পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জন্মস্বত্ব ঐসীতা দেবী ( ২৩ ) প্রথম দিনটা ত কোন মতে কাটিয়া গেল, তাহার পর সময় যেন আর কাটিতে চায় না। মমতা ভাবিয়া পায় না, বারোটা ঘণ্টা সে কি করিবে। কাজকৰ্ম্ম কিছুই নাই, একটা কাজ করিবার তিনটা করিয়া মানুষ আছে। পড়িবার বই সব সে সঙ্গে করিয়া আনিয়াছে, কিন্তু পড়ায় সে এক মিনিটও মন দিতে পারে না। বাহিরের আকাশ, চারি দিকের উন্মুক্ত প্রাস্তর, দিগন্তে বিলীয়মান গাছের খামশ্রেণী তাহার দুই চোখকে টানিয়া নেয়, মন তাহারই ভিতর ডুবিয়া যায়, হাতের বই কখন হাত হইতে খসিয়া পড়ে—তাহার খেয়াল থাকে না। কিন্তু শুধু বাহিরের দিকে চাহিয়া থাকিয়া সারাটা দিনত কাটে না ? মনের ভিতরটা কেবলই অস্থির অশান্ত হইয়া ওঠে, কেমন যেন হু হু করিতে থাকে। এখানে আসিয়া সে শাস্তি পাইবে মনে করিয়াছিল, কিন্তু শাস্তি পাইল কই ? কলিকাতার চেয়েও যেন এখানটা তাহার অসহ বোধ হইতেছে। সেখানে সে নিশ্চয় করিয়া জানিত যে অমরের দেখা পাইবে না, কারণ অমর সে দেশেই নাই । কিন্তু এখানে সে যে অতি নিকটে, একেবারে ঘরের পাশে, দৈব সদয় থাকিলে মমতা তাহাকে দিনে দশ বার দেখিতে পাইত। এখানেও কেন নিষ্করণ ভাগ্য তাঁহাকে এমন করিয়া বঞ্চিত করে । চোখে একবার দেখা, তাহাও কি এত বেশী ? এটুকুও কি পাইতে নাই ? বাড়ির অন্য সকলেরও সময় ভাল কাটিতেছিল না। স্বরেশ্বর আশা করিয়া আসিয়াছিলেন, যে, সশরীরে উপস্থিত হইয়া একটু ধমক ধামক করিলেই দুষ্ট প্রজার শিষ্ট হইয়া যাইবে । কিন্তু এখানে আসিয়া দেখিলেন অবস্থা অত সহজ নয়। যাহাদের শেষ সম্বল খড়ের ঘর, গরু বাছুর পর্য্যস্ত বন্যস্রোতে ভাসিয়া গিয়াছে, তাহারা ধমক খাইলেও খাজনা দিতে পারে না। উৎপীড়িত হওয়া তাহাদের বহু শতাব্দীর অভ্যাস, মুখ বুজিয়া সব তাহারা সন্থ করে, কিন্তু টাকা দেয় না। স্বরেশ্বর স্থির করিলেন এখানে বসিয়া মুষ্টিমেয় প্রজার উপর তম্বি না করিয়া সারা জমিদারী ঘুরিয়া বেড়াইবেন ; তাহা হইলে কিছু কাজ হক্টলেও হইতে পারে। সব জায়গায়ই ত কলিকাতার এই দুষ্ট স্বেচ্ছাসেবকের দল বসিয়া নাই ? ইহার এই স্থানে এমন করিয়া আডড গাড়িয়া বসিয়া থাকাতেই যে এখানকার প্রজারা এত অবাধ্য হইয়া উঠিয়াছে সেবিষয়ে স্বরেরের সহেযাত্র ছিল না। এখান হইতে নড়িবার আগে এই কলিকাতার ডেপো ছোক্রাদের কি ভাবে সায়েস্তা করিয়া যাইবেন সে-বিষয়ে তিনি অনেক ফন্দি স্থির করিয়া রাখিয়াছিলেন। যামিনীর দিন কলিকাতায়ও ভাল কাটিত না, এখানেও ভাল কাটিতেছিল না। সেখানে তবু কাজের একটা বাধাধরা নিয়ম দাড়াষ্টয়া গিয়াছিল। তাঙ্গরই অনুসরণ ধরিয়া দিন এক রকম কাটিয়া যাচত। এখানে তত কাজ নাই, এবং কলিকাতার নিয়মে এখানে কাজ করাও কঠিন। ঠিক সময়ে কাজ করার এখানে মূল্য নাই, চাকরবাকর বিধামত যখন যাহা খুশী করে, অনেক বকবকি করিয়াও তাহদের শোধরান যায় না। সব চেয়ে তাহার অস্বস্তি লাগিত নিজের অক্ষমতায়। এই যে দরিদ্র, উৎপীড়িত, বন্যাবিধ্বস্ত গ্রামবাসীর দল, ইহাদের দুৰ্গতি তিনি দিনের পর দিন চোখের উপর দেখিতেছেন, অথচ কিছুই তাহার করিবার উপায় নাই। স্বরেশ্বর তাহদের পিষিয়া ফেলিয়া টাকা আদায় করিবার চেষ্টায় আছেন, কিন্তু তাহাদের মারিয়া ফেলিলেও ত তাহারা জমিদারের খাষ্ট মিটাইতে পারিবে না ? এ ত আর চোখে দেখা যায় না! বরং দূরে যখন ছিলেন, তখনই ভাল ছিলেন। সব চেয়ে ভাল ছিল স্বজিত, যদিও আসিবার সময় আপত্তি করিয়াছিল সেই সকলের চেয়ে বেশী। এখানে কি করিয়া ষে একটা ঘণ্টাও কাটিতে পারে তাহাই ছিল তাহার ভাবনার বিষয়। কিন্তু আসিয়া দেখিল কতকগুলি