পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈশাখ বারে বছরের বিচ্ছেদের সমস্ত ক্লেশ তাহার একদিনে শেষ করিতে চাহিতেছিল। আরও একটা দিন কাটিল গল্প করিয়া, রাত কাটিল রাত জাগিয়া । বেলা এগারটায় গাড়ী । গরুর গাড়ীতে যাইতে হইলে আটটার মধ্যে যাওয়া দরকার। ইটিয়া গেলে পরে যাওয়া চলে । বিজন ইটিয়া যাওয়া স্থির করিল। বিচ্ছেদের আশঙ্কা যখন জুই বন্ধুর চোখ অশ্রীসজল করিয়া তুলিয়াছে, তখন বিজন অবিনাশকে ঘরে ডাকিয়া লইয়া গেল । অপরাধীর কণ্ঠে কহিল, “একটা কথা বল্ব অবিনাশ, কিছু মনে করিস নে ৷” নকি ?” “অবিনাশ, আমরা দু-জনেই গরিব, সে-কথাটাত তুই ভাল করেই জানিস ?” .অবিনাশ একটু অবাক হইয়া বলিল, “নিশ্চয়ই, কিন্তু সে কথা কেন ?” “আচ্ছা, আমি যদি ধনী হ’তাম, তা হ’লে তুষ্ট কি আমার সঙ্গে ঠিক এমুনি ক’রে মিশ্বতে পারতিস্ ?” কথাটা অবিনাশ অস্বীকার করিতে পারিল না । কহিল, “কি জানি - “কি জানি নয়, আমি জানি ভ হ’লে তুই ব্যবধান রেখে চলতিস্। কিন্তু আমরা যখন দু-জনেই প্রায় সমান গরিব, তখন,”--তখন, আমি যদি তোর ছেলেমেয়েদের কিছু সন্দেশ খেতে দি, তুই নিশ্চয়ই আপত্তি করবি না ?” আপত্তি অবিনাশ করিল, এবং প্রবল ভাবেই করিল। কিন্তু বিজন ছাড়িল না । কহিল, “শোন অবিনাশ, ধদি আমি ধনী হতাম, আর তোর ছেলেমেয়েদের এই নোটুখানা দিতাম, তুই সেটা দয়ার দান ব’লে নিতে দ্বিধা করতে পারতিল। কিন্তু বিশ্বাস কর এ শুধু তোর ছেলেমেয়েদের কাকার উপহার। আমার ছেলেমেয়েদের তুই যদি এটা দিতিস, আমি নিতাম।” অবশেবে অবিনাশের লইতেই হইল। একবার শেব চেষ্টা করিয়া কহিল, “কিন্তু তোরও ত টাকার অভাব, এটা থাকলে তোর কত সুবিধে হ’ত ভেবে দেখু ত ” }} দুই রাত্রির ইতিহাস خصو “হ’ত । কিন্তু আমার নিজের রোজগারের টীকা থেকে তোর ছেলেমেয়েদের উপহার দিতে পারছি, এ-আনন্টুকু থেকে আমায় বঞ্চিত করিস্ নে । আমি দ্বিগুণ থেটে আবার ওটা রোজগার করতে পারব।” দরজার বাহিরে শিবানী চোখ মুছিল। খোড়া অবিনাশের ষ্টেশন পর্যন্ত যাওয়া হইল না । তা ছাড়া তাহার ইস্কুল । শুধু যত দূর দেখা গেল দরজার বাহিরে দাড়াইয়া রহিল । লীলা জানলার বাহিরে তাকাইয়া কহিল, “বন্ধুকে অতগুলো মিথ্যে কথা ব’লে এলে ?” অবিনাশের খড়ের ঘরের রিক্ততার সহিত নিজের মুসজ্জিত ঘরের আসবাবপত্রের একটা তুলন। মনে মনে করিয়া লইয়৷ বিজন কহিল, “হ্যা । কিন্তু এত দিন গাদাগদি সত্যি কথা ব’লে যে পুণ্য সঞ্চয় করেছি, এই দু-দিনের মিথ্যে কথার পুণ্য আমার তার চাইতে কম নয়।” “বন্ধুকে মিথ্যে কথা ব’লে ভুলান বুঝি যারপরনাই পুণ্যের কাজ ?” “এক্ষেত্রে তাই লীলা । আমরা দু-জনে জীবন আরম্ভ করেছিলাম প্রায় একসঙ্গে । তার পর পরিণামে আমি সফল হয়েছি, আর সে সেই অজ পাড়াগীয়ে তার নিস্ফল জীবন সম্বল ক’রে পড়ে আছে। তুমি কি মনে কর আমি জীবনে এত সুখী হয়েছি জনৃলে সে স্বর্থী হ’ত ? অবিনাশের জায়গায় নিজেকে বসালে দেখতে পাই, আমি অন্ততঃ হতাম না ।” “বন্ধুকে এত হীন মনে কর কেন ?” “মোটেই না । শুধু মানুষকে মানুষ বলে চিনি । জান লীলা, আমাকে তীরই মত অকৃতকাৰ্য্য ভেবে সে দুঃখিত যতটুকু হয়েছে, আনন্দ পেয়েছে তার চাইতে অনেক বেশী। সে আনন্দকে আমার বিফলতায় নীচ প্রবৃত্তির ফল ব’লে মনে ক’রে না । সে খুশী হয়েছে, আমরা জীবনপথে বেশী দূর পৃথক হয়ে যাই নি তাই ভেবে ।” “কিন্তু তুমি ত ভাঁকে নানা রকমে সাহায্য করতে পারতে ; তোমার যখন টাকার অভাব নাই—”