পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՖՆ মন বলিল, “তুমি কি সারাদিনই গঙ্গা নাইবে নাকি ?” হাসিয়া গৌরী বলিল, “সারাদিনই নাইব না। কিন্তু আমিও ত একটা মানুষ, আমারও ত সৰ্থ-টখ একটু-আধটু হয়। কাল চানের পর আমি কলকাতা শহর দেখতে ধাৰ। তোরা সুব যাদুঘর, চিড়িয়াখানা কত কি বলিস, কাল আমি একেবারে সব শেষ ক’রে দেখে আসব।” মন৷ বিজ্ঞের মত বলিল, “দেখতে ত ঘাচ্ছ, কিন্তু সেখানে সব তিমিমাছ, উটপার্থী, সিন্ধুঘোটক কত কি আছে, তোমাকে বুঝিয়ে দেবে কে ? সব ইংরিঙ্গীতে লেখা, তুমি ত এ বি সি ডি-ও জনি না ।” গেীরী বলিল, “না জানি ত কি হয়েছে । যারা ইংরেজী জানে না তারা বুঝি আর চোখে তাকিয়ে দেখতেও জানে না !” মন বলিল, “চোখ তীকালেই যদি সব বোঝা যেত তাহ’লে আর লোকে এত কষ্ট ক’রে দিনরাত খেটে পড়াশুনে করত না ।” আসরে গৌরীর স্বামী আসিয়া দেখা দিলেন । গৌরী তাড়াতাড়ি আসন পাতিয়া তাহীকে বসিতে দিয়া বলিল, “হ্যাগো, ভাল ক’রে ব’লে এসেছ ত ? পথঘাট ঠিক ব’লে না দিলে তাদের গাড়ী আবার বাড়ি খুজে পাবে না । আমি এদিককার সব ব্যবস্থা সেরে রেখেছি, আমার জন্তে এক মিনিটও দেরি হবে না ।” কৰ্ত্ত শম্ভুনাথ আসন বসিয়া হাই তুলিতে তুলিতে বলিলেন, “বলেছি গো বলেছি, অামাকে অীর শেখাতে হবে না। কিন্তু তোমাদের ছেড়ে দিতেই যে আমার ভরসা হচ্ছে না। আজ শুনে এলাম পাঁচ লাখ লোক নাকি স্নান করতে এসেছে কলকাতায় । এই ভীড়ের মধ্যে তোমাদের ছেড়ে দিলে চাপা পড়েই ত মীরা যাবে। এবারকার মত না-হয় চানটা বন্ধ থাক, পরে আবার কখনও গেলেই হবে।” গৌরী একেবারে ঝাঝিয়া উঠিয়া বলিল, “হবে পরে ! আtfম যমের বাড়ি গেলে গঙ্গার ধীরে ত নিয়ে যেতেই হবে । একসঙ্গে চিরকালের মত পুণ্যি হয়ে যাবে। এই মতলব যদি ছিল ত অাগে বললেই হ’ত, সারাদিন ধরে সাত-শ রকম কাজে আমি থেটে মরভূম না। দগুবৎ বাবা এই গুষ্টিকে, মানুষের একটা ভাল যদি সইতে পারে!...” ১৬৪২ গৌরীর স্বর ক্রেমেই চড়িতেছে দেখিয়া শম্ভুনাথ বলিলেন, “যেও গো যেও, গাড়ীচাপা পড়তে যদি তোমার সখ থাকে আমি বারণ করব না। আমার জামা-কাপড়টা ঠিক ক’রে রেখে যেও, তাহলেই হবে ।” গৌরী কথার উত্তর দিল না। কয়েক মিনিট উত্তেজিত ভাবে এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি করিয়া আবার স্বামীর সন্মুখে আসিয়া স্থির হইয়া দাড়াইয়া বলিল, “গাড়ীচাপা পড়ে মরলে আর আমার ক্ষতিটা এমন কি বেশী হবে ? তোমার উকুন-কাদায় বসে ত চরিবেল রাজসেবা পাচ্ছি না। সে তৰু বুঝব ধৰ্ম্ম করতে গিয়ে প্রাণটা গিয়েছে। সেকালে ত লোকে রথের চাকাতে ইচ্ছে করেই প্রাণ দিত ।” শভু চটিয়া বলিল, “তবে আর ঘটা ক’রে বেড়াবার আয়োজন করা কেন ? সকালে উঠে একটা গাড়ীর চাকাতেই মাথা পেত দিও এখন। একেবারে কুৈঠলাভ হiে যাবে। তার আগে আজকের মত আমার ভাতটা বেড়ে দাও ।” গৌরী রাগে গর-গর করিতে করিতে শস্তুর ভাতের থালাটা অনিয়া দুৰ্ম্ম করিয়া তাহীর সম্মুখে বসাইয়া দিল । রাগের মাথায় এক বাটি ডালই ভাতের উপর ঢালিয়া দিল । তার পর কাহারও কিছু প্রয়াজন আছে কিনা খোজ নকরিয়াই আপনার ঘরে চলিয়া গেল । টিনের ট্রাঙ্ক ঘাটিয়া অনেক কষ্টে লাবির দুইটা ও ছুটকীর একটা পরিষ্কার ফ্রক বাহির হইল, তাহারও আবার সব কয়টাতে বোতাম নাই । ছেলেদের শাটের বোতাম কাটিয়া গৌরী মেয়েদের জামায় লাগাইয়া দিল । ছেলেরা নিজের ঘরে থাকিবে একদিন জাময় বোতাম না থাকিলে কিছু আসিয়া যায় না। পরের বাড়িতে যাহারা যাইবে, তাহাদের জামাওলা আগে ঠিক হওয়া দরকার। পাজাম লাবির দুইটা আছে, ছুটকীর একটাও নাই। সকালবেলা এই দুইটাই দুই জনকে পরাইয়া দিবে, আর ধনার ছেড়া হাফ-প্যাণ্টের পা দুইটা মুড়িয়া ছুটকীর জন্ত একটা বাড়তি পাজামা বানাইয়া রাথিয়া গেলেই হইবে । কিন্তু বাড়িতে একটা কঁাচিও নাই যে পা দুইটা ঠিক করিয়া কাটিবে। গৌরী হাফ-প্যান্টটা লইয়া বঁটিতে খসিয়া একটু কাটিয়া