পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ty^eఇ প্রবাসী SN9BR কি-চাকর সকলে ই করিয়া তাহাদের দিকে তাকাইয়া আছে দেখিয়া যামিনী তাড়াতাড়ি মেয়েকে টানিয়া লইয়া খাইবার ঘরে গিয়া ঢুকিলেন। বিটা পিছন পিছন আসিতেছে দেখিয়া তাহাকে বলিলেন, “ধ জলটল ঠিক করে দে, খুকীর কাপড় তোয়ালে সব গুছিয়ে রেখে জায়।" মমতার দুই চোখ তখন জলে ভরিয়া আসিয়াছে । ঠোট কাপিতেছে ; পাছে মায়ের কাছে তাহ ধরা পড়িয়া যায়, এই ভয়ে সে অন্ত দিকে মুখ ফিরাইয়া আছে। যামিনী মেয়ের ৰাছে আসিয়া মৃদ্ধস্বরে বলিলেন, "অল্লেতে অত ঘাবড়ে যেয়ে নাম, মেয়েমানুষের জীবনভরা কত পরীক্ষা এত দিন মায়ের কোলের শিশু ছিলে, কিছু বোঝ নি, এখন ক্রমে অনেক দেখতে হবে, অনেক বুঝতে, সহ্য করতে হবে ।” মমতা বলিল, “আমি পারি না মী, এত অন্যায় এত অবিচার আমার সহ হয় না। আমি সত্যিই আজ সুনভাত ছাড়া কিছু খাব না।” যামিনী বলিলেন, “আচ্ছা, আগে স্নান ত ক'রে এস, তার পর দেখা যাবে। ওরা এক দিন তুনভাত খেলেও মার! যাবে না । মানুষ একেবারে না খেয়েও অনেক দিন বেঁচে থাকে ৷” মমতা স্নান করিতে চলিয়া গেল। যামিনী দাড়াইয়৷ ভাবিতে লাগিলেন, এ বিষয়ে কি করা যায়। স্বরেশ্বর ক্রমেই পাগলের মত ব্যবহার আরম্ভ করিয়াছেন। অবশু যামিনী ত প্রায় নীরবে তাহার বহু উৎপাত অনেক বৎসর ধরিয়াই সহ করিয়া আসিতেছেন, এটাও তিনি সহ করিতেন। কিন্তু মমতা ত সহ করিবে না ? ঝোকের মাথায় এমন একটা কিছু করিয়া বসিবে, যাঁহাতে বাপে মেয়েতে চির দিনের মত ছাড়াছাড়ি হইয়া ধাইবে । সে সংসারজ্ঞানহীনা বালিকামাত্র, স্বরেশ্বরের রোবানল হইতে যামিনী কেমন করিয়া তাহাকে রক্ষা করিবেন ? মমতা স্নান করিয়া আসিলে পর তিনি নিজে স্নান করিয়া আসিলেন। দুষ্ট জনে খাইতে বসিলেন, কিন্তু খাওয়া কাহারও হইল না। মমতা মুন মাখিয়া দুই গ্রাস ভাত মুখে দিয়া হাত গুটাইয়া বলিয়া রহিল। মেয়ের রকম দেখিয়া বামিনীও নামেমাত্র জাহার করিয়া উঠিয়া পড়িলেন। ভূত্যের দল গভীর বিস্ময়ে অভিভূত হইয়া মাছ তরকারি যেমন সব জানিয়া রাখিয়াছিল, তেমনি সব উঠাইয়া লইয়া গেল। সব-কিছু তাহাদেরই ভোগে আসিবে, ইহাতে তাহাজের মনে মনে ৰে আনন্দ না হইতেছিল তাহ নয়, কিন্তু এত কষ্ট করিয়া আনা এত বড় তাজ মাছটা কি কারণে গৃহিণী এবং দিদিমণি দুই জনেরই অপছন্দ হইয়া গেল, তাহা তাহারা বিন্দুমাত্রও বুঝিতে পারিল না । যামিনী দুপুরে ঘন্টাখানিক গুইয়া থাকেন, রোজই যে ঘুম হয় তাহা নয়, তবে বিশ্রাম করেন। মমতার কলেজে যাওয়ার অভ্যাস, দুপুরে সে গুইতে পারে না, বই হাতে করিয়া, গুইয় বসিয়া, ঘোরাঘুরি করিয়াই বেলাটা কাটাইয়া দেয়। ঝিচাকরের দল ঘণ্টাখানিক ধরিয়া কাছারীর উষ্ঠানসংলগ্ন বড় পুকুরটায় স্নান করে, তাহার পর পেট পুরিয়া খাইয়া, ঘুমাইয় বাকী দুপুরটা কাটাইয়া দেয়। যামিনী নিয়মমত আজও একখানা বই হাতে করিয়৷ গুইম্বাছিলেন। খানিক পরে বোধ হয় ঘুমাইয়াই পড়িয়াছিলেন, হঠাৎ একটা গোলমালে জাগিয়া উঠিয়া বাসলেন । নিধুঝি পাশে দাড়াইয়া বকৃবক্‌ করিতেছে, তাহার গোটাকয়েক কথা কানে যাইতেই তিনি বিস্মিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি বলছিস্ কি তুই ? পাগল হয়েছিল ?” নিধুর তখন প্রায় চোখে জল আসিয়া পড়িয়াছে,লে ক্ৰন্দনবিকৃত নাকী স্বরে বলিল, “পাগল কেনে হব মা ? পেত্যয় না যায়, আপনি উঠে দেখুন। দিদিমণি ভূ-বেলার যত মাছ তরকারি সব ঢেলে নিয়ে বাগদী বৌয়ের সঙ্গে কোথা চলে গিয়েছেন।” যামিনীর তখন আতঙ্কে গলা শুকাইয়া আসিয়াছে। কিন্তু মনের মধ্যে কস্তার সাহসে একটু যে গর্কের সঞ্চার হয় নাই তাহাও নয় । এই মেয়ে পরিবে নিজের স্বত্ব রক্ষা করিয়া চলিতে । পায়ে চটি পরিয়া, একটা ছাতা হাতে করিয়া যামিনী যেমন বেশে ছিলেন, তেমনি অবস্থায়ই বাহির হইয়া পড়িলেন । নিধুকে বলিলেন, “তুই আয় আমার সঙ্গে।” মমতা যে কোথায় গিয়াছে তাহা আর তাহাকে বলিয়া দিতে হইল না। নিধু চোখ মুছিতে মুছিতে তাহার পিছন পিছন চলিল । হাড়িপাড়ার কাছাকাছি জাসিতেই দেখিতে পাইলেন দূরে মমতা আসিতেছে। তাহার পিছনে বাগীবে, সে কাছারি