পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৮ ছিল ৰে গুইরা চাহিয়া থাকিলে দৃষ্টি একেবারে সম্মুখের আদি-দম্পতির চবিধানির উপরে পড়ে। ঘরে আর কোন আলো ছিল না ; শুধু ছবিধানির সম্মুখে স্থাপিত ক্ষুদ্র দীপাধার হইতে নির্গত অগ্নি-শিখ ছবিখানিকে আলোকিত করিতেছিল। বাবু মুখেম্রলাল বাইবেলের গল্প জানিতেন। ভগবান মানুষ স্বষ্টি করিলেন, তাহার কোন সঙ্গী ছিল না, তিনি অনুগ্রহ করিয়া তাহারই পঞ্জরের একখানি অস্থি লইয়া নারী স্বাক্ট করিলেন এবং অদিমানবকে কহিলেন, এই নারী তোমার সাথী ; রক্তে মাংসে অস্থিতে এ ও তুমি এক ; প্রজা স্বষ্টি কর ও বদ্ধিত হও । তিনি নিজে কি ভগবানের এই বাণী গ্রহণ করিয়াছেন, এই আদেশ প্রতিপালন করিয়াছেন ? র্তাহার এই সুদীর্ঘ কৰ্ম্মজীবনের ফল কি, পরিণতি কি ? একদিন যখন মিসেস, উডের মত তিনিও এই শয্যায় মরিয়া কঠিনশীতল মাংসস্তুপ হইয়া থাকিবেন তখন কি আদি-দম্পতি র্তাহার দিকে চাহিয়া বলিতে থাকিবে না, ‘তুমি পাপী, তুমি আত্মপরায়ণ, তুমি ভগবানের আদেশ মান নাই । আমরা একদিন স্বষ্টির প্রথমে যে প্রাণের প্রদীপ জ্বালাইয়াছিলাম তাহা তুমি অনিৰ্ব্বাণ রাখ নাই।’ 疊 骨 骨 擊 জ্যোৎস্নালোক মান হইয়া উঠিয়াছিল। রাত্রিশেষের অন্ধকারকে ‘জরগু-বক্ষাবলম্বী কুয়াসাপুঞ্জ একেবারে পাণ্ডুর করিয়া তুলিয়াছিল। নিশাচর পশুপক্ষী আত্মগোপন করিয়াছে কিন্তু দিবাচরেরা তখনও সুপ্ত । রাত্রির নিঃশেষ মৃত্যু হইয়াছে কিন্তু দিবসের জন্ম হয় নাই। মুখেভ্রলাল বাবু চিরকালের অভ্যাসমত দরজা জানালা খোলা রাখিয়া শুইতেন । তিনি স্পষ্ট দেখিতে পাইলেন তাহার বাংলোর পশ্চাৎ দিক দিয়া ‘জরও পার হইয়া নিম্ববৃক্ষচ্ছায়াআচ্ছাদিত যে রাস্তা ষ্টেশনের দিক হইতে আসিয়াছে সেই রাস্ত দিয়া আপাদমস্তক শ্বেতবস্ত্র-পরিহিত এক রমণীমুৰ্বি বাংলোর দিকে আসিতেছে। রমণীর গায়ের রং এত ফস ছিল যে, পরিহিত বস্ত্রের সহিত কোনরূপ পার্থক্য দৃষ্ট হুইতেছিল না । হঠাৎ তাহার সন্দেহ হইল এ মানবী কি না ? কুয়াসস্তিরের পশ্চাতে বলিয়া তাহাকে অত্যধিক লম্বা দেখাইতেছিল এবং আলোকের অল্পতাহেতু তাহার P৫:প্রবাসী ৫9 SN88R বহিরবয়ব-রেখা অস্পষ্ট হইয়া উঠিয়tfছল । চাকরকে ডাকিবেন কিনা ভাবিতে লাগিলেন। এমন সময় অদূরস্থিত গির্জ হইতে ঢং ঢং করিয়া প্রাতঃকালীন ঘণ্টা বাঞ্জিতে লাগিল এবং রবার্ট ডাকিতে লগিল, ‘বাবু মুখেক্রলাল বেড়াইতে যাইবার সময় হইয়াছে।’ সমস্ত দিন ব্যাপিয়া মুখেঞ্জলাল বাবুর মনে উষাকালে দৃষ্ট স্বপ্নের কথা জাগিয়া রহিল। বৃদ্ধ মিসেস উড, কি তাহাকে স্বপ্নে দেখা দিয়াছেন, তিনি তাহাকে কিছু বলিতে চান ? একবার মনে হইল বাংলোটি হয়ত ভূতের বাড়ি ; প্রতি রাত্রে হয়ত মিসেস উডের প্রেতাত্মা এখানে ঘুরিয়৷ বেড়ায় | মানুষ যখন বহুদিন যাবৎ একই আবেষ্টনীর মধ্যে বসবাস করিতে থাকে তাহার চিন্তাধারা সেই পারিপাশ্বিকের সঙ্গে মিলিয়া মিশিয়া সহজ হইয়া থাকে ; হঠাৎ কোনরূপ আকস্মিকতা দ্বারা উহা বিব্রত হর না । সুদীর্ঘ কৰ্ম্মণীবনের সোজা পথ ধরিয়া মুখেঞ্জলাল বাবুর দিনগুলি নিত্যনৈমিত্তিক কাৰ্য্য-ধারার মধ্যে ফুরাইয়া যাইত। কোনকালে তাহাকে যে চাকরি ছাড়িয়া কৰ্ম্মহীন অলস জীবন কাটাইতে হইবে তাহা তিনি ভাবেন নাই। কিন্তু আজ হঠাৎ এই বিদেশে তিনি নিজকে নিতাস্ত অসহায় মনে করিতে লাগিলেন । ভবিষ্য-জীবনের চিস্তা তাহাকে বিব্রত করিয়া তুলিল। স্ত্রী-পুত্র-পরিবারের মুগু আকাঙ্ক তাহার মনোমধ্যে জাগিয়া উঠিল। নিজকে তিনি অতি করুণার চক্ষে দেখিলেন, পৃথিবী ব্যাপিয়া পশু-পক্ষী কীটপতঙ্গ আপনাকে স্বষ্টি করিয়া চলিয়াছে—ভগবানের রাজত্বে মৃত্যু নাই ; আর তিনি নিজে কি করিলেন। বিশেষ করিয়া তিন হাজার টাকা তাহার নিকট বড়ই অল্প মনে হইল। কত দিন তিনি বাচিবেন ? কে জানে ? হয়ত বিশ, কিংবা ত্রিশ কিংবা আরও বেশী । এ-টাকার সুদ দিয়া এক জনের চলে না—আসল ভাঙিতেও ভয় হয় ; কি জানি যদি বহুদিন বাচেন ? জীবনর অনিশ্চয়তার কথা চিস্তা করিয়া খিনি একদিন তাহীর চিরজীবনের সঞ্চিত এই মুলধনকে আশ্রয় করিয়া একটি অনবিল শাস্তমধুর জীবন-সায়হি কল্পনা করিয়াছিলেন তাহারই মনের দীর্ঘজীবী হইবার গোপন আকাজকা হঠাৎ আত্মপ্রকাশ করিয়া