পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ooسty প্রবাসী ১N©3ই চিন্ময় হাসিয়া বলিল, এর ভেতর তুমি কে ? সরসী সে কথার উত্তর না দিয়া, হাত-ব্যাগ হইতে লেটার অফ এ্যাপয়েন্টমেন্ট বাহির করিয়া চিন্ময়ের হাতে णि । —খ্যাঙ্কস্ । —পৌছে চিঠি দেবেন ত ? —ম্যানেজার দেবে, না-হয় নায়েব ত দেবেই ৷ সরসী একটুক্ষণ চুপ করিয়া দাড়াইয়া থাকিয়া বাহির হইয়া গিয়া মোটরে উঠিল। মেসের অনেকে জিজ্ঞাসা করিল, কে গো ? চিন্ময় জুর্ত্যে রহস্তাচ্ছন্ন হাসি হাসিয়া, যে যাহা ভাবিতে চায়, তাহারই স্থযোগ করিয়া দিল । নায়েবের চিঠিখানি দরকারী ও পড়িবার মত। সবটায় আমাদের দরকার নাই ; কতকটা এই – পৌষ কিস্তিতে আমাদের আদায় হয় চার হাজার টাকার উপর। নতুন ম্যানেজারের দয়া-দাক্ষিণ্যের চোটে এ বছর চার-শত টাকাও আদায় হয় নাই। যে কাছুনি গায়, সেই রেহাই পায়। এমন করিলে জমিদারী রাখা যায় না। নতুন ম্যানেজারকে কৰ্ম্মচু্যত করিয়া মহলশাসনের ব্যবস্থা না করিলে চলিবে না, বিষয়-আসয় নিলামে চড়িবে। নায়েব যে জবাব পাইল, তাহা এই :আমি শীঘ্রই মহল পরিদর্শন করিতে যাইতেছি। নায়েবের বড় আনন্দ । অনেক দিন, প্রায় ছয় মাস নিরানন্দের পর আনন্দের স্বচনা । ভর প্রাবণের শেষাশেষি কড়া রৌদ্র । ম্যানেজার গেল না, নায়েব প্রভুকে ষ্টেশনে রিসিভ করিতে গিয়া ম্যানেজারের বিরুদ্ধে দশখান করিয়া লাগাইল । প্রজার কুকুরজাতীয় জীব, জাম্বারা পাইলে মাথায় উঠতে অভ্যন্ত । ম্যানেজার মহলের সর্বনাশ করিয়াছে। পৌষ কিস্তির এখনও আট দিন সময় আছে, উহাকে আজই ডিসমিস্ করিলে, নায়েব কিস্তির পুরা টাকা আদায় করিয়া দিবার ভরসা দিল। ডিসমিস্ করিতে বিলম্ব করিলে আদায়ের সম্ভাবনা স্বদরপরাহত হইবে । - e মধ্যাঙ্ক-ভোজনের পর ম্যানেজারের তলব পড়িল । নায়েব পায়ে রবার-সোল জুতা পরিয়া ডিঙ্গি মারিতে মারিতে পাশের ঘরের আলমারীর পশ্চাতে আশ্রয় গ্রহণ করিল। ‘জমিদার’ বলিল, আপনি আমার জমিদারীর সর্বনাশ করেছেন। চার-শ টাকা আদায় হয় নি, চার হাজার টাকা রেভেনিউ। —তিন বৎসর অজন্ম, প্রজারা খেতেই পাচ্ছে না, তা টাকা দেবে কোথা থেকে ? —জমিদারের খাজনা চলে কি ক’রে ? —জমিদারের রিজার্ভ ফণ্ড থাকা উচিত। যারা রিজার্ভ রাখে না, সব নিজেদের বিলাসে খরচ করে, তাদের জমিদারী না থাকাই সঙ্গত। প্রজার রক্ত শোষণ করবার জন্তে রাজা নয়, প্রজাকুরঞ্জনের জন্ত রাজা । তোমার খাজনা আদায় হয়নি বটে, কিন্তু তোমার প্রজারা তোমাকে দয়াময়ী রাণী ব'লে আশীৰ্ব্বাদ করছে। ‘তোমার’ শব্দটা আলমারীর পার্থে লুকায়িত নায়েবের গায়ে জালা ধরাইয়া দিল। সে জমিদার হইলে এই স্পর্ধার উচিত সাজা দিত । —আপনার দ্বারা জমিদারী শাসন চলবে না। —প্রজাদের মারতে হবে ? —আমার নায়েব টাকা আদায় ক'রে দেবে। —প্রজাবিদ্রোহ হবে। খেতে না পেয়ে তারা শুকনো খড় হয়ে আছে ; অত্যাচারের ফুলিঙ্গ পড়লেই জলে উঠবে। —আমার কলিয়ারীর ম্যানেজারীর পোষ্ট খালি হয়েছে, আপনাকে সেখানে যেতে হবে । পাশের ঘরে নায়েব নৃত্য করিল। জুতার হিল রবারের, তাই নিঃশব্দ । বাহিরে অনেক লোক জমায়েত হইয়া বড় গগুগোল করিতেছিল। ম্যানেজার মুখ বাড়াইয়া জনতা দেখিয়া লইয়া বলিল, তোমার হাজার হাজার প্রজা তোমাকে দেখতে আর প্রাণ খুলে আশীৰ্ব্বাদ করতে এসেছে। সরসী দৃশ্বট দেখিয়া আসিল। বসিয়া বলিল, কিন্তু আপনার এখানে থাকা হবে না। —আমার অপরাধ ? তুমি ওদের দেখ, ওদের চেহারা, কাপড়-চোপড় দেখ, ওদের কথা শোন। তার পর—