পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৬ চাহিল। অবশেষে তিনি এংলো-ইণ্ডিয়ান পল্লীতে খোজ করিলেন এবং মিসেস উডের বাংলোখানি দেখিয়াই পছন্দ করিলেন। বাংলোটির বর্তমান মালিক মিষ্টার পিটার ইহার ষে ক্ষুদ্র ইতিহাস দিলেন তাহ যেমনি করুণ তেমনি মৰ্ম্মস্পর্শী। মিষ্টার উড সৈন্ত-বিভাগে মেজর ছিলেন। অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে তিনি প্রথমে স্বাস্থ্য ক্রমে চাকরি এবং অবশেষে জীবন হারান। মিসেস উডের পুনরায় বিবাহ করিবার মত বয়স রূপ ও অর্থ ছিল ; তাহার পাণিপ্রার্থীরও অভাব ছিল না, কিন্তু নিজের অবশিষ্ট জীবন তিনি দানধ্যান ও ধৰ্ম্মচর্চায় অতিবাহিত করেন । ত্রিশ বৎসর বয়সে তিনি বিধবা হন ; ইহার পরে তিনি আরও পঞ্চাশ বৎসর বাচিয়াছিলেন । এই দীর্ঘকাল ব্যাপিয়া তিনি কোন আমোদ-প্রমোদে যোগদান করেন নাই, কাহারও সহিত যাচিয়া বাক্যালাপ করেন নাই। এক কথায় বলিতে গেলে অৰ্দ্ধশতাব্দী ব্যাপিয়া এই শ্বেতকেশী শ্বেতবস্ত্রা শ্বেতকায় নারী মূৰ্ত্তিমতী জর দুঃখ ও নির্জনতার প্রতীকের মত ‘লো লাইনস-এর নিম্ববৃক্ষ-সমাকুল রাস্তায় রাস্তায় ছাটিয়া বেড়াইতেন। একদিন ভোরে সকলে গিয়া দেখিল বৃদ্ধা নিজ শয্যায় প্রাণহীন হইয়া পড়িয়া আছেন। মিষ্টার পিটার ব্যবসায়ী লোক ; তিনি পূৰ্ব্বেই বাংলোখানি সস্তাদামে কিনিয়া লইয়াছিলেন । বৰ্থন জানিলেন বাবু মুখেঞ্জলাল স্থায়িভাবে বসবাস করিবার জন্ত একটি বাড়ি খোজ করিতেছেন, তিনি নানা ভণিতা করিয়া অতি সস্তপণে বদ্ধদ্বারগবাক্ষ বাংলোটির সম্মুখের দরজাটি খুলিলেন। অন্ধকার অল্প-পরিসর হল" ধরে আলোক প্রবেশ করিতেই মুখেঞ্জলাল বাবুর মনে হইল যেন তিনি এক রহগুলোকে প্রবেশ করিলেন । ঠিক সন্মুথে কণ্টক-কিরীটধারী যীশুখ্রষ্টের ক্রুশবিদ্ধ মূৰ্বি, দক্ষ চিত্রকরের নিপুণ তুলিকাপাতে যীশুর মুখে ষে করুণ উজ্জ্বল ভাব ফুটয় উঠিয়াছে তাহার তুলনা নাই। গ্রীবাদেশ হইতে মস্তক একদিকে হেলিয়া পড়িয়াছে ; দুইদিকে দুই কুদর্শন তস্করের মুৰ্ত্তি। কবে কোন যুগে বেথেলুহেমের কোন অশ্বশালায় কুমারী মাতার গর্ভে জন্মিয় যে মহামানব পৃথিবীর ছঃখ-দৈন্তকে আপনার স্কন্ধে লইয়া আপামর সাধারণে প্রেম ও মঙ্গল বিতরণ করিয়াছিলেন SN28 তাহার দেবত্ব হয়ত গবেষণার বিষয়, তাহীর জীবনের অলৌকিক কাহিনী হয়ত প্রমাণযোগ্য নহে, তাহার প্রচারিত ধৰ্ম্ম হয়ত আর নরনারীর মনে ভক্তির আলোড়ন উপস্থিত করে না, কিন্তু যে প্রেম, মৈত্রী ও ভালবাসার তিনি প্রতীক, দুই সহস্ৰ বৎসর কুশবিদ্ধ হইয়াও তাহা মনে নাই। সুখেঞ্জলাল বাবু দেখিলেন মহাত্মার প্রতি অঙ্গ হইতে যেন উহার জ্যোতি বিচ্ছুরিত হইয়া জগতকে ধ্বংশ হইতে রক্ষা করিতেছে । বাম দিকের দেওয়ালে মেরী মাতার ছধি। অনুদ্ধত কমনীয় নাসিকা ও লঘুক্ষুদ্র ওষ্ঠপুটে জগতের যত নির্দেষিতা পুঞ্জীভূত হইয়া আছে। এ মুৰ্ত্তি দেবীর না মানবীর বলা চলে না ; বোধ হয় অম্লান শুভ্রতার কিংবা অনবদ্ধ পবিত্রতার, ডান দিকের দেওয়ালে যীশুখ্রীষ্টের আর একখানি আবক্ষ মুৰ্ত্তি । ইহা ভিন্ন দেওয়ালের বিভিন্ন স্থানে "শেষভোজন ও বিভিন্ন সেন্ট দিগের ছবি। তিনখানি ক্ষুদ্র টেবিলে সামুদ্রিক শস্থ, ঝিনুক ও শু,পীকৃত ক্রিষ্টমাস কার্ড ; অত্যন্ত সযত্বে রক্ষিত, উহারা বৎসরের পর বৎলর স্বৰ্গত বুদ্ধার জীবন-ইতিহাস লিপিবদ্ধ করিয়া রাধিরাছে। কত মঙ্গলাকাঙ্কণ, কত শুভেচ্ছ, কত ভালবাসা তাহার বেীবনকে প্রৌঢ়ত্বে এবং প্রৌঢ়ত্বকে বাৰ্দ্ধক্যে ও অবশেষে মৃত্যুতে পৌছাইয়া দিয়াছে । মিষ্টার পিটার ও বাবু মুখেভ্রলাল শয়নঘরে প্রবেশ করিলেন । সেখানেও বহুবিধ ছবিতে দেওয়াল শোভিত । কিন্তু সকলের চেয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে আদি-দম্পতির একখানি অনতিবৃহৎ তৈলচিত্র। ইডেন-উদ্যানে আদিজনক এডাম সঙ্গিনী ইভকে ডাকিতেছে। জ্ঞানবৃক্ষের ফলস্বাদনে সদ্যবুদ্ধিশালিনী আদিজননী বৃক্ষাস্তরালে দেহ স্থাপন করিয়া বলিতেছেন—তিনি উলঙ্গ । পুথিবীর প্রথম মানবের মুখের সেই অপূৰ্ব্ব বিস্ময় আর নবোন্মেষিণী বুদ্ধিবৃত্তির সেই ঈষৎ স্ফুরণ অবর্ণনীয়। অথেন্দ্রলাল বাবু মোহিত হইলেন। বৃদ্ধ মিলস উডের মৃত্যুর পর একটি দ্রব্যও স্থানান্তরিত হয় নাই। র্তাহীর সুনিপুণ হস্তের স্বগৃঙ্খলা চতুরিকে হস্পষ্ট। শয়ন-গৃহের দুইটি খাটের মধ্যে একটি রীত্রিতে ব্যবহৃত হয় বলিয়া বোধ হইল ; তাহীতে তখনও বিছানা মশারি ইত্যাদি রহিয়াছে। মিষ্টার পিটার