পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রাবণ লুসি ঠোট উণ্টইয়া বলিল, “কে জানে!” খাওয়া-দাওয়ার পর মেয়েদের শুইয়া থাকিতে উপদেশ দিয়া সুরেশ্বর নিজের ঘৰে গুইতে চলিয়া গেলেন । ঘামিনী কিদুকে ডাকিয়া কি কি করিতে হইবে, কেমন ভাবে করিতে হইবে তাঁহা আরও একবার বলিয়া দিলেন । নীচের বড় ড্রইং-রুমূট চাকর ভালভাবে পরিষ্কার করিয়াছে কিনা, তাহা নিজে একবার গিয়া দেখিয়া আসিলেন । মালীকে তিনটার সময় ফুল আনিতে বলিয়া দিয়া, বিশ্রাম করিতে আবার উপরে উঠিয়া আসিলেন । দিনের বেল তিনি কোনদিনই ঘুমাইতেন না, আজও ঘুমাইলেন না । সুরেশ্বর বলিয়াছেন মমতাকে খুব ভাল করিয়া সাজাইয়া দিতে। কি ভাবে সাজাইবেন তাহাই যামিনী ভাবিতে লাগিলেন । সুরেশ্বর অবশ্য ১ান যে মেয়েকে হীর-মুক্তা-কিংখাবে একেবারে মুড়িয়া ফেলা হয় । তাঁহাতে মেয়ের বাপের টাকা অনেক আছে তাহা বুঝা যাইবে বটে, কিন্তু মমতা বেচারীকে ত দেখাই সাইবে না । যামিনীর পছন্দ-মত সাজাইলে মেয়েকে দেখাইবে ভাল বটে, তবে সুরেশ্বর চটিয়া যাইবেন । মমতারও ত একটা মতামত আছে ? তাহাকেই না-হয় ডাকিয়া fক্তজ্ঞাসা করা যাক ? সে নিজের ইচ্ছা-মত সাজিলে, সুরেশ্বর বেশী কিছু বলিবার সুবিধা করিতে পারিবেন না । পিতার আজ্ঞামত মমতা শুইয়াছিল বটে, কিন্তু ঘুমায় নাই যে তাহ বলাই বাহুল্য । খাটের পাশে আসিয়া নাড়াইয়া যামিনী জিজ্ঞাসা করিলেন, "আজ বিকালে কোন শাড়ীখান। পরবি রে ?” মমতা কিছু বলিবার আগেই লুসি লাফাইয়া উঠিয়া বলিল, “সেই ওর পাসের খাওয়ার দিন যে শাড়ী আর যে গহনাগুলো পরেছিল, তাই পরিও পিসীমা । অত সুন্দর আর ওকে কোনো পোষাকেই দেখায় না।” বিবাহ করিতে যত অমতই থাক, সাজিতে মমতার বিশেষ কিছু অমত ছিল না। সে বলিয়া উঠিল, “না মা, তোমার বৌভাতের সেই বেগুনী জংলী শাড়ীট পরব, ওটা আমার একবারও পরা হয় নি। আর সেই বড় বড় মুক্তোর মালাটা ।” তাঁহাই হইল। মমতার সামনে যামিনী নিজের به حساح=جهوي জন্মস্বত্ব GoG কাপড়ের আলমারী ও গহনার বাক্স খুলিয়া দিলেন। সে যাহা খুশী তাহা বাছিয়া লইল । মোটের উপর দেখা গেল, চুল বাধিতে জানুক বা নাই জানুক, নিজের সুন্দর রূপকে স্বন্দরতর করিতে কি কি প্রয়োজন তাহ মমতার বেশ জানা আছে । তাহার পর গা ধুইয়া আসিয়া মমতা মায়ের কাছে চুল বাধিতে বসিল । লুসি যামিনীকে সাহায্য করিতে লাগিল । গহনা মমতা খুব বেশী পরিল না, কিন্তু যাহা পরিল তাহা একেবারে বাছাই-করা জিনিষ, সুরেশ্বরের পিতামহীর আমলের জড়োয়া গহনা । মেয়ের কপালে ছোট একটি কুছুমের টপ পরাইয়া দিয়া যামিনী জিজ্ঞাসা করিলেন, “শুধুপায়ে যাবি, না নাগরা জুতো পরবি ? শুধু-পায়ে যাস ত নিত্যকে বলি আলতা পরিয়ে দিতে ” মমতা আলতা পরিতেই চায় । লুসি বলিল, “দিদিকে দেখাচ্ছে যেন ঠিক রূপকথার রাজকন্ত ।” যামিনী ভাইঝির উচ্ছাসে একটু হাসিলেন, কোন কথা বলিলেন না । লুসি মমতার মুথথান একবার ডান-পাশে একবার বী-পাশে ঘুরাইয়া দেখিয়া বলিল, “তোমার কাছে কি লিপ ঠিক আছে পিসীমা, একটু দিয়ে দিলে হ’ত দিদির ঠোটে, বড় ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে ।” যামিনী বলিলেন, “রূপকথার রাজকন্তীতে কি লিপষ্টিক' লাগায় রে ? ওসব পাট আমার নেই।” লুসি লজ্জিত হইয়া আর কিছু বলিল না। আজকাল ঘরে-ঘরেই ত লিপষ্টিক’ ও ‘রুজের চলন, ইহাতে আপত্তি যে কেন পিসীমার তাহ সে ভাবিয়া পাইল না । সাজগোজ সারিয়া মমতা চুপ করিয়া পাখার তলে বসিয়া রছিল, ঘোরাফেরা করিতে গিয়া পাছে ঘামিয় উঠে। লুসি তাহার পাশে বসিয়া গল্প করিতে লাগিল । ঘামিনী উঠিয়া গেলেন। দেখিতে দেখিতে বেলা গড়াইয়া গেল । মেঘলা দিন, একেবারে সন্ধ্যার অন্ধকার ঘনাইয়া আসিল । মমতা একবার লুসিকে বলিল, “তুই চুল বেঁধে, কাপড় ছেড়ে নে না ভাই, তাহলে আমার সঙ্গে যেতে পারবি। একলা যেতে আমার ভয়ানক লজা করবে I”