন কি গৃহস্থালীর ব্যাপারে সর্বত্র নৰ্ম্মান ও ফরাসী ভাষার প্রভাব দোর্দণ্ডভাবে চলিতে লাগিল । দেশের সর্বত্র নৰ্ম্মান-সভ্যতাই হইল সভ্যতার মানদণ্ড । কিন্তু স্যাক্সন সভ্যতা ও সাহিত্য নিকৃষ্ট ছিল না বলিয়৷ শেষ পর্য্যস্ত এই নৰ্ম্মান সভ্যতা বিজিত জাতির মধ্যে ডুবিয়া গেল । কতকগুলি শল, বাক্যবিন্যাস প্রভৃতি যাহা নৰ্ম্মান-যুগের চিহ্নস্বরূপ ইংরেজী সাহিত্যের মধ্যে আজও বিদ্যমান আছে, তাহা এরূপভাবে ইংরেজীর মধ্যে মিশিয়া গিয়াছে যে ভাষাবিদ পণ্ডিত ব্যতীত আর কাহারও ধরিবার উপায় নাই। মধ্যযুগে গ্রীক ও ল্যাটিন সাহিত্যের অনেক-কিছুই ইংরেজী সাহিত্যে প্রবেশ করিয়াছে কিন্তু তৎসত্ত্বেও ইংরেজী সাহিত্য তাহার নিজস্ব সত্তা হারায় নাই, বরং উৎকৃষ্ট সাহিত্যের প্রবলতম প্রভাব অতিক্রম করিয়াও ইংরেজী সাহিত্য নিজস্ব ক্ষমতার গুণে তাহার প্রাচীন কাঠামোর উপর জীবন্ত প্রাণ ও আকার লইয়া দাড়াইয়া আছে। তাই সকলেই একবাক্যে **tą «finitsa, “English language is essentially and fundamentally Anglo-Saxon”—réna o ভাষার মূল ও সার স্যাক্সন ভাষা। উহার এই উন্নতির যুগেও উহাতে মূলতঃ প্রাচীন যুগের ছাপই রহিয়াছে। ইহার কারণ এই—উহার নিজস্ব গুণ থাকাতে উহাকে কেহই জয় করিতে-পারে নাই। জয় করিতে আসিয়াছিল অনেকেই, কিন্তু উহায়ই যুকে ধ্বংসাবশেষ রাখিয়া পরাজিত হইয়া চলিয়া

  • সাহিত্য-বিজয় কাৰ্য”

ÝᏉ☾ গিয়াছে। ভাষার নিজস্ব গুণ না থাকিলে এরূপ সম্ভব হয় না। আমরা নবাব সাহেবকে বলি, এইরূপ ভাষা ও সাহিত্য স্বষ্টি করুন, বাংলা ভাষা আপনি বিজিত হইবে, শুধু দপ-দণ্ডে বিজিত হইবে না। সময় সময় প্রতিভাশালী লেখকের ছাপ সাহিত্যের উপর এমনভাবে পড়ে, পরবর্তী যুগের সাহিত্য তাহার দ্বারা অনেকটা প্রভাবান্বিত হইয়া থাকে। পৃথিবীতে সেই শ্রেণীর লেখকের সংখ্যা অতি অল্প। কিন্তু অল্প হইলেও তাঁহাদের অনন্তসাধারণ প্রতিভার বলে তাহারা নিজেরাই যুগের হাওয়া বদলাইয়াছেন। হোমার, বাল্মীকি, কালিদাস, ভাজিল, দান্তে, শেক্সপীয়র, রুমি, হাফেজ এই শ্রেণীর লোক । অমর লেখক শেক্সপীয়ারের পাঠশালার লেখাপড়া বেশী ছিল না। তাহার যুগে কত কত পণ্ডিত লোক বিদ্যমান ছিলেন এবং তাহারাও কতশত পুস্তক রচনা করিয়াছিলেন। কিন্তু অনাগত যুগের সাহিত্যে র্তাহারা অধিক প্রভাব বিস্তার করিতে পারেন নাই, আর সেই স্থলে অল্পশিক্ষিত শেক্সপীয়র নিজের অম্ভনিহিত প্রতিভার প্রভাবে ইংরেজী সাহিত্য ও ভাষার অপূৰ্ব্ব প্রবৃদ্ধি সাধন করিয়া গিয়াছেন। শেক্সপীয়রের ঋণ ভুলিতে না পারিয়া এক জন কৃতবিষ্ঠ পণ্ডিত গৰ্ব্বভরে বলিয়াছেন, “আমরা বিশাল ভারতসাম্রাজ্য পরিত্যাগ করিতে প্রস্তুত আছি, কিন্তু তার বিনিময়ে শেক্সপীয়রকে পরিত্যাগ করিতে পারিব না !” ঠিক এইভাবে দাস্তেও স্বদেশের সাহিত্যকে অমর করিয়া গিয়াছেন । এ দেশে বঙ্কিমচন্দ্র, দ্বিজেন্দ্রলাল, বিদ্যাসাগর, মাইকেল মধুসূদন, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র প্রভৃতি লেখকগণ বাংলা ভাষাকে ষে ভাবে সৌষ্ঠবশালী করিয়াছেন, তাহাদের ঋণ বাঙালী কোন দিন পরিশোধ করিতে পারিবে না । বাংলা ভাষাকে জয় করিবার জন্য যে পন্থাই অবলম্বন করা হউক না কেন, ইহাদের প্রভাব কোনও দিন নষ্ট হুইবে না। যদি কোন দিন হয় তবে বুঝিব সেদিন বাংলা সাহিত্যের সমাধি হইয়াছে। নিজের কোনও প্রতিভা না থাকিলে, কেবল জয় করিবার বাসনা লইয়া সাহিত্য রচনা করিলে তাহ সাহিত্য হয় না। তাহা হয় বটতলার পুথি। তাহা না পারে জাতিকে বঁাচাইতে, না পারে নিজে বাচিয়া থাকিতে। সাহিত্য-জগতে এমন অনেক সুইফোড় ব্যক্তির আবির্ভাব হইয়াছিল