পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ওই डॉब्र বাড়ি,— —ঐ যে ঘেরিয়া আছে রাংচিতার সারি আঙিনার সীমা । এককোশে কয়েকটি কলাগাছ। অন্তধারে শিম বরবটি ছড়াইছে ডালপালা বাশের মাচায় । সায়াহের কুমন্থর বাতাসে নাচার তার তাজা ডগাগুলি । পরিপুষ্ট শুম সঘন পল্লব শোভা নয়নাভিরাম । তারি পাশে খুটিবাধা দেখার গাভীর স্বচিঙ্কণ শুভ্ররোম স্থূলকাস্ত স্থির ছবিখানি । মাতা মুখে থায় তৃণজল, কাছে আছে দাড়াইয়া বৎসটি কোমল ; মাঝে মা এক-একবার অঙ্গ তার চাটে, দুধ খেতে খেতে বৎস গু"তে মারে বাটে । পিতলের ঘটি এক কুয়োতলাপাড়ে, বালতি দড়িতে বাধা, শুখাইছে আড়ে বেলাশেষে ধুয়ে-দেওমা শাড়িথানি কার,— জল জল করে তার গাঢ় কালো পাড় । উঠানের মাঝখানে এক মোড়া ধান, পাররা শালিখ করি তণ্ডুল সন্ধান পায়ে পীয়ে ঘোরে ফিরে গ্রীবা বাড়াইয়া ; গৃহদ্বারে পিঙ্গুরেতে পোষমান টিয়া । খড়কুটাে ঠোঁটে তুলি ব্যস্ত টুনটুনি করে শুধু ঘর-বার । টলের ছাউনি, কঁাচ ভিৎ বাস্তু-ঘর । বtধানে সি“ড়িতে সাজানো ফুলের টব, দুয়ার শোভিতে লতার কেয়ারি-তোলা অৰ্দ্ধচন্দ্রাকার ; কানাচ করেছে আলো মল্লিকার ঝাড়"। প্রায়-ই থাকে পশ্চিমের জানালাটি খোলা, কল্যাণী ঐসুধীরচন্দ্র কর ওই দিকে চলে গেছে রিক্ত পথভোলা ধূসর বিস্তীর্ণ মাঠ ; দিশ্বলয়-সীমা বহুদূরে ছুঁয়ে আছে পিয়াসী নীলিমা । পায়ে-চলা পথখানি পড়িয়া অদূরে, মাঝে মাঝে কেঁপে ওঠে মেঠো বাশিহুরে । রক্তচ্ছায়া সন্ধ্যারবি ধীরে অস্ত যায়, ব্যথাতুর আলোরেখা পড়ে জানালায়— দেখা দেয় একখানি কম কচি মুখ,— তারি মাঝে ভাসে সেথা একান্ত উৎসুক টান দুটি কালো চোখ নিমেষবিহীন, দিনাস্তেরি সাথে যেন হ’তে চায় লীন চিরপরিসমাপ্তির নৈঃশব-পাথরে । গৃহকাজে টানে মন,–তবু বারেবারে চায় ফিরে । শেষে উঠে দেয় ঘর বাট,— শুকানো কাপড়গুলি ক’রে রাখে পাট । গাছে ঢালে জল, নেয় গাভীটি গোয়ালে ; দু-চারিটি পত্রপুপ একখানি থালে সাজাইয়া রাখে যত্নে বসিবার ঘরে, জালে সন্ধ্যাধুপদীপ, যার তার পরে পাকশালে, প্রবীণা গৃহিণী মীর সাথে অল্পক্ষধা আয়োজনে লাগে হাতে হাতে । ক্রমে রাত্রি বেড়ে ওঠে, চোকে খাওয়া দাওয়া, কাজে কাজে কাটে কাল ; অন্ধকার-ছাওয়া আঙ্গিনাটি পার হয়ে শয়নমন্দিরে যায়, শয্যায় আশ্রয় লয় ; পাশ ফিরে বৃদ্ধ পিসি গুঞ্জস্বরে জোড়ে আলাপন – ক্লাস্তি নামে সারা দেহে, ঢোলে ছন্নয়ন,— কত কী মনের কথা জ’মে হয় ভারী— প্রদীপ নিভায়ে দিয়ে ঘুমায় কুমারী ॥