পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাভিক ওই পেশা। খাটুনীর নাম নাই --খায়-দায় ঘুমায়, যাত্রার দলের ভার বয়, তামাক সাজে আর মাঝে মাঝে সং সাজিয়া বেড়ায় । ভুবন কিন্তু দারুণ পরিশ্রমী মেয়ে, শরীরে শক্তিও তাহার বিপুল ; সে ধান ভানিয়া, ঘুটে দিয়া, ঘাস বেচিয়া স্বচ্ছদে আহারের প্রাচুর্ঘ্যে বিপুলকায় মতিলালকে আরও স্ফীত এবং কুৎসিত করিয়া তুলিল –সঙ্গে সঙ্গে নিজেও তাই হইয়া উঠিল। মতিলালকে সে অহরহ তিরস্কার করে রোজকারের জন্য, মতিলালের সেই এক উত্তর—থাটতে গেলে গতরে লজর দেয় সব—উ হবে না । যাত্রার দলে এইবার মাইনে হবে । আর ছেলেপিলে হোক --তখন না হয়— ছেলে না হ’লে কি ঘর --বলিয়। সে পুলকে হি হি করিয়া হাসে । ভূবন বলিল –হবে ত ছেলেপিলে । মতিলালের মনে পুলক বাড়িয়া গেল --দাড়া, আজ মাজুলী এনে দোব তোকে ! মাদুলী সে অনিয়াও দিল, একটা নয়—একট-একটা করিয়া পাচ-ছয়টা মাদুলী ভুবনের বুকে এখন ঝোলে। বেশ চলিতেছিল। কৰ্ম্মপরায়ণ ভুবনের কৰ্ম্মের মধ্যেই দিন কাটিয়া যাইত। সেদিন সহসা তাহার দৃষ্টিতে পড়িল— পুকুরের ধারে মতিলাল বসিয়া হি হি করিয়া হাসিতেছে— আর যাত্রার দলের কয়টা ছেলে তাঁহাকে কাদা মাথাইতেছে। এক জনের কথাও তাহার কানে আসিল— সে মতিলালকে বলিতেছিল—গাঙের পলি যদি মাখতে পারিস—তবে রং ফরসা হবে নিশ্চয়। এতেও হবে, তবে ফিট গোরা হবে না। সে কথার দিকে মতিলালের মন ছিল না—সে দূরের কতকগুলা ছোট ছেলের কথা শুনিয়া হাসিতেছিল । তাহার হাততালি দিয়া নাচিতেছিল আর স্কুর করিয়া গাহিতেছিল—আয় রে কাল মোষ —কাদা মাখবি বোস ! ভুবনের অঙ্গ জলিয়া গেল। সে মতিলালকেই ডাকিল— ও মুখপোড়, বলি শোন! মতিলাল হি হি করিয়া হাসিতে হাসিতে উঠিয়া আসিল। যাত্রার দলের এক জন বলিল—মাধব তাতীর লীলেবতী । মতিলাল ግማል ক্রোধে ভুবনের চোখে জল দেখা দিল, মতিলাল কিন্তু হাসিয়া বলিল—বলুক কেনে ; তোরও যেমন ! ইহার পর ক্রমশঃ ভূবন আবিষ্কার করিল -এ কথা এ গ্রামের সকলেই বলে--কৰ্ম্মের ব্যস্ততার মধ্যে ভূবন এতদিন শুনে নাই, বা শুনিতে পায় নাই! ভুবন জেদ ধরিয়া বসিল—এখানে সে থাকিবে না । মতিলাল বলিল— মামার ভিটেতে মোটে এইটুকুন ছোট ঘর—ছেলেপিলে হ'লে কুলোবে কেনে ? ভূবন বলিল—ঘর করে লিবি-অত বড় হাদ মুনিষ-- প্রবল আপত্তি করিয়া মতিলাল বলিল--উছ, সি আমি পারব না। বাবা -ঘর তোলা কি সোজা কথা ! ভূবন তবু মানিল না, সে বলিল - ঘরের খরচ আমি দোব। আর বাবা আছে দাদা আছে ! বাধ্য হইয়। বৎসরখানেক পূৰ্ব্বে মতিলাল মাতুলালয়ে আসিয়া বাস আরম্ভ করিল। ভুবনের চেষ্টায় ও অর্থে ঘর হইয়াছে। মতিলাল এথানকার পাচালীর দলে এখন তামাক সাজে। দত্তকাকার দরবারে নিয়মিত হাজিরা দেয়—দত্তকাকা তাহাকে কলিকাতার যাত্রার দলে চাকরি করিয়া দিবেন। ভূবন যেমন পাটিত তেমনি খাটে । তাহার পরিশ্রমে এখানেও স্বচ্ছন্দ সংসার, কোন অভাব নাই। বলিতে ভুলিয়াছি, এখন ঘরের কাজ, ভাত রাধা, জল তোলা এগুলি মতিলালকেই করিতে হয়। বাড়িতে পা দিলেই ভুবনের শরীরে অস্থখ দেখা দেয় ! 嘯 事 鲁 ঐ চৈত্র-সংক্রান্তির দিনই । মতিলাল রান্নাবান্না শেষ করিয়া স্নান করিয়া আসিল । দুইখান গামলায় হাড়ির ভাত ঢালিয়া ডাকিল—ভোবন ওঠ । ভূবন উঠিয়া বসিল । মতিলালের গামলার দিকে চাহিয়া বলিল—এই যে বস্লি খিদে নাই আজ ! চারটি ভিজিয়ে রাখলে কালকের মুড়ি আসান হত। থাবা ভরিয়া গ্রাস তুলিতে তুলিতে মতিলাল বলিল—আবার লেগেছে খিদে ! ভূবন বলিল—তোর ওই কুকুরের ভাত আমার হেনসেল থেকে দোব না, আজ তোর ভাত থেকে তু দে। লইলে লৈবিছি আন ।