পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8רצ ভাড়াগাড়ীর মাথায় গুটি-তিন-চার ষ্টীল ট্রাঙ্কের বাক্স, ছোটবড় গুটিকতক পুটলি-পোটলা, এক নাগরি খেজুরগুড়, একটা বড় চাঙাড়িতে বড় বড় কদমা বাতাস এবং আরও বহুবিধ দ্রব্যসামগ্রী সমেত কমলা তাহার পিতৃগৃহে আসিয়া পৌছাইল । এ-বাড়িতে তাহাকে যেন বেমানান দেখায়। সে নিজেও বিস্মিত হইয়া চারিদিকে চাহিতে লাগিল । দীর্ঘ বারো বৎসর সে পিতৃগৃহে আসে নাই । রাশভারি শ্বশুরের বর্তমানে পিতৃগৃহে যাইবার কল্পনামাত্র তাহার কাছে মৃদুর স্বপ্নের মত ছিল । মালতী দোতালার বারান্দায় দাড়াইয়া দেখিতেছিল, তাড়াতাড়ি নামিয়া আসিল । এই তাহার দিদি । অসাধারণ সুন্দরী । কিন্তু গৌরবর্ণ অত্যন্ত পাণ্ডুর । কৃশ দেহরেখা। অবগুণ্ঠনের অন্তরালে মুখখানিতে একটি সলজ্জ দীনতার ভাব। পায়ে আলত । লালপাড়ের একটি শাদা ফরাসডাঙা শাড়ি সাদাসিধা ধরণে পরা । এই বয়সের এমনি অনেক সুন্দরী মেয়েকে মালতী দেখিয়াছে জর্জেট, ক্রেপ সিল্ক পর, উজ্জ্বলতায়, অজস্র হাসি-আমেীদের বস্তায় ভাসমান কিন্তু সে সকলের চেয়ে অন্ত রকম এই স্নান দীননয়না তাহার প্রায় অপরিচিত দিদির পানে একবার চাহিবামাত্র তাহার মনের ভিতর কি রকম করিয়া উঠিল । সে নামিয়া আসিয়া দিদিকে প্রণাম করিয়া উঠিয়া কমলার একটা হাত ধরিয়া ফেলিয়া কহিল, “দিদি এস।” মালতীর পাশের ঘরে তাহার দিদির থাকিবার স্থান হইয়াছে। বহুদিন পরে কমলা অপেন পিতৃভবনে অtসিয়াছে । তাহীকে তাহার মা-বাবা কত দিন নিজের কাছে পান নাই । তাহার বাবা তাহার প্রতি পিতৃকৰ্ত্তব্য পালন করিতে পান নাই, তিনি যখন সুদূর বিদেশে ছিলেন তখন তাহার অজ্ঞাতসারে তাহার প্রাণাধিক কস্তার কোন অপাত্রে বিবাহ হইয়া গিয়াছিল । তাহার মা আপনার স্নেহবুভুক্ষিত অস্তরে কত দিন মেয়েকে টানিয়া লইতে পান নাই । তাই এত দিন পরে সে আসতে সকলেই ব্যস্ত, সকলেই তাহার মুখস্বাচ্ছনা্যবিধানে উৎসুক । তেতালীয় মস্ত খোলা ছাদ । মানের ঘর, পাশাপাশি দুইখানি শয়নকক্ষ এবং ঢাকা বারানা, তেতালার এই দুইখানি পাশাপাশি ঘরে কমলা ও মালতী থাকে। বারান্দার একাংশে at it -ા $ા $N98R সেইখানে বসিয়া মালতী কোন-কোন দিন জ্যোৎস্না-উদাস সন্ধ্যায় কোন নির্জন অপরাহ্লে এস্রাজ বাজায় । রবীন্দ্রনাথের পুনশ্চ, বনবাণী, মহুয়া পড়ে। বারান্দীর অপরদ্ধি কিন্তু সবুজ স্ক্রীন দিয়া আড়াল করা । সেখানে কমলার গৃহস্থালী । রাত্রিবেলায় বুচিকে উঠাইয়া দিতে হয়, নয়ত প্রায়ই সে বিছানা নোঙর করিয়া ফেলে। স্বামী বিজয়নাথের অজি মাস ছয় হইতে শক্ত ম্যালেরিয়া হইয়াছে, কুইনাইন পেটে পড়িবামাত্র বমি আরম্ভ হয়। কীন-দেওয়া এই ঢাকা-বারানায় জলের বালতি, ঘটি গামছা তোয়ালে বেড প্যান সমস্ত সরঞ্জামই রাধিতে झग्न ফুলের টব সাজান । 發 রাত্রি প্রায় দশটা বাজে । মালতী আপন মনে রবীন্দ্রনাথের উৎসর্গ হইতে পড়িতেছিল । মোর কিছু ধন আছে সংসারে, বাকী সব ধন স্বপনে, নিভূত স্বপনে। হে মোর স্বপনবিহারী তোমারে চিনিব প্রাণের পুলকে, চিনিব সজল জাখির পলকে, চিনিৰ বিরলে নেহারি’ পরম পুলকে .*** শরতের সুনীল আকাশে বহু দূর দিগন্ত অবধি মেঘের লেশ নাই, জ্যোৎস্নায় পৃথিবী ভাসিতেছে। নির্জন কক্ষের বাতায়নে বসিয়া তরুণী অপেন মনের ঘনায়মান স্বপ্নের অঞ্জন মাখাইয় পড়িতেছিল, “মোর কিছু ধন আছে সংসারে, বাকী সব ধন স্বপনে, নিভৃত স্বপনে ।” তখন পাশের ঘরের একাংশে সংসারের সুখ-দুঃখ লইয়া যে আলোচনা হইতেছিল সেখানে স্বপ্নের ঘোর মাত্র ছিল না । কমলার স্বামী বিজয়নাথ বলিতেছিল, “কালকে মাসের পয়লা, অগস্ত্যযাত্রা যেতে নেই। তাঁর পরের দুটো দিন অশ্লেষা, মঘা, তাও বাদ গেল । তার পরে ৪ঠা কাৰ্ত্তিক আমাকে যেতেই হবে।” কমলা নতমুখে কহিল, “কাৰ্ত্তিক মাসে ওখানে ঘরে ঘরে ম্যালেরিয়ায় পড়ে আছে সবাই । এ-সময়ে ওখানে নাই বা গেলে । তা ছাড়া মা বাবা যখন এত ক’রে বারণ করছেন।” “তোমার মা বাবার কি বলো, সংসারে কোন অভাব নাই, অনটন নাই। পাথার হাওয়ার তলায় দিব্যি আছেন ।