পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈশাখ কাব্য সাহিতাকে ইতারা পরিপুষ্ট করিয়াছেন। তঁহীদের বিস্তারিত বর্ণনা করিত গেলে বিরাট গ্রন্থ হয় । মূল কথা আমরা দেখিতে পাই শ্রীচৈতন্তযুগে শ্রীচৈতন্যের নির্দেশে উড়িষ্যার বিভিন্ন স্থানে তাহারা প্রচারকেন্দ্র বা মঠ স্থাপন করিয়াছিলেন ? গোলকরতাল-সহযোগে কীৰ্ত্তন করিয়া ধৰ্ম্মপ্রচার করিয়া গিয়াছেন—সৰ্ব্বসাধারণের ভিতর— সমাজের নিম্নতম স্তরও বাদ যায় নাই । বাংলার বৈষ্ণবেরা তাহদের জ্ঞানমিশ্র ভক্তির প্রচারক বলিয়া অবজ্ঞা করেন এবং কোনও প্রত্নতাত্ৰিক বা ঐতিহাসিক তঁহাদিগকে প্রচ্ছন্ন বৌদ্ধ বলিয়া ঘোষণা করিতে কুষ্ঠিত হন নাই। শ্ৰীকৃষ্ণচৈতন্তই স্বয়ং জগন্নাথদাসকে অতি-বড় আখ্যা দিয়াছিলেন এবং কি উৎকলে কি অস্তম্ভ দেশে তিনি অতি-বড় গোসাই বলিয়া পরিচিত। সপ্তদশ শতকের উৎকলীয় কবি ও জীবনীলেখক শ্ৰীজগন্নাথ-শিষ্য দিবাকর দাস র্তাহার শ্ৰীজগন্নাথচরিতামৃতে উল্লেখ করিয়াছেন বে, এই অতি-বড় আখ্যা দেওয়াতে উৎকলী ও গৌড়ীয়দের মধ্যে বিদ্বেষ ঘটে। এমন কি কতকগুলি শ্ৰীকৃষ্ণচৈতন্তর গৌড়ীয় ভক্ত ও শিষ্য নীলাচলধাম ত্যাগ করিয়া যাজপুরে চলিয়া যান। স্বয়ং মহাপ্রভু শ্ৰীকৃষ্ণচৈতন্ত জগন্নাথদাসকে মঙ্গে লইয়া তথায় যান এবং দুই দলকে মিলন-বন্ধনে আবদ্ধ করিতে চেষ্টা করেন। কিন্তু তাহা নিফল হইল। এই অভিযোগ সত্য কি মিথ্যা বলা বড় শক্ত। তবে শুধু এক দেবকীনন্দ দাস ব্যতীত আর কেহ ইহাদের নামোল্লেখ করেন - नश्-िश्रुता। কি আশ্চৰ্য্য নয় ? উৎকলের ভাবধারায় যাহারা শুধু রাজা নয়, সম্রাটু—াহীদের জীবন অলৌকিক, যাহার নীজে মহাপ্ৰভু চৈতন্যের প্রভাব শুধু স্বীকার করেন উড়িষ্যায় স্ত্রীচৈতন্ত্য S নাই, মান্ত করিয়াছেন, আজও ধাহীদের বিভিন্ন সম্প্রদায় শ্ৰীচৈতন্যের নামে মস্তক নত করে—তাহীদের কথা বাংলার বৈষ্ণব মহাজনের আদৌ উল্লেখ করেন নাই, তাহারই বা কারণ কি ? বাস্তবিক ইহীদের জীবনকথা, শ্ৰীকৃষ্ণচৈতন্যের সহিত র্তাহীদের মিলন ও প্রচার প্রভৃতি শ্রীচৈতন্তলীলারই অঙ্গীভূত। শ্রীচৈতন্যের জীবনীগ্রন্থে তাহার উল্লেখ না থাকিলে তাহ অসম্পূর্ণই রহিয়া যায়। " নীলাচলে এখনও শ্রীচৈতন্যের স্মৃতিচিহ্ন জলস্তভাবে দীপ্তি পাইতেছে। সম্প্রতি শ্ৰীমন্দিরের অস্তুবেষ্টনীতে অর্থাৎ ভিতর-বেড়ায় ঈষৎ উত্তরপূৰ্ব্ব কোণে র্তাহীর মনির আবিষ্কৃত হইয়াছে—যে বেষ্টনীর ভিতরে এক দেবদেবী মুপ্তি ছাড়া অপর কোনও ধৰ্ম্মাচাৰ্য্য বা অবতার পুরুষের স্থান পান নাই । কিন্তু দুঃখের বিষয়, বর্তমান সেবার তত্ত্বাবধানকারিগণ গৌড়ীয় বৈষ্ণবরা র্তাহার বিগ্রহে রং দিয়া এবং বেশভূষায় সম্পূর্ণ রূপান্তর ঘটাইয়াছেন—যেমন এই মহাপুরুষকে জীবনলীলায় তাহার করিয়াছেন । নবাবিষ্কৃত মন্দিরের কাঠময় মুৰ্ত্তি যোগারূঢ় পদ্মাসনে আসীন ধ্যানস্তিমিতলোচনে করঙ্গপ করিতেছেন—বেন এমন্দিরের শীর্ষদেশের দিকে তাকাইয়া রহিয়াছেন এবং বলিতেছেন প্রাসাদাগ্র নিবসতিপুর ক্ষেয় বক্তারবিন্দো মামালোকা-স্মিত সুবদনে বালগোপাল মূৰ্ত্তি । অনন্তের কোন রসমুত্তি বিগ্রহের লীলা নীলাম্বুধির গভীর গর্জনের তালে তালে নৃত্য করিতেছে কে জানে ? আজও নীলাচলে শ্ৰীকৃষ্ণচৈতন্যর রসমাধুরী নীলাম্বুর জনস্ত প্রবাহে মিশিয়া অপূৰ্ব্ব প্রেমঘন মুৰ্ত্তি ধারণ করিয়া প্রেমের তরঙ্গে ভাসিতেছে । জগতে কি তাহার তুলনা আছে ?