পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Տ00 উঠে। অরুণ বিছানা হইতে উঠিয়া জানালার ধারে চুপ করিয়া দাড়ায় ; বাতাস বড় স্নিগ্ধ, রাত্রি বড় শীতল । ভয় দূর হইয়া যায়। চোখে আবার ঘুম আসে। চজমা যেন স্বপ্নতরী ! d বৈশাখ মাসের মাঝামাঝি গ্রীষ্মের ছুটি আরম্ভ হইল । অরুণ বাচিয়া গেল। সে ঠিক করিল, নিয়মিত পাঠাভ্যাস ও শারীরিক ব্যায়াম করিয়া মানসিক চাঞ্চল দমন করিবে । ছুটি হইতেই সে এক কটন করিয়া ফেলিল, প্রতিদিন ছয় ঘন্ট স্কুলের বই পড়িবে ; এক ঘণ্টা প্রতিমাকে পড়াই ব বা তাহার সহিত গল্প করিবে ; এক ঘণ্টা নিয়মিত ভাবে বাগানে মাটি কাটা, পুকুরে স্নান, ব্যায়াম ; ছুই ঘণ্টা বেড়াইবে হাটিয়া গড়ের মাঠ যাইবে ; আর এক ঘণ্টা রাখিল কবিতা লিখিবার জন্ত । সে কবি হইবে, ইহাই তাহার অস্তরের গোপন ধ্যান । মাঝে মাঝে সে কবিতা লিখিতে বসে, জয়স্তের চেয়ে কিছু খারাপ লেখে না । কিন্তু তৃপ্তি হয় না, আপনার অন্তরের ছন, ভাষা লে যেন খুজিয়া পাইতেছে না । মনে হয়, রবীন্দ্রনাথের কোন কবিতা ভাঙিয়া নুতন করিয়া সাজাইতেছে । কবিতাগুলি লিখিয়া সে ছিড়িয়া ফেলে। এই ফুল, পার্থী, আকাশ, আলোক, প্রেম লইয়া সে কবিতা লিখিতে চায় না । সে হইবে জনগণের কবি ; নবযুগের নবমানবের দূত; কলের মজুর, ডকের কুলি, জাহাজের খালসী, গাড়ীর গাড়োয়ান গণ-মানবের সে জয়গান গffহবে । হৰ্ম্মসঙ্কুল নগরের জনাকীর্ণ পথে যে-কৰ্ম্মস্রোত প্রবাহিত, তাহারই সংঘাত, বেদন, আনন্দকে বাণীরূপ দিবে। কিন্তু মুস্কিল, লিখিতে বসিলেই কবিতাগুলি ভাবপ্রবণ, হৃদরোচ্ছাসময় হয়, তাহার মনের নানা আশা বেদনার কথা হয় । ছন্দ ও ভাষা রবীন্দ্রনাথের কোন কধিতার অস্থকরণ হইয়া পড়ে । সে অবাক হইয়া যায়, রবীন্দ্রনাথের কাব্যগ্রন্থ শুধু তাহার আনন্দকর পাঠ্য, তাহার তরুণ জীবনর অংশ হইয়া গিয়াছে, তাহার মানসপ্রকৃতির সহিত যে নিগুঢ় যোগে যুক্ত । ONම්A. এবার গ্রীষ্মে সে নুতন ছনে, নূতন ভাবে কবিতা লিখিবে । অজয় কিন্তু অরুণের সকল প্ল্যান উন্টাইয়া দিল । সকাল হইলেই সে এক ভাঙা বাইসিকেল লইয়া হাজির হয়। অকণকে পড়ার ঘর হইতে টানিয়া বাহির করে, বলে অরুণ তুই বড় কুণো হয়ে যাচ্ছিল, অত পড়ে না, চল্ সাইকেল-চড়া শিখবি । অরুণ বাচিয়া যায় । পড়ায় তাহার মন লাগে না । প্রভাতের বহিঃপ্রকৃতি তাহাকে উন্মনা করিয়া তোলে। বাড়ির সম্মুখে জনবিরল গলিতে সাইকেল-চড়া শিক্ষা আরম্ভ হয়। গাড়ীর চাকায় বিক্ষত সরু গলি সাইকেল চালানর পক্ষে সুবিধার নয়, কিন্তু নিকটে শিথিবীর উপযুক্ত স্থানাভাব । সাইকেল-চড়া শেষ হইলে পুকুরে স্নানের পাল । দীপ্ত স্বর্যালোকে পুকুরের জল ঝিকিমিকি করে, গাছের ছায়া পড়ে ; অজয় ও অরুণ দুরন্ত ধীবর বালকের মত জলে লফিাইয়া পড়ে, সাতার কাটে, চোখ লাল করিয়া উঠিয়া আসে। জলসিক্ত দেহে রৌদ্রে বসিয়া অরুণ এক অপূৰ্ব্ব আননা পায় । দুপুরে খাওয়ার পর সে প্রতিমার ঘরে গল্প করিতে বসে। প্রতিমার কোন সঙ্গিনী নাই, তাহাকে দেখাশোনা করা দরকার। বাজে কথা অনর্গল বকিয়া যাইবার কি অদ্ভূত ক্ষমতা প্রতিমার । শুনিতে বড় ভাল লাগে। কিন্তু কিছুক্ষণ গল্প করার পর প্রতিমা বলে, দাদা বড় ঘুম পাচ্ছে । প্রতিমার বিশ্রাম বিশেষ দরকার । যা রোগ সে । অরুণ নিজের ঘরে আসিয়া কবিতার খাতা লইয়া বসে, যত আজগুবি কথা মাথায় আসে । আপন মনে হসিয়া ওঠে । কবিতার খাতা রাখিয়া গল্পের বই লইয়৷ শুষ্টয় পড়ে—ডিকেলের টেল অফ টু সিটিজ, ডুমার থী মস্কেটিয়াস, বঙ্কিমচক্সের রাজসিংহ-নিঝুম দুপুরে সে কোন কল্পলোকে চলিয়া যায়। প্রতিমা ঘুমায় না। ঘরের দরজা বন্ধ করিয়া সে লুকাইয়া বাংলা ডিটেকটিভ নভেল পড়ে। বিকালে অজয় আসিয়া অক্ষণকে খেলিতে বা ম্যাচ দেখিতে টানিয়া লইয়া যায় ।