পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՆՅ প্রবাসী SN98R পৌরাণিক চিত্ৰ-বস্তু অস্তরের সহিত, নিষ্ঠার সহিত বরণ করেন নি। তার পর এক যুগ কেটে গেছে। বাংলা দেশের, তথা সারা ভারতের, চিত্ৰ-বিদ্যার ক্ষেত্রে, এক জন নূতন পৌরাণিক চিত্রকরের আগমন প্রতীক্ষা করে আমর বসে আছি। এমন সময়ে হালদার-মহাশয়ের ছাত্র রামেশ্বর উপস্থিত হয়েছেন আমাদের উপবাসী পৌরাণিক মনের পাদ্য যোগাতে। ইংরেজী আধুনিক চিত্র-শিল্পীদের মধ্যে রাসেল ফ্লিন্ট, হারি মলে প্রমুখ জন-কয়েক বড় শিল্পী পৌরাণিক চিত্র লিখে যশ অর্জন করেছেন । তথাপি, তার সকলেষ্ট পৌরাণিকতার সরল অরুত্রিম ও অলৌকিক জগতে ফিরে যেতে পেরেছেন এ কথা মনে করা অত্যন্ত ভুল হবে। অনেকের পক্ষেই উীনস্, ডায়েনা, নিম্ফ, ও ফনের চিত্র-রচনা করা, নগ্ন মূৰ্ত্তির সেবার একটা সুযোগ ও অজুহাত মাত্র। হিন্দু সংস্কৃতির পৌরাণিক জগতে অবশ্ব অঙ্গরী, কিন্নুরী, প্রভৃতি বসনহীন নায়িকাদের অসদ্ভাব নাই। কিন্তু অধিকাংশ পৌরাণিক চিত্রে অদ্ভূত ও ভয়ানক রসের দৌরাত্ম্যই বেশী। কেবল নয় “মডেলের" সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে হিন্দুর পৌরাণিক জগতে প্রবেশ লাভ করা যায় না। এই পথের পাথেয় অলৌকিক ধ্যান-ধারণা, গভীর ভাবুকতা, ও উচ্চ শ্রেণীর কল্পনা। নন্দলালের পৌরাণিক চিত্রে আমরা এই সমস্ত গুণেরই পরিচয় পেয়েছি । নন্দলালের পর পৌরাণিক চিত্রে নূতন ভাব ও রসের প্ৰবৰ্ত্তন করা বোধ হয় অসাধ্যসাধন । তথাপি, আমার মনে হয় রামেশ্বরের প্রচেষ্টার মধ্যে অনেকটা আশার বীজ নিহিত আছে। তাহার অস্তরের মধ্যে পৌরাণিক বস্তু সাধনার উপযোগী একটা স্বাভাবিক প্রেরণা আছে কিনা তা অনুসন্ধান করবার স্বযোগ আমার ঘটে নি। কিন্তু যেপরিবারে এই যুবক-শিল্পী জন্ম নিয়েছেন সেই পরিবারে আতিথ্য গ্রহণ করবার সৌভাগ্য আমার ঘটেছিল। এই পরিবারের অনেকেই উচ্চশিক্ষিত এবং একাধিক বংশধর শিক্ষ-ব্যবসায়ী। আধুনিক উচ্চ-শিক্ষা ইহাদের বংশপরাম্পরাগত প্রাচীন হিন্দু-শিক্ষার সংস্কৃতিকে অভিভূত করতে পারে নি এই ধারণ আমার মনে বেশ স্পষ্ট জেগে উঠেছিল। ' ..so এই পরিবারের প্রায় সকলের চরিত্রে, কেবল আচার-গত বাহ শুচিত নহে, বেশ একটু আভ্যন্তরিক গুচিত, নিষ্ঠ ও সংযমের পরিচয় পেয়ে আমি আনন্দিত হয়েছিলুম। যেপরিবেশের মধ্যে মানুষ হলে শিল্পী পৌরাণিক চিত্রবস্তুর সম্মান রাখবার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেন, রামেশ্বরের বাল্য-জীবন সেই পরিবেশের মধ্যে অতিবাহিত হয়েছে। 'প্রবাসীর ভাদ্র সংখ্যায় প্রকাশিত “কন্ধি অবতারে”র পরিকল্পনায় নবীনশিল্পী এমন একটু শক্তির পরিচয় দিয়েছেন যাতে ক'রে মনে হয়, যে তার নিজস্ব সাধন তাকে জয়যাত্রার পথে চালিত করেছে। র্তার যম রাজার চিত্রও এই অনুমান সমর্থন করে। অনেক সময়ে মনে হয় সিদ্ধির প্রয়াস সিদ্ধিলাভ হ'তে বড়। সাধনার অবসানে, সিদ্ধি শক্তির বিরাম ও বিশ্রামে পৰ্য্যবসিত হয় ;–সাধনার প্রয়াস শক্তি ও শক্তিমানের জীবন্ত ও সক্রিয় প্রতিমূৰ্ত্তি।