পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জ্যৈষ্ঠ কোলেই ঘোরে, হামাগুড়ি দিয়াও যাইতে পারে না । সেই সোনা বড় হইল, চলিতে শিখিল, বর্ণপরিচয়ের পাতার উপর চক্ষু বুলাইয়া বর্ণের সহিত পরিচিত হইবার চেষ্টা করিতে লাগিল। ইহার মধ্যের ইতিহাসে আর নূতন কিছু ঘটা উঠে নাই। নুতন কিছু যখন ঘটিয়া উঠিল তখন সোনার বয়স পাচ এবং বিভূতির দ্বিতীয় পুত্ৰ শুভক্ষণে পৃথিবীর আলোতে আসিবার জন্ত অপেক্ষা করিতেছে । এই ছেলেটি আসিতে আসিতে যখন আসিয়া পৌছিল, তখন ইংরেজ-জাৰ্ম্মানের যুদ্ধটা বেশ জমিয়া উঠিয়া পৃথিবীর খাদ্য-অখাদ্য সব জিনিষের দর চড়াইয়া আগুন করিয়া তুলিয়াছে। গ্রামের লোকের শহরবাসিগণের অপেক্ষা দয়াত্র এবং অতিথিবৎসল, না খাইয়াও ভিক্ষা দিয়া বসে, তাই দুর্ভিক্ষ সহজে বলা যায় না, কিন্তু এবার সত্যই দুভিক্ষ আসিল । বিভূতির সংসারে তখনও অনটনের সাড়া উঠে নাই, কিন্তু এ ছেলেটি যে অমঙ্গলের বাহন তাহা মা হইয়াও বিন্দু মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করিল। আর-বছর ক্ষেতে ভাল ফসল হয় নাই ; এ-বছর দোকানে ত এক রকম বিক্রি নাই বলিলেই হয় । মোট কথা, হরনাথের সঞ্চিত অর্থে এইবার হাত পড়িল ৷ সঞ্চিত অর্থ বলিতে অবশু বিশেষ কিছু নয়, অস্ততঃ বাপ বাচিয়া থাকিতে বিভূতি যাহা ধারণা করিয়া রাখিয়াছিল তাহাও নয়। বিভূতি হিসাব করিয়া দেখিল, হরনাথের সম্পন্ন বলিয়া গ্রামে যতখানি নামডাক ছিল, সেঅনুপাতে সঞ্চয় সে বিশেষ কিছুই করিয়া যাইতে পারে নাই । গোলাতে ধান কিছু মজুত ছিল সতী, কিন্তু তাহা এমন কিছু নয় ; একটা ছঙিক্ষ অথবা দুই-এক বছরের ইংরেজ-জাৰ্ম্মানের লড়াই গোলাকে নিঃসন্দেহ ফতুর করিয়া দিতে পারে এবং তাহাই দিল । দোকানের অবস্থাও অচল হইয়া উঠিয়াছে । জলটুঙ্গি গ্রামে হীর বিশ্বাস নামে এক জন লোক আর একখানা মুদির দোকান খুলিয়া বসিয়াছে এবং ধারে-নগদে দেদার মাল ছাড়িতেছে বলিয়া থfরদারের দল সেই দিকেই ঝুঁকিয়া পড়িয়াছে। বিভূতির দোকানে নেহাৎ যার আসা বন্ধ করে নাই, তাহারাও ধার চায় । নগদ পয়সার কারবার গুটাইতে বসিয়াছে দেখিয় বিভূতিও হাত গুটাইল । সেদিন সকাল হইতে দোকান আর খুলিল না । সক্স্যাসযোগ SS(t বিন্দু এখন আর ঘোমটা-টানা কচি বৌটি নাই। বিশ বছর পার হইতে-লা-হইতেই সে দুই ছেলের মা এবং একটা সংসারের গৃহিণী হইয়াছে। ঘোমটা নামিয়াছে, মেজাজ চড়িয়াছে। বিভূতি দোকান আর খুলিবে না শুনিয়া বলিল, ‘দোকান তুলে দিলে ত খাবে কি ? বিভূতি উত্তর দিল, “জমিতে নিজে চাষ দেৰ । বিন্দু মুখ বাকাইয়া বলিল, তা হ’লেই হয়েছে, সাতকুড়ের এক কুড়ে—ছিল দোকানখানা, তাও গোল্লায় fèqwī-' বিভূতি চুপ করিয়া বসিয়া রছিল । দারিদ্র্যের এই একটা মস্ত বড় দোষ ষে যখন আসে পূৰ্ব্বাহ্নে জানাইয়া আসে না । মাকুব যদি আগে হইতে ङग्नांग्नौ श्हेवांद्र श्रुां* श्रीब्र, उांश इहेण श्ब्रड धूव बफ़ দুর্ভাগ্যও তাহার নিকট সহজ হইয়া আসে । বিভূতির সংসারে দারিদ্র্য আসিল । ক্ষেতের ফসল ভাল হয় নাই। হরনাথের সঞ্চিত যাহা-কিছু ছিল তাহ পূর্বেই নিঃশেষ হইয়াছে। ধার পাইবার জো নাই এবং করিবারও সাহস নাই । বিন্দু এই ক-মাসে আরও খিটখিটে হইয়া উঠিয়াছে। তাহার সে শ্ৰী আর নাই । রং কালো হইলেও বিন্দুর মুখশ্ৰী ষে কুৎসিত ছিল না তাহা কেহই অস্বীকার করিত না, কিন্তু এই ক-মাসে সেই লাবণ্যের উপর ষেন প্রৌঢ়তার ছাপ পড়িয়া গেল । সংসারের দারিদ্র এবং বিভূতির কৰ্ম্মহীনতা বিন্দুর মুখের বাধ খুলিয়া দিয়াছে। সেদিন সকালে বলিল, “জমিতে চাষ দিয়ে কি লাভটা হ’ল শুনি ?” বিভূতি কথাবার্তা চিরদিনই কম কহিত। উত্তর দিল না । কথার উত্তর না পাইয়া বিন্দুর রাগ আরও চড়িল, বলিল, "ছেলে দুটোকে নিয়ে কি এখন উপোষ করতে বল নাকি ? বিভূতি মুখ খুলিল, বলিল, উপায় যদি না থাকে ত করতে হবে বইকি ?” বিন্দু বলিল, “উপায় সকলেরই থাকে, কিন্তু সে উপায় আমার নেই বলেই বাধ্য হয়ে আমায় এখানে পড়ে থাকতে হযে আর তোমাকেও বলতে হবে ।"