পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রাবণ खोचन्पोञ्चञ्म (ప్రిల রঙের ব্লাউজের সহিত কোন রঙের শাড়ী পরা যায়, মাতার অনুপস্থিতিতে এ সমস্তার সহজ সমাধান হইতেছে না। নানা খাদ্যভরা বৃহৎ প্লেট হাতে করিয়া সুচিস্মিতা মল্লিকা ড্রইংরুমে প্রবেশ করিল। অর্থাৎ, দেরিটা যেন খাবার তৈরি করিবার জন্তই হইতেছিল। প্লেটে আমিষ ও নিরামিষ তাওউইচু, সামুদ্রিক মৎস্তের নানাপ্রকার থাবার। —Excuse me. দেরি হয়ে গেল আসতে, অনেক ক্ষণ বসে আছ ? —তোমার এই দুটো ফটোর স্ক্যালবাম দেখা শেষ হ’ল । এসব তোমার তোলা ফটো ? —বেশীর ভাগ । —বেশ সুন্দর ত । —ফটো-তোলা সুন্দর, না মেয়েগুলি ? -gहे-हे । ছোট গোলটেবিলে মল্লিকা বসিল অরুণের মুখোমুখি । খামলোৰ্জ্জল মুখত্র, কচি ধানের চিকণ আভার মত ; উচু করিয়া চুল বাধা বলিয়া কপাল চওড়া দেখাইতেছে, নাকটি একটু মোটা ; মুখের ডৌল বড় হুকুমার, অনতিপক্ক ফলের মত বিশ্বাধর ; সবচেয়ে আশ্চৰ্য্য টানা কালো চোখ দুইটি, আয়ত নয়নে যেমন হাস্ত-কৌতুকের ছটা তেমনই অপূৰ্ব্ব স্বচ্ছত । চা খাওয়ার শেষে মল্লিকা ফটো য়্যালবামগুলি লইয়া অরুপের পাশে আসিয়া বসিল । কনভেণ্ট স্কুলের ও কলেজের নানা সহপাঠিনী ও শিক্ষয়িত্রীর ছবি ; সিমলা, দিল্পী, নানা স্থানের প্রাকৃতিক শোভা ও পথ দৃশু রহিয়াছে। মঞ্জিকা অফুরন্ত গল্প করিয়া চলিল—কোন মেয়েদের সঙ্গে তাহার বিশেষ বন্ধুত্ব ; কোন পিকনিকে কি হাস্তকর ঘটনা ঘটিয়াছিল ; সিমলাতে বসন্তাগমে কত বর্ণের ফুল ফোটে ; কোন ফিরিঙ্গি মেয়ের পিতামাতার বিবাহ-বিচ্ছেদ হইয়াছে, মেয়েটি পিতার তত্ত্বাবধানে আছে, অথচ মাতার সহিত মাঝে মাঝে কি কৌশলে লুকাইয়া দেখা করে ; একবার দিল্লীর চকে বাজার করিতে গিয়া মল্লিকার গলা হইতে সোনার হার খুলিয়া পড়িয়া গিয়াছিল, আবার কিরূপ আশ্চৰ্য্যভাবে তাহা খুজিয়া পাওয়া গেল ; কলেজে তাহার কোন প্রফেলারদের ভাল লাগে না ; কোন পিয়ানো বাদককে সে শ্রেষ্ঠ মনে করে ; মোজার্টের মিউজিক গে কিরূপ ভালবাসে ; এইরূপ কত সামান্ত গল্প, তুচ্ছ কথা, অরুণ মুগ্ধচিত্তে শুনিতে লাগিল অপরূপ কাহিনীর মত। মল্লিকা যখন চুপ করিয়া গম্ভীর হইয়া বসে, রাঙা সরু ঠোঁটের ওপর মোট নাক বিত্র দেখায়, কিন্তু যখন সে কথা বলে, তাছার মুখ পরম সুন্দর হইয় ওঠে, চোখে শু্যামল ধরণীর স্বপ্ন-অঞ্জন লাগে, গলার হার, কানের জুল ঝিকিমিকি করে । তুচ্ছ কথা বলার অবসরে কখন মল্লিকার সরল মুখে কোন অমৃতময় সৌন্দৰ্য্যালোক উদ্ভাসিত হইয়া উঠিল, এ অপূৰ্ব্ব অকলঙ্ক সৌন্দৰ্য্য সে কখনও কাহারও মুখে দেখে নাই। অরুণের দেহ মন চমকিয়া উঠিল । রাতে যখন অরুণ বিদায়ুগ্রহণ করিল, মল্লিকা বলিল— কাল সকালে কি করছ ? স্নান করবার সময় তোমায় ডেকে নিয়ে যাব, সাড়ে ন’টা, কেমন ! —আচ্ছা, মেনি থ্যাঙ্কস । সম্মুখে অন্ধকার পথে স্তব্ধ হইয়া দাড়াইয়া অরুণ বহুক্ষণ বাড়িটির দিকে চাহিয়া রহিল । একটা হাসির ধ্বনি। ফালি বয়, নয় মা । সে ফানি বয় । কলিকাতার কেহ অরুণকে এরূপভাবে বর্ণনা করিলে, সে তাহার সহিত দেখা করিত না ; কিন্তু এই সমুদ্রতীরের জল স্থল আকাশের কি যাহূ আছে । ফানি বয়, কথাগুলি গানের স্বরের মত গ্ৰহতারাবেষ্টিত নিশীথ-গগনে বাজিতে লাগিল । পরদিন প্রভাতে সাড়ে আটটার সময় অরুণ সমুদ্রমানের জন্ত প্রস্তুত হইয়া বাড়ির সম্মুখে চঞ্চলভাবে ঘুরিতেছিল। বালি ও সমুদ্রের জলে কাপড় জামা গৈরিকবর্ণ হইয় ওঠে, ছিড়িয়া ধায় ; সেজন্ত সে স্নানের জন্ত একটি মোট কাপড় ও গেঞ্জি আলাদা রাথিত ; আজি ময়লা কাপড়জামা পরিল না, ফগর্ণ কাপড় ও পাঞ্জাবী পরিয়া মল্লিকার প্রতীক্ষা করিতে লাগিল । বেলা প্রোয় নয়টার সময় মল্লিকা আসিয়া ডাক দিল— মিষ্টার পোরেট, প্রস্তুত । একটু সকাল ক’রে এলুম, মাকে ব’লে এসেছি, আজ দেড় ঘণ্টা স্নান । —আমি প্রস্তুত । চলো ।