পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপন্ন ঐবিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় এম-এসসি পাস করিলাম ; সঙ্গে সঙ্গে একটি চাকরিও জুটিয়া গেল। বয়স তখন এত অল্প যে প্রফেসর সেন তাহার নিজস্ব প্রথায় অভিনন্দিত করিয়া বলিলেন, “শৈলেন, তুমি, যাকে বলে এ চড়ে পেকে গেলে ।” চাকরি—বেহারে কোন একটি কলেজে প্রফেসারী। সত্বর যোগদান করিবার তাগিদও ছিল, তাহার উপর কাকা— ‘শুভস্ত শীঘ্রমূ, শুভস্ত শীঘ্ৰমু করিয়া বাড়িটাতে এমন একটা উৎকট তাড়ানে ভাব দাড় করাইলেন এবং আমি বালকসুলভ অবুঝপনার বশে চাকরিটা হরাইবই জানিয়া শেষ-পৰ্যন্ত এমন নিরাশ হইয়া পড়িলেন যে বাহালি-পত্র পাওয়ার পর দিনই তাড়াতাড়ি যাত্রা করিতে হইল। তাহাতে খুঁটিনাটি অনেক প্রয়োজনীয় দ্রব্যই কেনা হইয়া উঠিল না। কৰ্ম্মস্থানে পৌছিয়া বৈকালের দিকে বাজারে বাহির হইয়া গেলাম এবং একটু ঘুরিয়-ফিরিয়া একটি বড় দেখিয়৷ মণিহারীর দোকানে প্রবেশ করিলাম। দোকানটিতে বেশ ভিড়, বেশীর ভাগ লোকই দাড়াইয়া ; কাউণ্টারের সামনে সারি সারি কতকগুলি চেয়ার পাতা, সবগুলিই অধিকৃত । আমার একটু বসিতে পারিলেই ভাল হইত, কেননা অনেকগুলি জিনিষ লইতে হইবে, বিলম্ব হইবার কথা । এদিক-ওদিক চাহিতেছি, হঠাৎ নজর পড়িল একটি কোণপানা জায়গায় একটি ছোকরা আমার দিকে একদৃষ্টে চাহিয়া আছে। চোখাচোখি হইতেই তাহার চেয়ারটি ছাড়িয়া একটু সরিয়া দাড়াইয়া বলিল, “আপনি এইখানে অস্বিন না ; দাড়িয়ে কেন ?” হিন্দীতে কথা বলিল, তাহা না হইলে বেহারী বলিয়া চিনিবার উপায় ছিল না। মাথায় আধা-বাবরি-গোছের ব্যাক-ত্রাশ চুল, ক্টোচায় কাবলী-ফের্ভা দেওয়া কাপড় পর, গায়ে বোতামের কালো ফিতা বের করা একখানি পাশ-বোতাম পাঞ্জাবী—টায়টোয়ে কোমরের নীচে পৰ্য্যস্ত নামিয়াছে, পায়ে নাগরী—এদেশী নয়, যাহা কলিকাতায় গিয়া, বাংলার স্বকুমারত্বের ছাপ লইয়া আবার এখানে ফিরিয়া আসিয়াছে। একটু হাসিয়া ইংরেজীতে বলিলাম—“না, থাক, ধন্যবাদ। আমি বেশ আছি।” এক ধরণের খাতির আছে যাহা অত্যাচারের নামান্তর মাত্র, দেখিলাম এও তাই। “তাও কি হয় ?” বলিয়া ছোকরা হাসিতে হাসিতে দু-পা আগাইয়া আসিল এবং আমার হাতটা ধরিয়া চেয়ারে বসাইয়া দিয়া সামনের বিক্রেতাকে বলিল, “নাও, আমার এখন থাকৃ, আগে একে দাও ; সেই থেকে দাড়িয়ে রয়েছেন ভদ্রলোক ।” সন্দেহ হইল দালাল নাকি ? তাই বা কেমন করিয়া হয় ? দেখিলাম কাউণ্টারের উপর তাহার নিজেরই বাছাই করার জন্য একরাশ জিনিষ রহিয়াছে। ফুলেল তৈল, সাবান, আরসি, চিরুণী, কয়েক রকম স্বগন্ধি, লেটারপ্যাড, আরও নানা রকম জিনিষ যাহা সৌখিনীও আবার প্রয়োজনীয়ও, অথবা সৌখীন লোকের প্রয়োজনীয় বলিলে আরও ঠিক হয়। ইতিমধ্যে বিক্রেতা কাউণ্টারের ওধার থেকে একখানা চেয়ার তুলিয়া তাহার জন্ত এদিকে নামাইয় দিল । বোঝা গেল শাসাল খদের বলিয়া বেশ খাতির আছে । আমি বিক্রেতাকে বলিলাম, “আগে আমায় একটা ষ্টোভ দেখাও দেখি ; প্রাইমাস হানড্রেড, আছে ?” দোকানী বলিল, “আছে বাৰু, তবে একটু দেরি হবে, সামান্ত একটু। আজই বাঙ্গ এসে পৌছেছে, প্যাকিং খুলে এক্ষুনি নিয়ে আসছি।”—বলিয়া সে ফিরিল। ছোকরা চেয়ারে বলিয়া পড়িয়া বলিল, “খুলে, দাম খতিয়ে নিয়ে এস, নইলে একটা যা-তা দাম বলে একে ঠকাবে ; কিছু তাড়াতাড়ি নেই এর ” তাহার পর জামায় প্রশ্ন করিল, “আপনি কি বেশী ব্যস্ত ?” বলিলাম, “না, তেমন আর কি ? তবে তত ক্ষণ বরং