পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈশাখ বারংবার জীবনের সেই অকিঞ্চিৎকর মূলধনকে নিতান্ত অপ্রচুর বলিয় তাহাকে ভয় দেখাইতে লাগিল। তিনি স্পষ্ট দেখিতে পাইলেন তিনি জরা ও ব্যাধিতে পঙ্গু হইয়। পড়িয়া আছেন, মুখে জল দিবীর কেহ নাই । 事 擊 擊 擊 মৃদু দীপালোকে সুখেস্ত্রলাল বাবু স্পষ্ট দেখিতে পাইলেন একটি রমণী তাহার মশারির বাহিরে দাড়াইয়া আছে। হঠাৎ ‘কোন হয় বলিয়া তিনি তাহার হাত ধরিয়া ফেলিলেন ; সঙ্গে সঙ্গেই রমণী অক্ষুট ক্ষীণ চীৎকার করিয়া মুচ্ছিত হইয়া পড়িল । বাবু মুখেতদুলাল দেখিলেন, প্রেতাত্মা নয়, সপ্ত বৃক্তমাংসে গড়া এক ইংরেজ তরুণী । তিনি নিজেও অত্যন্ত বিচলিত হইয়া পড়িলেন, কে এই নারী ? এই রীত্রিশেষে কেন তাহার ঘরে প্রবেশ করিল ? হয়ত চোর হইতে পারে। কিন্তু তাহার সুকুমার মুখের দিকে চাহিয়া তাহার কিছুতেই মনে হইল না যে সে চুরি করিতে আসিয়াছে । মুখে চোখে জলের ঝাপটা দিতেই তরুণীর সংজ্ঞা ফিরিয়া আসিল । সুখে দুলাল বাবুর দিকে চাহিয়া সে অবিৰল ধারায় কঁদিতে লাগিল । তিনি প্রশ্ন করিলেন, ‘তুমি কে, কেনই বা আমার ঘরে আসিয়াছ ? সে কোন উত্তর না দিয়া কেবলই কাদিতে লাগিল । —র্ক দিলে আমি ছাড়িব না ; নিশ্চয়ই তোমার কোন ক্তরভিসন্ধি আছে ; আমি তোমাকে পুলিসে দিব । —আপনার ইচ্ছা হইলে দিতে পারেন ; কিন্তু আমি সুরভিসন্ধি লইয়। এখানে আলি নাই । আর আপনি যে এখানে আছেন তাও জানি না । আমি আমার রবার্টকে দেখিতে আসিয়াছি ; যেমন প্রায় প্রতি রাত্রই আসি । —রবার্ট, তোমার কে হয় ? তরুণী মুখ নীচু করিল এবং বৰ্দ্ধিত ক্ৰন্দনবেগ কোনরূপে সংবরণ করিয়া কহিল,—আমি তাকে ভলিবাসি, সেও একদিন আমাকে খুব ভালবাসিত কিন্তু এখন সে আমার দি.ক ফিরিয়াও তাকায় না, গত ছ-মাসের মধ্যে সে আমার একখানি চিঠিরও উত্তর দেয় নাই। আমি ত’হার সঙ্গে দেখা করিতে বহুবার চেষ্টা করিয়াছি কিন্তু পারি নাই। সে আমার মুখদর্শন করিতে অনিৰ্বাণ ఇవి চাহে না । একদিন সে আমাকে জীবনের সার্থী করিবে বলিয়া প্রতিজ্ঞা করিয়াছিল, কিন্তু আজি সে লোকের কাছে সে প্রতিজ্ঞার কথা বলিয়া হাসি-তামাশা করে, আমার নামে কুৎসা রটায়। ভদ্রলোক, আপনার নাম কি ? আপনি এখানে কবে আসিয়াছেন ? —আমার নাম বাৰু মুখেঞ্জলাল পাণ্ডে ; আমি মিষ্টার পিটারের ভাড়াটেরূপে কাল এখানে আসিয়াছি। কিন্তু তুমি কোন সাহস এই গভীর রাত্রে জনশূন্ত পথ অতিক্রম করিয়া পরগৃহে প্রবেশ করিয়াছ ? –বাৰু মুখেঞ্জলাল, আমার উপায় কি ? রবার্টকে না পাইলে আমি বাচিব না। আমি জানি সে এখানে শুইত ঃ বহুবার রাত্রির অন্ধকারে নির্জন পথে আমি ভূতের মত বিচরণ করিয়াছি। কোন দিন বা তাহীকে শুধু একবার দেখিবার লোভে ঘরে প্রবেশ করিতে চেষ্টা করিয়াছি | আজ ভাবিয়ছিলাম আমার সৌভাগ্য উপস্থিত হইয়াছে দরজা খোলা রহিয়াছে। ইচ্ছা ছিল একবার রবার্টকে জিজ্ঞাসা করিব সে আমাকে গ্রহণ করিবে কি না ? আমি ক্লাস্ত হইয়া পড়িয়াছি, পৃথিবীতে আর আমি বিচরণ করিতে পারি না । তাহাকে আমি আমার হৃদয় মন সৰ্ব্বস্ব দান করিয়াছি ; সে আজ লোকের কাছে বলিয়া বেড়ীয় যে ইচ্ছা করিলে আমি অন্ত কাহাকেও তাহ দান করিতে পারি। বাবু স্বথেঞ্জলাল, আপনি ত এক জন হিন্দু ধৰ্ম্ম ত আপনাদের প্রাণ ; বলুন ত একি সভ্য কথা ? রবার্ট ও জানে যে এ-কথা মিথ্যা ; সে জানে যে আমি একমাত্র তাঁহারই । আমি বিষ সংগ্ৰহ করিয়াছি, আজ যদি তাহীকে পাইতাম একবার জিজ্ঞাসা করিয়া দেখিতাম সে আমাকে সত্যই এরূপ মনে করে নাকি । যদি তাহার মনে হইয়া থাক যে আমি অন্তকেও ভালবাসিতে পারি তবে তাহার সম্মুখেই এই বিষ খাইয়া মরিব —এই বলিয়া তরুণী একটি ক্ষুদ্র কৌটা মুখেঞ্জলাল বাবুকে দেখাইল । তিনি ব্যতিব্যস্ত হইয়া পড়িলেন ; কি জানি অবশেষে ইংরেজ-তরুণী-হত্যার দায়ে না পড়িতে হয় । ‘বাবু মুখেঞ্জলাল জাগিয়াছেন নাকি বলিতে বলিতে রবাট ঘরে প্রবেশ করিল এবং তরুণীকে দেখিয়া বিস্ময়ে চমকিয়া উঠিল । “আইভি, তুমি এখানে ?