পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

• ਟੋਲਹੋਏ খুশী মনে গ্রহণ করে । দরকার পড়লে কখনও কখনও দু-চারটে জিনিষ ফরমাসও করে। দিতে গেলেও সুহৎ দাম নেয় না । হেসে বলে, বিলক্ষণ! তোমার কাছ থেকেও দাম নেব? খাচ্ছি কার ? এমনি ক’রে এক পক্ষের ঔদাসীন্ত সত্বেও সুহৃৎ তার পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতার একটা যোগস্থত্র রেখেই চলেছে । সে শুধু অবাক হ’ল এই ভেবে যে, নিখিলের বিরুদ্ধে সে সাক্ষ্য দিতে পারে এমন কথা লোকে ভাবলে কি ক’রে ? নিখিলদের কাছে তার কৃতজ্ঞতার ঋণের কথা গ্রামের কোন লোকটা না জানে ? সুহৃৎ আপন মনেই হসিলে—হঃ ! গৃহিণী বললেন—তুমি বাপু ওসবের মধ্যে থেক না । পরের নেঞ্জীর নিয়ে চাকরি থেtয়ালে তো চলবে না ! মৃহৎ উঠতে উঠতে বললে—পাগল । ব্যাপারটা এই প্রকার : নিখিলের বড় মেয়েটি অনেক দিন পরে সম্প্রতি শ্বশুরালয় থেকে এসেছে। পাড়ার আর ক'টি সমবয়সী মেয়ের সঙ্গে সে চলেছিল ওপাড়ায় এক বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করতে । পঞ্চু কামারের বাড়ির পেছন দিয়ে যে সরু পথ জঙ্গলের মাঝ দিয়ে গেছে মেয়েদের এপাড়া-ওপাড়া করার পক্ষে সেইটিই সুবিধাজনক । সেই রাস্তার ধীরে পঞ্চুর পাচিল-লীগাও যে আমগাছটা, এবারে সেটায় অজস্র আমি এসেছে । দেখে নিখিলের মেয়ের লোভ হয় । টিল ছুড়ে গোটাকতক আমি সে পাড়ে । গাছটা কামারদের । চিল ছোড়ার শব্দ পেয়েই পঞ্চুর স্ত্রী নেপথ্য থেকেই তাদের কতকগুলি শ্রুতিকটু সম্বোধন করে । নিখিল এ গ্রামের দশ আনার জমিদার। তার মেয়ে ভাবে তার গলার সাড়া পেলে পঞ্চুর স্ত্রী নিশ্চয় থামবে। এই ভেবে সে বলে-আমি গো কামার-খুড়ী ! তোমার গাছের একটা আমি পড়িলাম । কিন্তু কামার-খুচী সহজে বিগলিত হবার মত মেয়েই নয়। সে নেপথ্য থেকেই মুখ ভেংচে বলে, তবে আর কি । কামার-খুড়ী লগ গে গেছে ! মুখপুীদের মরবার জায়গাও নেই ? কৃতজ্ঞতার বিড়ম্বন৷ ఇరిది নিখিলের মেয়ে স্নেহ-সম্ভাষণের উত্তরে এই কট,ক্তি পেয়ে বিরক্ত হয় । বলে, আ মোলো । এ মাগী তো ভারি দজ্জাল দেখছি । আর বাবে কোথায় ! কামার-খুড়ী বেরিয়ে এসে এমন গালাগালি দিতে লাগল সে গাল কানে শোনা যায় না । এ গ্রামে সে একটা ডাকসাইটে মেয়ে । তিন- দিন ধরে অনর্গল গলি দিয়ে যেতে পারে । দম নেবার জন্তেও এক মিনিট থামবে না । তার মুথের তোড়ে ওরা দাড়াতে পারে ? ওরা রণে ভঙ্গ দিয়ে পালিয়ে বঁচিল । আর কামার-খুড়ী ছ-ঘণ্টা ধ’রে সেইখানে দাড়িয়ে ওদের উৰ্দ্ধতন এবং অধস্তন চতুর্দশ পুরুষকে নরকের বিভিন্ন স্থানে পাঠাতে পাঠাতে পাড়া মাথায় তুললে । নিখিল কি একটা কৰ্ম্মোপলক্ষে বাইরে গিয়েছিল । রাত বারোটার সময় ফিরে এসে সমস্ত শুনে রাগে গুম হ’য়ে বলে রইল, মুখে কিছু বললে না। সকালে উঠেই হারাধনকে হুকুম দিলে, পঞ্চ, কামারকে যেখানে পাস সেখান থেকে ধ’রে নিয়ে আয় । হারাধনও তাই চায়। বিছানা থেকে আধ-বুমস্ত অবস্থায় পঞ্চ কে সে তুলে নিয়ে এসে কাছারীতে ফেললে । তার পর একটা থামে বেঁধে চাবুক দিয়ে প্রহার আরম্ভ করলে । সে প্রহার এমনই অমানুষিক যে, মুহৎ ঠিকই বলেছে, সে না থাকলে পঞ্চু খুন হ’য়ে যেত । ভেবে দেখতে গেলে পঞ্চু এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ নির্দোষ । জমিদারের মেয়েকে সে নিজে গালাগালি দেয় নি, স্ত্রীকেও গালাগালি দেওয়ার জন্তে উৎসাহিত করে নি। বস্তুত পক্ষে এ-ব্যাপারের কিছুই সে জানত না । সেও পেটের ধাক্কায় বাইরে কোথায় গিয়েছিল । রাত্রে ফিরে এসে দুটি খেয়ে নিয়ে গুয়ে পড়ে । তার স্ত্রীও ব্যাপারটাকে তার নিত্যকৰ্ম্মের ভগ্নাংশ হিসাবে মেনে নিয়ে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয় নি। স্বামীকেও জানানোর প্রয়োজন মন করে নি । পষ্ণু যখন প্রহার-যন্ত্রণায় আৰ্ত্তনাদ করছে তখনও পর্যাপ্ত জানে না, কেন এ শাস্তি । তা সে জানুক আর না জামুক, পৃথিবীতে এ রকম ঘটনা কিছু বিরল নয় । স্বামীর অপরাধে স্ত্রীর কিংবা স্ত্রীর অপরাধে স্বামীর, পিতার অপরাধে পুত্রের কিংবা পুত্রের