পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

कांस्छब्र নিৰ্ম্মল আকাশের নীলিম, শাস্ত মেঘন্তুপের শুভ্রতা, ঘনচ্ছায়াপূর্ণ তরুশ্রেণী, কত বিচিত্র বর্ণের প্রতিবিম্ব। বৃক্ষে তৃণে লতাজালে সবুজের উন্মত্ত উচ্ছ্বাসে দিগ্বন্ধুদের খামল অঞ্চল লুণ্ঠত। দূরে স্বর্ণশীর্ষ ধান্তক্ষেত্রের হরিতাম পট আলোকে ঝলমল । চারিদিক মায়াময় নিঃশব্দ । উমা মুগ্ধ হইয়া শরতের শোভা দেখিতেছিল। সে চমকিয়া চাহিল, অরুণ নাই। তাহার ভয় হইল, বুক দুলিয়া উঠিল। সে দাড়াইয়া চেচাইল—অরুণ, কোথায়—কোথা তুমি ? উমার কাতর কণ্ঠস্বরে অরুণ ভৗতভাবে ছুটিয়া আসিল— কি, কি হয়েছে ? উমা উচ্ছসিত চুইয়া হাসিয়া উঠিল—কিছু না । শোন, কি সুন্দর প্রতিধ্বনি হ’ল, ওই ভাঙা বাড়ি থেকে প্রতিধ্বনি আসছে—শোন— উমা এবার দীপ্তকণ্ঠে চেচাইল—অরুণ। ভাঙা বাড়ি হইতে প্রতিধ্বনি উত্তর করিল-—অ—রু—ণ ! উমার প্রদীপ্ত আননের দিকে অরুণ মুগ্ধনেত্ৰে চাহিল। এই মধ্যাহ্ন-আলোকপ্লাবনে জলে স্থলে আকাশে যে মায়া পরিব্যাপ্ত তাহাই বুঝি উমার মধ্যে মূৰ্ত্তিমতী হইয়া উঠিতে চায়। —বা, আবার কোথায় যাচ্ছ ? —গাড়ীর দরজাটা বদ্ধ করে আসি । —ম, ন, ব’স । ডালমুটটা ওখানে রেথ না, এক্ষুনি পিপড়ে হবে। —কেকৃগুলো ধর । —এইখানে বসি এস, বেশ জলের কাছে। পুকুরটাতে নিশ্চয় অনেক মাছ আছে, কেক্‌ দিলেই এক্ষুনি আসবে দেখ না । ভাঙাঘাটের শেওলা-ধরা সিড়ির ছোট ইটগুলির উপর দুই জনে পাশাপাশি বসিল । —আচ্ছা, মাকে কি বলে এলে ? —বলে এসেছি, আমরা একটু মার্কেটে যাচ্ছি। —বেশ মার্কেটিং করছ, নয়! 爱 —ভয় নেই, ব’লে এসেছি ; আমাদের ফিরতে দেরি হতে পারে, বইয়ের দোকানে যেতে হবে, একটা বায়স্কোপও দেখে আসতে পারি। एक्वीक्षञ्रांञ्जन्म \b=s —তাহলে নিশ্চিন্ত হয়ে বসা যাক । কই, কোন মাছ আসছে না ত । —জলের অত কাছে ষেও না, সিড়ি বড় পেছল— —চুপ, শোন, কি স্বন্দর ডাক, কি পার্থী বল ত ? দক্ষিণের আম্র খর্জুরবন হইতে একটি পার্থীর আকুল কণ্ঠস্বরে স্তন্ধ বনভূমি সচকিত হইয়া উঠিল । উড়িতে উড়িতে একটি পার্থী ধানক্ষেতের দিকে চলিয়া গেল। আবার চারিদিক নিস্তব্ধ । —পা গেছল পিছলে, আর একটু হ'লে পড়তে জলে, উঠে এস লক্ষ্মীটি । "ওরে সাবধানী পথিক বারেক পথ ভুলে মর ফিরে—* উমা কলহাস্তে গান গাহিয়া উঠিল। চঞ্চলপদে সিড়ি দিয়া উঠিয়া আসিয়া অশ্বখবৃক্ষের গুড়ি ঠেস দিয়া বসিল । ভাঙা ঘাটের উপর বসিয়া অরুণ মুগ্ধভাবে এ অপূৰ্ব্ব অজানা উমার দিকে চাহিয়া রহিল ! ঘটনাটি এইরূপ ; ভাঙা মোটর-গাড়ীটি সারিয়া আসাতে অরুণ সেইটি লইয়া অজয়দের বাড়ি সকালে হাজির হইয়াছিল। গাড়ী দেখিয়া উমা বলিয়াছিল, মা মার্কেটে যাবে, অনেক জিনিষ কেনবার রয়েছে। স্বর্ণময়ী বলিয়াছিলেন, তুই যা অরুণকে নিয়ে, আমার হাতে অনেক কাজ ; অরুণ তুমি আর বাড়ি ফিরো না, এইখানে খেয়ে যাও। দুই জনে তাড়াতাড়ি খাইয়া মোটর-গাড়ীতে বাহির হইয়া পড়িয়াছিল। প্রথমে মিউনিসিপ্যাল মার্কেটে গেল, সামান্ত খাবার জিনিষ ছাড়া বিশেষ কিছুই কিনিল না। মার্কেট হইতে বাহির হইয়া অরুণ বলিয়াছিল, চল কোথাও ঘুরে আসা যাক। উমা বলিয়াছিল, আউটিং করবার মত দিন বটে, কোথা যাবে ? অরুণ হাসিয়া বলিয়াছিল, নিরুদেশযাত্ৰা ! তাঁহাদের বেশী দূর যাইবার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু অরুণ যখন ষ্টিয়ারিং হুইল ধরিয়া বসিল, পাশ্ববৰ্ত্তিনী উমার হাস্তের ছন্দে চক্ষের চাহনিতে আতপ্ত স্পর্শে তাহার দেহ-মনে গতির মাদকতা লাগিয়া গেল। বালীগঞ্জ পার হইয় গড়িয়াহাট রোড ধরিয়া সে মোটরকার ছটাইয়া দিল মাইলের পর মাইল। উমা বলিয়াছিল, আজ বড় স্বন্দর মোটর চালাচ্ছ, কিন্তু কোথায় চলেছ ?