পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রাবণ ধর ধরবে না। একটু ইতস্তত করিরা আবার সে বলিল— তুমি এত লাগাম চিল দিয়ে না মা । ছেলে নিয়ে তুমিও যে কেমন হয়ে গেলে—একটুকু শাসন-টাসন ক’রে । মৃদ্ধ সলজ্জ হাসি হাসিয়া মেজগিল্পী অবগুণ্ঠন একটু টানিয়া দিলেন । 疊 疊 翻 তখন রাত্রি প্রায় দ্বিপ্রহর । মেজকর্তা অতি সতর্ক নিঃশব্দ পদক্ষেপে বাড়ির ফটকের মধ্যে প্রবেশ করিলেন । নিরন্থ, গাঢ় অন্ধকারের মধ্যে পৃথিবী যেন বিলুপ্ত হইয়া গেছে । সম্মুখে প্রকাও স্বযুপ্ত বাড়িখানা গাঢ়তর অন্ধকারের মত দ্বীড়াইয়া আছে। শুধু দুই-তিনটা খোলা জানাল দিয়া গৃহমধ্যের আলোক-রশ্মি শূন্তের অন্ধকারের মধ্যে নিত্যস্ত অসহায় প্রেত-দেহের মত ভাসিয়া রহিয়াছে । অতি সতর্কতা সত্বেও মেজকৰ্ত্তার পণ টলিতেছিল। ধীরে ধীরে তিনি অনারের দিকে চলিলেন। মুছ কাতর স্বরে কে কাজিয়া উঠিল । মেজকৰ্ত্ত চমকিয়া উঠিয়া দঁাড়াইলেন । কিছুক্ষণ শুনিয়া বুঝিলেন কুকুরটা এখনও শোক ভুলে নাই । আবার তিনি অগ্রসর হইলেন । আজ স্মশানে তাহার পুত্রেষ্টি যাগ হইতেছে । তিনি বলি-সংগ্ৰভে আসিয়াছেন । বলির সময় সমাগতপ্রায় । সমস্ত দরজা খোলা রহিয়াছে— সিড়ি অতিক্রম করিয়া তিনি দোতলায় উঠিলেন । ধীরে ধীরে ঝিয়ের ঘরে ঢুকিলেন। অন্ধকার ঘর—অতি সতর্কতার সহিত দেশলাই জালিয়া দেখিলেন বুড়ী ঝি অকাতরে ঘুমাইতেছে, কিন্তু শিশু ত সেখানে নাই । বাহির হইয়া আসিয়া বারাক্ষায় দাড়াইয়া তিনি তাবিতেছিলেন—কোথায় তবে ? বিছাৎ-রেখার মত - একটা কথা মাথার মধ্যে থেলিয়া গেল । আবার তিনি অগ্রসর হইলেন । এ-পাশের আলোকিত বীরমিদার দ্বারপথে দাড়াইয়া মেজকর্তা দেখিলেন তাহায় অনুমান সত্য—মেজগিল্পীর কোলের কাছে শিশুটি শুইয়া আছে । ধীরে ধীরে তিনি শয্যার পাশ্বে আসিয়া দাড়াইলেন । দেখিলেন মেজগিল্পীর বক্ষদেশ সম্পূর্ণরূপে অনাবৃত মুক্ত । র্তাহার বাহুর উপর মাথা রাখিয়া শিশুটি দুই হাতে মেজগিল্পীকে জড়াইয়া ধরিয়া একটি স্তন মুখে পুরিয়া অগাধ নিশ্চিন্তু ঘুমে’মগ্ন । মাঝে মাঝে স্বপ্লঘোরে মৃদু হাস্তরেখা পুত্রেষ্টি 8*g তাহার অধরে ঈষৎ স্ফরিত হইয়া আবার ধীরে ধীরে মিলাইয়া যাইতেছে। মেজগিরীর মুথে অতি ভূপ্তির হস্তিরেখা যেন তুলি দিয়া আঁকিয়া দিয়াছে। মেজকৰ্ত্তার স্বরাপ্রভাবিত মস্তিষ্কের মধ্যে সব যেন ওলট-পালট হইয়া যাইতেছিল। হাত-পা থর থর করিয়া কঁাপিতেছিল। তবুও তিনি প্রাণপণে আপনাকে সংষত করিয়া শিশুকে তুলিয়া কাধের উপর ফেলিয়া দ্রুতপদে বাহির হইয়া । পড়িলেন । বাড়ির বাহিরে প্রাস্তরের মধ্যে পড়িয়া গতি আরও দ্রুত করিবার চেষ্টা করিলেন । অকস্মাৎ অমাবস্তার অন্ধকার দীর্ণ করিয়া কে র্কাদিয়া উঠিল। মেজবোঁ ! মেজকৰ্ত্ত স্তন্ধ হইয়া দাড়াইলেন। আবার সেই মৰ্ম্মভেদী চীৎকার। বিশ্বের বেদন যেন সেচীৎকারের মধ্যে পুঞ্জীভূত হইয়া আছে। মেজকর্তার বুকের ভিতর ধেন ঝড় বহিয়া গেল, তবুও আর একবার চেষ্টা তিনি করিলেন। কিন্তু সম্মুখের দিকে দৃষ্টি ফিরাইয়াই তিনি থর থর করিয়া কঁাপিয়া উঠিলেন। শ্বেতবর্ণ অশরীরী মুৰ্বির মত কে সম্মুখে দাড়াইয়া আছে। সেটা একটা ছোট তালগাছের শুকনা পাতা, শিথিল দীর্ঘ বৃন্ত সমেত সেটা ঝুলিতেছিল—অপর কিছু নয়। কিন্তু মেজকৰ্ত্তার মনে হইল এই শিশুর অশরীরী মাতা যেন দীন ভাবে সস্তানভিক্ষণ চাহিতেছে। ওদিকে পিছনে বাড়ির মধ্য হইতে আবার সেই মৰ্ম্মভেদী চীৎকার । সে চীৎকারে তাহার মৰ্ম্মস্থল সমবেদনায় অধীর হইয়া উঠিল—সমস্ত বাসনা এক মুহুর্তে তুচ্ছ হইয়া গেল। তিনি ফিরিলেন—উন্মত্তের মত ফিরিলেন—ঘাই—যাই—মেজবোঁ । ঠিক এই সময়ে দূরে চৌকীদার হাক দিতেছিল— ও—ওঁই ! মেজকর্তার মনে হইল এ রূত্ৰকণ্ঠে রুষ্ট তান্ত্রিকের, আহবান । তিনি আৰ্ত্তস্বরে চীৎকার করিয়া উঠিলেন— মেজবোঁ ! মেজবোঁ । মেজবোঁয়ের নিশ্চিন্ত অঞ্চলতল আশ্রয়ের জন্ত প্রাণপণে ছুটিয়া বাড়ির ফটকের মধ্যে প্রবেশ করিলেন । মেজকৰ্ত্তার কণ্ঠস্বর পাইরা কুকুরী আসিয়া পাশে দ্বাড়াইয়া যুদ্ধক্ৰজনে আপনার বেদন নিবেদন করিল। মেজকৰ্ত্তা ঝর বার করিয়া কাদিয়া ফেলিলেন, বলিলেন— তোর ত আমি নিই নি মা—তোর ছেলে আমি নিই নি ।