পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Сsя শরতের মেঘ t~$8 ব্যথা পেলাম ব্রতর কথায় । বহু দিনের অব্যবহার্ধ্য, অনাদৃত সেতারে স্বর বাধতে গেলে প্রথমটা যেমন হয়, আমার কণ্ঠে ব্ৰত' নামটাও তেমনি লাগছিল। একটা কথা, স্বত্রত ছিল আমাদের সোসাইটির শরীরী প্রতিবাদ । সমাজের আচার-ব্যবহারগুলোকে সে বিশেষ সুনজরে দেখত না এবং সত্য মতামত প্রকাশ করতেও কুষ্ঠিত হত না। কিন্তু আশ্চৰ্য্য, তার এই বিমুখতা ও অপ্রিয় সত্য-ভাষণের জন্য কেউ তার ওপর রাগ করতে পারত না, বস্তুতঃ তার ওপর যেন রাগ করা যায় না। তার মধ্যে এমন একটা সবল, মধুর ব্যক্তিৰ ছিল যেটার প্রভাব এড়ান যেন শক্ত হয়ে পড়ত। সামাজিক অনুষ্ঠানে যে সে অমুপস্থিত থাকত এমন নয়। সে উপস্থিত থাকত তার তীব্র মধুর স্বাভস্থ্য নিয়ে। তার কথার হলে জাল ধরলেও তাকে ত্যাগ করতে পারতাম না, মধুর লোভটা যেন দুৰ্দ্দমনীয় হয়ে উঠত। আমরা যেখানে স্কট পরে গেছি ( অবশু সেটা যখন বাধ্যতামূলক ) সে এসে দাড়াত ধুতি-চাদল পরে। কিন্তু আশ্চৰ্য্য এই, তার ব্যবহারকে স্পৰ্দ্ধ ব’লে বিকৃত করার সাহস বা মনোবৃত্তি আমাদের কারও হ’ত না । সে আমাদের মধ্যে থাকলেও মনে হয় সে যেন ঠিক আমাদের মত নয়, এমন একটা জিনিষ তার মধ্যে আছে যেটা আমাদের নেই। সে সকলের ওপর, তাই তার সবই শোভন, স্বন্দর ! কিন্তু ব্রতর সঙ্গে আমার সম্পর্ক আজকের নয়, আমরা আবাল্য-সহচর । কেবল মধ্যে সমাজের প্রভাবে আমাদের সম্বন্ধটা যেন একটু চিড় খেয়ে গিয়েছিল। তাই আমার কথায় সে একটু বিস্ময় অনুভব করে বললে, “আজ যে এত উচ্ছ্বাস । ব্যাপার কি ?” ব্রতর কথার উত্তর দিলাম না । মনের মধ্যে কেমন ক’রে উঠল, ব্রতর হাত ধরে ব্যাকুল হয়ে বললাম, “ব্রত, বল ত ভাই, নন্দা কি আমার ডাকে সাড়া দেবে না ?” একটু চুপ করে থেকে উত্তর দিলে ব্রত, “বড় শক্ত কথা ভাই। যে স্রোতের টানে ভেসে গেছে, তাকে ফিরিয়ে আনা বড় শক্ত ।” ● বিষ্ণু বেদনায় স্তন্ধ হয়ে রইলাম। ব্ৰত তা লক্ষ্য ক’রে বললে, “কিন্তু তুই কথার পেছনে মিখ্যে ছুটে মরবি কেন প্রিয়, তাতে ন-পাবি শাভি, না-পাৰি সাজনা । তার চেয়ে চল ঘাট হোমে । - মেমসাহেবও খুনী হবেন তোমায় দেখলে, অন্ততঃ আমি যে কুঁড়েমির প্রশ্রয় দিই না সে-বিষয়ে নিশ্চিন্ত হবেন। চল—” “ন, আজ ওসব কৃত্রিমতার মধ্যে স্থাপিয়ে উঠব। সইবে না ভাই ।” হেসে স্বত্রত এক টানে আমায় তুলে বললে, “লয় কি না একবার পরখ করেই দেখ না প্রিয়। আজ আবার বহুদিন পর ভায়োলেট সেনের দেখা মিলতে পারে । বেশ ত প্রিয়, আমি কথা দিচ্ছি ভায়োলেটের মধুর সঙ্গও যদি সইতে না পার, আমি নিজেই তোমায় বাড়ি পৌছে দিয়ে যাব। সত্যি বলছি, দেরি করিস নে, উঠে পড়, কাব্যচর্চ ইচ্ছে হয় বাড়িতে বলে “মিসেস-এর সঙ্গে করিস—নিরালায়, মানাবে ভাল, সইবেও। কিন্তু এ তোমার একাস্ত পণ্ডশ্রম হচ্ছে, আমার মত অ-কবির কাছে এর মূল্য কাণাকড়িও নেই।" ব্রতর সঙ্গে কেউ কখনও পেরেছে । যেতেই হ'ল। সেখানে যেতেই একটা উগ্র, তীব্র আবহাওয়ায় মনটা নেশাথোরের মত ঝিমিয়ে পড়ল। অন্য কিছু আর মনের মধ্যে বিক্ষোভ স্থষ্টি করলে না। সমস্ত ভাবনাগুলোও যে কোথায় ডুব মারলে, তার সদ্ধানও পেলাম না । ভায়োলেটের সামনে এনে ব্রত চুপিচুপি বললে, “ইচ্ছে হয় এবার সেণ্টিমেণ্টালিজমের চর্চা কর, আপত্তি নেই।” বহুদিন পর ভায়োলেটের সঙ্গে দেখা-খুলীই হলাম। সে তার রূপ-ভারাবনত ক্ষীণ তমুকে লীলায়িত ক'রে বললে— “ssièro, of bizúso, let's go somewhere else.” আলো-ছায়া-বিজড়িত একটা নিরালা কোণে বসে তার সঙ্গে গল্প করে ফিরছি, হঠাৎ দৃষ্টি পড়ল—স্বনন্দাকে ঘিরে অনেকে জটল করছে। মিঃ সিনা স্বনন্দার পায়ের কাছে অৰ্দ্ধশান্বিতভাবে বসে কি যেন অত্যন্ত মনোযোগে চোখকান দিয়ে গুনছেন। ব্যাপারটা নতুন নয়, অস্বাভাবিক নয়, অন্যায় ত নয়ই। এই রকমই হয়ে থাকে। আমার ওপর স্বনন্দার দৃষ্টি পড়েছিল, দেখলাম ওর ঠোঁটে চাপা হাসির বিদ্যুৎ চমকে উঠল।