পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

داناد বাৰু চন্দননগরে অtসিয়াছেন, বকৃত করিবেন, তাহার বক্তৃতা শুনিতে হইবে, এই আশাতে স্থল হইতে বাটতে আসিয়াই বই শ্লেট ফেলিয়া, তাড়াতাড়ি আহার শেষ করিয়া ছুটিলাম পালপাড়াতে । আমি এক ছিলাম না, আমরা একটা দল বাধিয়া বক্তৃতা শুনিতে গেলাম। পালপাড়ার হরিসভা আমাদের বাড়ি হইতে প্রায় আধ মাইল । পালপাড়ায় উপস্থিত হইয়া দেখিলাম, হরিসভার সম্মুখে রাস্তার উপর খুব বড় মেরাপ বাধা হইয়াছে, মেরাপের উপর সীমিয়ানা ঢাকা । রাস্তার উপর দরমা পাতিয়া তাহার উপর সতরঞ্চ মাদুর প্রভৃতি পাতা । এক ধারে স্ত্রীলোকদিগের জন্ত খানিকটা স্থান চিক দিয়া ঘেরা । অপরটি দেখিয়াই মনে হুইল যেন ধত্রিীর অসির । হরিসভার ফটক লতাপুষ্পপত্র দ্বারা সাজান । ফটকের ঠিক সন্মুখে একটা টেবিল ও একথানা চেয়ার, টেবিলের উপর একটা রূপার গ্লাস, নিকটে একটা ছোট টুলের উপর একটা জলের কুঁজা। টেবিলের ডান দিকে ও বা দিকে টেবিল হইতে দুই-তিন হাত দূরে দুই-তিনখানা করিয়া বেঞ্চ পাতা ; সেই বেঞ্চের উপর দশ-পনর জন প্রৌঢ় ও বৃদ্ধ লোক বসিয়া, তিন-চারি জনের স্কন্ধে তানপুব, কাহারও হতে একতারা । জুই জনের কোলে খোল বা মৃদঙ্গ। বক্তার আসন শুষ্ঠ, কেশব বাবু তখনও সভাতে আসেন নাহ, শুনিলাম, তিনি হরিসভার ভিতর বসিয়া আছেন । আমরা যখন সভাক্ষেত্রে উপস্থিত হইলাম, তখন সভা লোকে লোকারণ, কোথাও আর তিলধারণের স্থান নাই। যাহারা আসর বসিবার স্থান পায় নাই, তাহীর বাহিরে দাড়াইয়া আছে । আমরা বালক, আমাদের গতি কে রোধ করিবে ? ভিড় ঠেলিয়া, ধাক্কা দিয়া এবং থাইয়া অবশেষে সেই বেঞ্চের কাছাকাছি গিয়া পহুছিলাম । তখন গায়কগণ চোখ বুজিয়া গান গাহিতেছিলেন এস এস করি সবে নামসঙ্কীৰ্ত্তন। নামসঙ্কীৰ্ত্তন প্রভুর গুণানুকীৰ্ত্তন। cধ নামেতে মত্ত হয়েছিলেন সাধুগণ, শিৰ শুক নারদ অাদি হে, ধ্ৰুৰ প্ৰস্থলজ আদি সবে কে, ইশ, মুসা, মহম্মদ হে, মানক কবীয় জাদি সবে হে— আমাদের বাটতে একথানা “ব্রহ্মসঙ্গীত” ছিল, তাহাতে SN°8支 ঐ গানটি ছিল, সুতরাং গানটা আমাদের একরূপ মুখস্থই ছিল । বারংষার ঐ গানটি গীত হইতে লাগিল । গানটি শেষ হইবার কিছু পূর্বেই কেশৰ বাৰু চারি জন ভদ্রলোকের সঙ্গে সভায় প্রবেশ করিলেন । উজ্জ্বল গৌরবর্ণ, হাসিমুখ, অথচ বেশ গম্ভীর, অদ্ধনিৰ্মীলিত চক্ষু, বেশ সুন্দর গোফ, দাড়ি কামান ; অতি স্বন্দর মুৰ্ত্তি । সাদখুতি, সাদা লংক্লথের পিরাণ, লংক্লথের চাদর । পদে কিরূপ পাদুকা ছিল, তখন দেখিতে পাই নাই, পরে দেখিয়ছিলাম, নাগরা জুতা। র্তাহার সঙ্গে যে চার-পাঁচ জন লোক সভাস্থলে আসিলেন, পরে শুনিয়াছিল;ম, তাহদের মধ্যে শিবনাথ শাস্ত্রী ও নগেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন। নগেন্দ্র বাবুকে পরে আর কখনও দেখি নাই, শাস্ত্রী-মহাশয়ের সহিত পরে পরিচয় হইয়াছিল, সেকথা পরে বলিব । কেশব বাবু সভাক্ষেত্রে প্রবেশ করিয়া উপবেশন করিলেন না, ধীর পদবিক্ষেপে আসিয়া চেয়ারের নিকটে চক্ষু মুদিয়া দাড়াইয়া রহিলেন । গান শেষ হইল, সভা নিস্তব্ধ, সুচিপতনের শব্দ শুনিতে পাওয়া যায় । সকলেই আগ্রহপূর্ণ দৃষ্টিতে কেশব বাবুর মুখের প্রতি চাহিয়া স্থির ভাবে বসিয়া অথবা দাড়াইয়া আছে । কেশব বাবু নতমস্তকে হাতজোড় করিয়া—জানি না কোন অদৃপ্ত দেযতাকে প্রণাম করিলেন এব" টেবিলের উপরে একটা হাত রাথিয়া ধীরে ধীরে বক্তৃতা আরম্ভ করিলেন । তাছার বক্তৃতার প্রথম কথাগুলি এখনও আমার মনে আছে । তিনি বলিলেন, “আমার পিতা পিতামহ প্রভৃতি বৈঞ্চব ছিলেন। কিন্তু লোকে আমাকে বলে ব্রাহ্ম।” তাহার পর কি বলিয়াছিলেন মনে নাই। সেদিন বক্তৃতার বিষয় ছিল “ঐচৈতন্তদেবের ভক্তিমাৰ্গ ।” তের-চৌদ্দ খৎসরের কিশোর আমরা সে বক্তৃতার মৰ্ম্ম কিছুই বুঝিতে পারিলাম না । দেখিলাম, কেশব বাবুর কণ্ঠস্বর ক্রমশঃ উচ্চ হইতে উচ্চতর স্তরে উঠতে লাগিল—সেই বিরাট নিস্তন্ধ সভাক্ষেত্র সেই একটি মানুষের কণ্ঠস্বরে যেন ভরিয়া গেল । কত লোকের চক্ষু হইতে বারিধারা করিল, কেশব বাবুর বক্তৃতার বিরাম নাই, যেন ঝড় বহিয়া যাইতে লাগিল। বক্তৃতা করিতে করিতে পনর-কুড়ি মিনিট অন্তর জল পান করিতে লাগিলেন । তিনি যত বীর জল পান করিলেন, তপ্ত