পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চৈত্র তার ভিতর দিয়ে দেখতে হত। চেষ্টা ক'রে দেখতে দেখতে ট্যার চোখ সোজা হয়ে যাবার সম্ভাবনা—এই ছিল তার মত । আধুনিক শল্যবিদ্যার (Surgery ) জন্মদাতা ফ্রান্সের বিখ্যাত শল্য-চিকিৎসক আমব্রোয়াজ পারে ( Ambroise Pare—1517-90) লিখিত চিকিৎসা-গ্রন্থে ট্যার চোখের চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। সে ব্যবস্থা কতকটা শেষোক্ত গ্ৰীক চিকিৎসকের ব্যবস্থারই মত। ট্যারা চোখ হবার কারণ সম্বন্ধে ইনি বলতেন যে শিশু যখন দোলায় গুয়ে দোল খায় তখন যদি এক পাশ থেকে আলো এসে চোখে পড়ে, শিশু স্বভাবতঃ সেই দিকেই চেয়ে থাকে। সেই আলোর দিকে চোখ ফিরিয়ে থেকে থেকে চোখট ট্যারা হয়ে যায়। এ ছাড়া ট্যারা-চোখওয়ালা কেউ যদি শিশুর কাছে থাকে, তাকে নকল করতে গিয়ে শিশুও ট্যারা হয়ে যায়। কিছুদিন আগেও ট্যার হবার এই কারণ দুটি ট্যারা-চক্ষুতত্ত্ববিদগণের কাছে অসম্ভব বলেই মনে হ’ত, কিন্তু খুব সম্প্রতি এক জন বিশেষজ্ঞ লিখেছেন, যদি শিশু ট্যারা-প্রবণ হয় তা হ’লে এই সকল সামান্য কারণ থেকেও চোখ ট্যারা হয়ে যায়। স্কুল-ঘরের জানালা দিয়ে আলো যদি এক পাশ থেকে আসে তা হ'লেও ট্যারা-প্রবণ ছেলেরা ট্যারা হয়ে যেতে পারে। ইউরোপে পুরাকালে শবব্যবচ্ছেদের স্ববিধা ছিল না। এটা একটা মহাপাপ বলেই গণ্য হ’ত—স্বতরাং চোখ কি রকম ক'রে কাজ করে সেটা জানবার ভাল উপায়ও ছিল না, তাই কতকগুলো ভূল ধারণার উপর নির্ভর করে তখনকার দিনের চিকিৎসকেরা রোগের কারণ নির্ণয় করতেন । তার পর উনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে বিখ্যাত ফরাসী শরীর vstafgrifforraq csr (Jaques Rene Tenon ) শবব্যবচ্ছেদ করে অক্ষিগোলক (globe) আর অক্ষিকোটরের (orbit) পুঙ্খানুপুঙ্খ স্বল্প বর্ণনা করে চক্ষু-চিকিৎসা-শাস্ত্রে নবযুগ আনেন। কিন্তু ট্যারা চোখ ব্যবচ্ছেদ ক’রে রোগের কোন নিদর্শন পাওয়া গেল না । কাজে কাজেই পরবর্তী প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে এর চিকিৎসা-প্রণালীও বিশেষ এগুলো না । মধ্যে কেবল এক জন চিকিৎসক ভাল চোখটাকে দিনের মধ্যে কয়েক ঘণ্টা একটা স্বশ্ন কালো রেশমের ঠলি দিয়ে ঢেকে রাখতে উপদেশ দিতেন। এতে ভাল চোখটার দৃষ্টি কমে গিয়ে ট্যার চোখ به سیاه ট্যারা চোখের সঙ্গে সমান হত। ব্যাধি খুব পুরনো না হ'লে এই ব্যবস্থায় সারবার সম্ভাবনা—এই ছিল তার মত । এই সময়ে জন টেলার বলে এক জন চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করে ট্যারা-চোখ সারাবার এক উপায় উদ্ভাবন করেন। একালে চিকিৎসকেরা বেশীর ভাগই বুজরুক হ’ত। ম্যাকবেথের ডাইনীদের ‘কুহক-কটাহে যেসব জিনিষের ফর্দ পাওয়া যায় সেকালের চিকিৎসকদের পরীক্ষাগারে সেই ধরণের অনেক জিনিষেরই দর্শন পাওয়া যেত। টেলর সময়ের প্রভাব থেকে মুক্ত ছিলেন না। এই জন্যে অনেকে অস্ত্র করে ট্যার চোখ সোজা করাটা টেলারের বুজরুকি বলে সন্দেহ করেন। কিন্তু টেলার সত্যই বিদ্বান ছিলেন। এটা তার বুজরুকি না-ও হতে পারে। ১৮৫৭ খ্ৰীষ্টাব্দে জাৰ্ম্মেনীতে, চক্ষু-চিকিৎসকদের উজ্জল জ্যোতিষ্ক ফন্‌ গ্ৰায়াফে (Won Graefe ) চোখ সম্বন্ধে অনেক নূতন তথ্য আবিষ্কার করেন। তিনি দেখালেন, যে ' ছ-জোড়া ফিতের মত মাংসপেশীর সাহাধ্যে আমাদের চোখ ঘোরে ফেরে তার কোনও একটা যদি স্বাভাবিক মাপের .চেয়ে ছোট কিংবা বড় হয় তা হলে চোখ ট্যারা হয়ে যায়। অস্ত্রোপচার ক'রে বড় পেশীটাকে ছোট ক’রে দিয়ে ট্যারা চোখ সোজা করা যায়। তখনকার দিনের অনেকেই গ্ৰায়াফের মত মানলেন। টারা চোখের উপর অস্ত্র করে সারাবার চেষ্টা হ’তে লাগল। কিন্তু ক্রমে দেখা গেল, অনেক চোখই অস্ত্রোপচার করে আশাতুরূপ ফল দিলে না । চোখ যেদিকে ট্যারা ছিল অস্ত্র করবার কিছুদিন পরে তার উন্টে দিকে ট্যারা হয়ে যেতে লাগল । ঠিক এই সময়ে হল্যাণ্ডে বিখ্যাত ওলন্দাজ চিকিৎসক ডনডাস (Donders, 1864) দেখালেন যে, চোখের এমন একটা দোষ থাকলে ট্যারা হয়, যে-দোষের প্রতিকার স্বনির্বাচিত চশমার সাহায্যে করা যায় আর তাতে ট্যার চোখ সোজাও হয় । এতে চোখের উপর বেপরোয় ভাবে অস্ত্র করা কমূল । ডনডাসের মত অনুযায়ী চশমা ব্যবহারে এক শ্রেণীর ট্যার চোখ সোজা হয় বটে, কিন্তু ট্যার হবার আসল কারণটা দূর হয় না। চোখ ট্যারা হবার আসল কারণটা কি তা দেখালেন বর্তমানযুগে ক্লণ্ড, ওয়ার্থ।