পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৯১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

to-80, এত রঞ্জিত, যে তাহাতে কেবল ভয়েরই উৎপত্তি হয়, অন্ত বিশেষ কোন ফলোদয় হয় না। ইহার উপর উচ্চশিক্ষিত যুবকদের বেকার-সমস্ত অতি তীব্র হওয়ায় বৰ্ত্তমানে সাধারণ শিক্ষার উপরই একটা অবিশ্বাস ক্রমেই প্রবল হইয়া উঠিতেছে। এই সমস্ত বাধাকে অতিক্রম করিতে হইলে সৰ্ব্বপ্রথমে শিক্ষার উপর গ্রামবাসীর বিশ্বাস উৎপন্ন করিতে হইবে। গ্রামবাসীকে বুঝাইতে হইবে, যে, গ্রামের আর্থিক, নৈতিক, সৰ্ব্ববিধ উন্নতির জন্য মনের জাগরণের প্রয়োজন সৰ্ব্বপ্রথমে, এবং সমস্ত দৈন্ত দূর করিবার জন্য চাই সেই যথার্থ শিক্ষা যাহা অঙ্গুলি-নিৰ্দ্দেশে দৈন্যের মূলীভূত কারণকে দেখাইয় দিতে পারে এবং তাহা দূর করিবার জন্য সাহস ও বীৰ্য্যের সহিত সকলকে কৰ্ম্মে প্রণোদিত করিতে পারে। এই কাৰ্য্য বর্তমান পাঠশালার মত ক্ষীণপ্রাণ নাড়ীছাড়া অনুষ্ঠানের দ্বারা হইতে পারে না । সকলেই বলিয়া থাকেন আমাদের গ্রামগুলি একেবারে সৰ্ব্বদিকেই অজ্ঞতার অন্ধকারে রহিয়াছে ; কৃষি, ব্যবসাবাণিজ্য, ধৰ্ম্মনীতি, উৎসব-আনন্দ কোন দিকেই নূতন প্রাণের সাড়া নাই—মান্ধাতার আমলের বিধিব্যবস্থাতেই জর্জরিত। অন্তঃপুর-জীবনের সর্বত্রই-ধারীবিদ্যা, সস্তানপালন, খাদ্য, স্বাস্থ্য, সাংসারিক নিত্য বিধিনিষেধ, পূজাত্ৰত— অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের বোঝা জগদ্দল পাথরের মত চাপিয়া রহিয়াছে। কিন্তু এই সঙ্গে ইহাও মনে রাখিতে হইবে যে, পুরাতনের এই দুর্ভেদ্য দুয়ার ভেদ করিতে হইলে, বাহিরের বিজ্ঞানসম্মত কতকগুলি উন্নত বিধির ব্যবস্থা করিলেই চলিবে না—যদি না সেই সঙ্গে শ্রদ্ধা ও প্রাণ থাকে। কারণ কেবলমাত্র প্রাণপূর্ণ শ্রদ্ধাই জীর্ণতা ও অজ্ঞানত ভেদ করিয়া প্রাণধৰ্ম্মীর প্রাণকে স্পর্শ করিতে পারে ; প্রাণ স্পর্শ করিলেই তখন আর কোন নূতন ও উন্নত বিধিই বাহিরের চাপানো বস্তু বলিয়া মনে হয় না, কাজেই তাহাকে গ্রহণ করিতে তখন মনে কোন বিদ্রোহ থাকে না । - এই জন্য চার-পাচটি গ্রামকে লইয়া এক একটি শিক্ষাকেঞ্জ গড়িঃ তুলিতে হইবে। এই কেন্দ্রগুলি গ্রামের নাড়ীর সঙ্গে যোগ রাখিয়া শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রামের দৈহিক, নৈতিক, সামাজিক, আর্থিক ও মানসিক সমস্ত সমস্তার সম্মুখীন হইবে। গ্রামের প্রৰণসী ১৩৪২ আত্মচেতনা ও আত্মবিশ্বাসকে জাগাইয়া দেওয়াই এই সব কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানের মুখ্য কাজ হইবে। এই সব কেন্দ্র এক দিকে যেমন বালক-বালিকাদের শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করিবে, তেমনই অপর দিকে অন্তঃপুর ও জনসাধারণেরও নানাবিধ অজ্ঞতা দূর করিবার আয়োজন করিবে ; লিখনপঠনক্ষমতামূলক বিদ্যার সঙ্গে সঙ্গে শিল্প, কৃষি, পূৰ্ত্ত প্রভূতি যাবতীয় বিষয়ের উন্নতির জন্য সচেষ্ট হইবে । এই সব কেন্দ্র গ্রামের শিক্ষাব্যবস্থাকে সময়, নিয়ম, বিষয়, খেলাধূলা, সেবাশুশ্ৰুষ, আমোদপ্রমোদ, সমস্ত দিক দিয়াই গ্রামের জীবনের অঙ্গাঙ্গী ব্যবস্থার অনুযায়ী করিয়া গ্রামেরই বিশেষ ব্যবস্থা ও উদ্দেশু সাধনের জন্য গড়িয়া তুলিতে প্রয়াপী হইবে। এই ভাবের কেন্দ্র গড়িয়া তুলিতে পারিলে, গ্রামের মনের শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসকে একবার জাগাইতে পারিলে, আর কোন দিকেই অগ্রগতিতে বাধা পড়িবে না। তখনই গ্রামে গ্রামে পাঠশালা-স্থাপনা অনায়াসকার্য্য হইবে - তখন এই কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানের অন্তর্গত থাকিয়াই প্রথমিক শিক্ষা, শিল্পশিক্ষা, প্রাথমিক স্বাস্থ্যবিধি শিক্ষা প্রভূতি সমস্ত প্রাথমিক বিধান বাংলার বিধবা মহিলাদের দ্বারা সম্পন্ন করিবার বিপুল ক্ষেত্র গড়িয়া উঠিবে। কিন্তু প্রথম এই ভাবের কেন্দ্র গড়িয় তুলিবার জন্য চাই শিক্ষাদীক্ষয় চরিত্রে আদর্শে উজ্জল প্রাণবান ত্যাগী কৰ্ম্মমণ্ডলী-যাহাদের ত্যাগ, র্যহাদের জ্ঞান, র্যাহাদের চরিত্র, যাহাদের শ্রদ্ধা গ্রামের আবালবৃদ্ধবনিতার মনকে আকৃষ্ট করিতে পারিবে ও র্যাহাঁদের নিকট গ্রামবাসী তাহাঁদের সমস্ত সমস্ত সমাধান করিয়া লইতে পারিবে । এই উপলক্ষে আমরা একবার খ্ৰীষ্টীয় সমাজের দিকে দৃষ্টিপাত করিতে পারি। খ্ৰীষ্টীয় মিশনরীরা যেভাবে নিজেদের দেশ ত্যাগ করিয়া, সভ্য সমাজের সব মুখস্বাচ্ছন্দ্য, আমোদ-প্রমোদ, ভোগবিলাস ত্যাগ করিয়া পৃথিবীময় পল্লীতে পীিতে অখ্যাত অজ্ঞাত স্থানে নিরক্ষর পল্লীবাসীর মধ্যে শিক্ষাবিস্তারে ব্যাপৃত, তাহ বাস্তবিকই শ্রদ্ধা ও অল্পকরণের যোগ্য। র্তাহীদের উদ্দেশ্বের সঙ্গে আমাদের মিল বা সহানুভূতি না হইতেও পারে, কিন্তু তাঁহাদের ত্যাগ ও সাহস, তাহাজের ধৈর্য্য ও মানবতা আমাদের মনে স্বতঃই শ্রদ্ধার উন্ত্রেক করে । তাহাঁদের পিছনে যেমন শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানের সাহায্য রহিয়াছে, আমাদের দেশেও এই ভাবের কী প্রেরণের