পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৭৭২ প্রবাসী ১N©3২ নরওয়ের অন্তর্গত ট্রমূলো নগরে। অন্ত দল ক্যানাডার অন্তঃপাতী মেরিয়ান হ্রদের নিকট রে ( Rae ) নামে নির্জন এক দুর্গে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এই স্থান সারা বছরই তুষারে ঢাকা থাকে। সেই শীতের দেশে, খাওয়া থাকার কষ্ট সহ ক’রে সারাদিন সারারাত্র সমানভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ ক'রে যাওয়া যে কত কষ্টের তা সবার বোঝবার নয় । এদের কাজ ছিল এখানকার বাতাসের গতি ও উত্তাপ নির্ণয় করা এবং ঘণ্টায় ঘন্টায় মেঘের উচ্চতা নির্ণয় করা। তা ছাড়া উদীচ্যালোক সম্বন্ধে যতটুকু খবর পাওয়া যায় তাও তারা সংগ্রহ করবেন। ট্রসো-যাত্রীদের গবেষণার বিষয় বিদ্যুৎমণ্ডল। বিশেষ ক'রে তারা দেখতে চেয়েছিলেন ই-স্তরের সঙ্গে উদীচ্যালোকের কোন সম্বন্ধ আছে কিনা । আগেই বলা হয়েছে, সুৰ্য্যের অতিবেগুনী রশ্মি বিদ্যুৎমগুলের উৎপত্তির প্রধান কারণ। কিন্তু এই স্থানে দীর্ঘ শীতকাল ব্যাপী অতিবেগুনী রশ্মি থাকে না বলে এই স্থানের উচ্চাকাশের বায়ু কেমন ক’রে বিদ্যুৎ পরিচালক হয়, এখানকার বায়ুরশ্মির বিদ্যুতিন সংখ্যা কত, স্তর দুটির উচ্চতাই বা কত—এই সব লক্ষ্য ছিল এদের। নরওয়েবাসীরা যাবেন উভয়মেরুতে। সেই ভীষণ তুষারে, পায়ে চলা দুষ্কর। তাই তারা যাবেন শ্লেজে ক’রে । এদের লক্ষ্য ছিল আবহাওয়া সম্বন্ধে গবেষণা করা। অন্য দেশের লোকেরা নিজেদের দেশে বসেই পরীক্ষা করবেন এইরূপ স্থির ছিল । এই সব দেশ থেকে সারা বছর ব্যাপীর পরীক্ষার ফল লওনের উভয়মেরু-সংক্রান্ত বাধিক *f* ( Polnr Year-Committée-χι ) si stoifsa কাছে লিখে জানান হয়েছে। এই পরীক্ষার বিস্তৃত বিবরণ এখনও জানা যায় নি। তবে কলিকাতার বিজ্ঞান কলেজের অধ্যাপক ডক্টর শিশিরকুমার মিত্র মহাশয়ের অধীনে ডক্টর হৃষীকেশ রক্ষিত ই ও এফ, স্তরের উচ্চতা নির্ণয় করেন। তাতে জানা যায় কলিকাতায় ই-স্তরের উচ্চতা পৃথিবীপৃষ্ঠ হতে ৯০ কিলোমিটার এবং এফ স্তরের উচ্চতা ২৫০ কিলোমিটার। এক স্থান থেকে অন্তস্থানে বেতারের সাহায্যে খবর পাঠাতে হ’লে প্রেরক যন্ত্র থেকে বেতারের ঢেউ আকাশে ছাড়া হয়। সেই ঢেউ কেবল মাত্র ছুটি উপায়ে স্থানান্তরে যেতে পারে—স্কৃ-পৃষ্ঠসংলগ্ন হয়ে কিংবা উচ্চাকাশের স্তরসমূহ থেকে প্রতিহত হয়ে । ষে সমস্ত তরঙ্গ ভূপৃষ্ঠসংলগ্ন হয়ে যায় তাদের নাম ভূ-তরঙ্গ আর আকাশের উচ্চস্তর থেকে প্রতিহত হয়ে যারা আসে, তাদের নাম আকাশ-তরঙ্গ। দুটি স্থানের ব্যবধান খুব বেশী হ’লে আকাশ তরঙ্গ দিয়ে আমরা খবর পেয়ে থাকি—ভূ-তরঙ্গ কোন কাজেই লাগে না তখন। কারণ ঘর-বাড়ি, পাহাড়-পৰ্ব্বত, গাছ-পালা, নদী-নালা, বৈদ্যুতিক তার ইত্যাদির দ্বারা এই তরঙ্গ শোষিত হয় এবং ক্রমেই ক্ষীণ হতে ক্ষীণতর হয়ে শেষে মিলিয়ে যায়। তাই বেশী দূর আর পৌছতে পারে না। যেখান থেকে তরঙ্গ প্রেরিত হয় এবং আকাশ-তরঙ্গ যেখানে পৌছয়—এই দুই স্থানের ব্যবধানকে উল্লম্ফন (skip distance) বলে। উপরের স্তর থেকে প্রতিহত হয়ে পৃথিবীপৃষ্ঠে ফিরে আসতে বেতারতরজের কত সময় লাগে তা যন্ত্রের সাহায্যে মেপে তার থেকে বিদ্যুৎ-মণ্ডলের বিভিন্ন অংশের উচ্চতা হিসাব ক'রে বার করা হয়। আমাদের দেশের পুরনো পুথি খুঁজলে দেখতে পাই যে উচ্চাকাশের এই স্তরের সম্বন্ধে আগেকার লোকেরাও জানতেন। একাদশ শতাব্দীতে আরবরা, পৃথিবীতে কতক্ষণ গোধূলি থাকে তার থেকে গণনা করে উপরকার আকাশের উচ্চতা নির্ণয় করেছেন সাড়ে সাতায় মাইল । অথচ ই-স্তরের উচ্চতা প্রায় ৯০ কিঃ মিঃ অর্থাৎ ৫৬ মাইল। এই দুয়ের মধ্যে কি আশ্চৰ্য্য মিল । তা ছাড়া ভাস্করাচাৰ্য্য বলে গিয়েছেন, ভূমেবহির্গাদশ যোজনানি ভূবায়ুরত্রাযুদ্ধ বিদ্যুদাস্তম্। অর্থাৎ পৃথিবীর চতুর্দিকে আকাশ আছে যার উচ্চতা বারো যোজন । এইখানে মেঘ, বিদ্যুৎ এবং অস্কান্ত নৈসর্গিক ঘটনা সংঘটিত হয়। (১২ যোজন=৯৬ মাইল)। আমরা অাগেই দেখেছি এই ৯৬ মাইলের মধ্যে তাপমণ্ডল, তাপস্থির হিমমণ্ডল ও ই-স্তর পড়ে। সুতরাং এদিক থেকে তাদের সঙ্গে আধুনিক মতের জনৈক্য ঘটে নি। উচ্চাকাশের স্তর উচ্চতা নির্ণয় ছাড়া, প্রতি ঘন-সেণ্টিমিটারে কত পরিমাণ বিদ্যুতিন আছে তা-ও জানা গিয়েছে। ই-স্তরের প্রতি ঘন-সেন্টিমিটারে ১ লক্ষ ও এক স্তরের প্রতি ঘন-সেন্টিমিটারে দশ লক্ষ বিছাতিন আছে। বৎসরের সকল সময়েই ষে এই