পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈশাখ ৰিবিধ প্রসঙ্গ—ভাষানুষায়ী প্রদেশ ও ভারতীয় মহাজাতি গঠন 282 তাহাতেই ধে তাহীদের দ্যাধ্য স্বার্থ রক্ষিত হইবেই এমন আশা করা যায় না । কিন্তু তাহীদের অভাব অভিযোগ বিজ্ঞাপিত হইতে পারিবে । লীগ অব নেশুন্সের উদ্যোগে ইউরোপের প্রায় ২০টি রাষ্ট্রেসংখ্যালধিষ্ঠদের স্বার্থরক্ষার্থ যে-সব টা টি (Minorities Protection Treaties ) {{{fo, Qofoto stol, কৃষ্টি, সামাজিক প্রথা, ধৰ্ম্ম ও ব্যক্তিগত আইন ( Personal Law ) আলাদা হইলে সংখ্যালঘুদিগের স্বার্থরক্ষার ব্যবস্থা করিবার নিয়ম আছে । বিহারের অধিকাংশ বাঙালীর ধৰ্ম্ম হিন্দু বিহারীদের মত বটে, কিন্তু তাহদের ভাষা, কৃষ্টি, সামাজিক রীতিনীতি ও ব্যক্তিগত আইন আলাদা । তদুপরি তাহীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলিয়া অrলিতেছে । এই জন্ত তাহীদের আলাদা আসনের দাবী গ্রাহ হওয়া উচিত। তাহার। বিহারের লোক, মুখে ইহা স্বীকার করিলেই তাঁহাদের আলাদা আলনের দাবী বাতিল হয় না । কারণ, বিহারের আদিম নিবাসীদের, খ্ৰীষ্টিয়ানদের, মুসলমানদের বিরুদ্ধে কোন অভিবান নাই, কিন্তু তাহদিগকে আলাদা আসন এবং আলাদা নিৰ্ব্বাচকমণ্ডলী দ্বারা নিৰ্ব্বাচনের অধিকার দেওয়া হইয়াছে, যদিও তাহারাও বিহারের লোক । বাঙালীর আলাদা নিৰ্ব্বাচকমণ্ডলী দ্বারা নিৰ্ব্বাচন চান না । তাহার কেবল কয়েকটি আসন চান, এবং সেইগুলির জন্ত বাঙালী প্রতিনিধি বিহারী ও বাঙালী উভয়ে মিলিয়া নিৰ্ব্বাচন করিবেন, এই চান | বিহারের অধিবাসীসংখ্যা ৩২৩৭১৪৩৪ । তাহার মধ্যে বাংলাভাষী ১৮১৬১৭২ অর্থাৎ শতকরা ৫-৬ জন। ঠিক সংখ্যা বিশ লক্ষের অধিক মনে হয় । কারণ, বাঙালীদের সংখ্যা নানা প্রকারে কম দেখাইবার চেষ্টা হইয়া আপিতেছে, যাহা হউক, শতকরা ৫-৬ হইলেও তাহার প্রতিনিধি পাইবার ঘোগ্য । খ্ৰীষ্টয়ানরা বিহারে শতকরা এক জনও নহে, অথচ তাহাদিগকে শতকরা ৪টি আসন দেওয়া হইয়াছে, মুসলমানের মধ্যপ্রদেশ ও বেরীরে শতকরা ৪.৪, অথচ তথার তাহাদিগকে শতকরা ১২.৫টি আপন দেওয়া হইয়াছে, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে অমুসলমানের শতকরা ৫ জনেরও কম, অথচ তাহাদিগকে তথায় তাহtদের সংখ্যার অনুপাতের বেশী আসন দেওয়া হইয়াছে । রাণী রাসমণির স্মৃতি পুণ্যশীলা রাণী রাসমণির স্মৃতি কিরূপে স্মরণীয় করিতে পারা যায় তাহা উদ্ভাবন করিবার জন্ত কিছুদিন পূর্বে আলবার্ট হলে শ্ৰীযুক্ত যতীন্দ্রনাথ বসুর সভাপতিত্বে কলিকাতার নাগরিকগণের এক সভার অধিবেশন হইয়াছিল । রাণীর অসংখ্য দীনের কথা লোকসমাজে প্রচলিত আছে । এই স্মৃতিসভা তাহা স্মরণীয় করিয়া রাখিবার জন্ত কপেীরেগুনকে তাহার নামে কোনও রাস্তার নামকরণ করিতে অনুরোধ জানাইয়াছেন । এই অনুরোধ সমর্থনযোগ্য । ভাষানুযায়ী প্রদেশ ও ভারতীয় মহাজাতি গঠন বোম্বাই, মন্দ্রিাজ, মধ্যপ্রদেশ ও বেরার, আসাম প্রভৃত্তি প্রদেশে নানাভাষাভাষী লোকেরা স্থায়ী ভাবে বাস করে । অনেক দেশী রাজ্যেরও স্থায়ী বাসিন্দার নানাভাষাভাষী । সুতরাং ভারতবর্ষকে, কেবলমাত্র একভাষাভাষী, এরূপ অনেকগুলি প্রদেশে ও রাজ্যে ভাগ করা সম্ভবপর নহে । তাহা বাঞ্ছনীয়ও নহে। কারণ, আমাদিগকে একটি ভারতীয় মহাজাতি গড়িতে হইবে । তfহাতে নানা ভাষার লোক আছে ও থাকিবে । তাহীদের পরম্পরের সহিত মিলিয়া মিশিয়া সম্ভাবে জীবন যাপন করিতে সমর্থ হওয়া উচিত । এক একটি প্রদেশে কেবল এক ভাষাভাষী লোক স্থায়ী ভাবে থাকা অপেক্ষা নানাভাষাভাষী একাধিক লোকসমষ্টি থাকিলে এইরূপ জীবনধাপনের শিক্ষা ও অভ্যাস ভfল করিয়া হয় । সেই জন্ত, আমরা ভাষা অনুসারে নুতন নুতন প্রদেশ গঠন পছন্দ করি না । কিন্তু যে-ভাষার লোকেরা আবহমানকাল এক প্রদেশবাসী হইয়। অসিতেছে, রাজনৈতিক অভিপ্রায়ে তাহাদিগকে ভিন্ন ভিন্ন ভাগে বিভক্ত করিয়া একাধিক প্রদেশভুক্ত করাও আমরা পছন্দ করিন--আমির তাহার সম্পূর্ণ বিরোধী । ঘদি এমন হইত, বে, বরাবরই মানভূম বাংলা প্রদেশের বাহিরে ছিল, তাহা হইলে আমরা জোর করিয়া বলিতাম না, যে, ঐ জেলাকে বঙ্গের মধ্যে আনিতে হইবে । কিন্তু যে-ধে ভূথও বরাবর বঙ্গপ্রদেশভুক্ত ছিল, তৎসমুদয়কে কেন অন্তপ্রদেশভুক্ত করা হইবে ? আমাদের বক্তব্য এই যে, সাবেক ব্যবস্থা বা অবস্থা অনুসারে হউক, কিংবা নুতন ব্যবস্থা অনুসারেই হউক, ভিন্ন ভিন্ন ভাষাভাষীদিগকে কোন এক প্রদেশভুক্ত হইয়া থাকিতে হইলে, কোন ভাষাতাষীকেই কোন প্রকার অধিকার ও সুবিধা হইতে বঞ্চিত করা অত্যন্ত অন্তায় হইবে । যোগ্যতা ষাঁহাদের সমান, ভাষা ধৰ্ম্ম বংশ জাতি নির্বিশেষে তাহার। সমান সুবিধা পাইতে অধিকারী। যেহেতু কোন বাঙালী বিহার, উড়িষ্যা, আসাম, বা অন্ত কোন প্রদেশের স্থায়ী বাসিনা, অতএব বাঙালী বলিয়াই কেন তাহাকে অসুবিধায় ফেলা হইবে ? বঙ্গের বাহিরের নানা প্রদেশের বাঙালীদের বিরুদ্ধে যেরূপ অভিযানই চলুক, র্তাহারা আপনাদের যোগ্যতা অক্ষুণ্ণ রাখুন, এবং নিজ নিজ শক্তি ও প্রবৃত্তি অনুসারে তারতবর্ষের ও সেই সেই প্রদেশের কল্যাণ করিতে থাকুন।