পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গুহাচিত্র ( গল্প ) শ্ৰীঅবিনাশচন্দ্র বস্থ ( > ) প্রসেনজিৎ যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত হইয়াছেন এবং মদ্ররাজসে প্রায় দুই হাজার বৎসর পূৰ্ব্বের কাহিনী । কন্ত স্বভাদ্রীর সহিত র্তাহার বিবাহের বাগদান হইয়া ভারতের মধ্যদেশে প্রবল-প্রতাপান্বিত বৌদ্ধ নৃপতি ধৰ্ম্মরাঙ্গের রাজত্ব, সুদূর দক্ষিণে সে-রাজ্যের সীমারেখা শেষ হইয়াছে । রাজ্যের প্রতি নগর উপনগরে এক অভিনব সমৃদ্ধির চিহ্ন। বহিঃশত্রুর উপদ্রব নাই, অশ্বমেধ-যজ্ঞ বন্ধ হইয়। অন্তৰ্ব্বিবাদও হ্রাস পাইয়াছে। ক্ষত্রিয়ের দলে দলে শস্ত্র ত্যাগ করিয়া পীতবসন পরিয়৷ বিহীরবাসী হইতেছে। ব্রাহ্মণের চতুৰ্ব্বৰ্গ ও চতুরাশ্রমকে ধরিয়া আছে বটে, কিন্তু নূতন সামাজিক আবহাওয়ার মধ্যে তাই দের ধৰ্ম্মের রূপও বদলাইতেছে। শূদ্র সাম্যবাদের বলে সমাজের উচ্চস্তরের দিকে দ্রুত অগ্রসর । বৈষ্ঠ রাজশক্তির আশ্রয়ে দিকে দিকে বাণিজ্যপোত লইয়া ফিরিতেছে। দেশ-বিদেশ হইতে অর্থ আনিয়া স্বগৃহ ও স্বদেশ পুর্ণ করিতেছে । সে-বাণিজ্যের সংস্পর্শে দেশের সৰ্ব্বপ্রকার শিল্প সজীব । সে-কারণে রাজকোষ পূর্ণ, ধৰ্ম্মের প্রত্যেক পীঠস্থান সমৃদ্ধিশালী । বর্ষার তৃণগুল্মের মত দিকে দিকে বিহার ও চৈত্যের স্বষ্টি হইতেছে। জনসাধারণের জীবনে অদম্য প্রফুল্লত, বেশভূষায় অপূৰ্ব্ব সৌষ্ঠষ, বাসভবনে ললিতকলার অপরূপ ঐশ্বর্য। বড় বড় নগরগুলিতে সৰ্ব্বপ্রকারের বিলাস পরাকাষ্ঠা লাভ করিয়াছে। নরনারীর দেহে বহুমূল্যের আভরণ, বহুবর্ণের পোষাক, বিচিত্র অঙ্গরাগ । নগরে নগরে বহু ভাস্কর, স্থপতি, চিত্রকর, কবি, নাট্যকার, গায়ক, বাদক নিজ নিজ শিল্পের সাধনা করিতেছে। সুরম্য হৰ্ম্মারাজিতে সুকণ্ঠ ও সুদর্শন নট এবং সুকণ্ঠ ও সুকুমার-কায় নটীদের বাস । তাহারা নৃত্যগীত অভিনয় দ্বারা নগরের জীবন সরস করিয়া রাখিতেছে । ধৰ্ম্মরাজের রাজধানীতে আজ বিপুল উৎসব। রাজপুত্র আজ দিবারম্ভ হইতে নগরে যে আনন্দের স্রোত বহিয়াছে, বোধ হয় অযোধ্যায় রামচন্দ্রের অভিষেকের সময়ও তাহ হয় নাই ৷ সন্ধ্যায় রাজপ্রাসাদের মনোরম উদ্যান-বাটিকাতে অভিনয় ও নৃত্য চলিতেছে। রাজকুমার সারাদিন প্রাসাদে ছিলেন, এখন দুই-এক জন অন্তরঙ্গ বন্ধু সহ অভিনয়-দর্শনের আনন্দে ডুবিয়া পড়িয়ছেন। সে-অভিনয়ে রাজ্যের শ্রেষ্ঠ নট বিজয়-মালিকা নায়িকীর ভূমিকা গ্রহণ করিয়াছে, তাহার সুমধুর সঙ্গীতে উদ্যান-বাটিকা মুখরিত হইতেছে । যুবরাজের যে-সকল বন্ধু এ-অভিনয়ে নিমস্থিত হইবার সৌভাগ্য লাভ করিয়াছে, তাহারা নিজেদের জীবন কৃতাৰ্থ মনে করিতেছে। বিজয়-মালিকার স্বডৌল গৌরদেহ নানাবর্ণেরঞ্জিত ও নানা গন্ধে অভিষিক্ত হইয়া পুর্ণচন্দ্রের মত শোভা পাইতেছে । আর তরুণ দর্শকমণ্ডলীর চিত্তগুলি চকোরের মত তাহার চতুর্দিকে ঘুরিয়া ফিরিতেছে । যুবরাজের ধনুকের মত বাকী ক্রযুগলের নীচে বিশাল গিয়াছে। ভ্রমরকুক দুইটি চক্ষু অতি গভীর ভাবে নিরীক্ষণ করিতেছে— বিজয়-মালিকাকে নয় ; তাহাঁদের নিরীক্ষণের বিষয়, বিজয়-মালিকার পাশ্ববৰ্ত্তিনী নৃত্যশীল তরুণী নটী, মীনা। মীনার দেহখানি বেতসলতিকার মত দীর্ঘ, ক্ষীণ, অথচ অপরিসীম কোমলতার ভরা। বিজয়-মালিকার মত তাহার বসনভূষণের আড়ম্বর নাই, কিন্তু যথেষ্ট বৈচিত্র্য আছে । কণ্ঠে এক ছড়া মুক্তার হার, তাহার সঙ্গে ময়ুরকষ্ঠ বর্ণের একটি রেশমের ফিতা বাধা । হাতে দুই গাছ করিয়া, এবং বাহুতে এক গাছ করিয়া সরু স্বর্ণবলয়। চুলের খোপার উপর অৰ্দ্ধকূট চন্দ্রমল্লিকার স্বরচিত একটি