পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভাদ্র অনেক বেশী প্রশস্ত হয়েছে। গদ্য-সাহিত্য নূতন, এই জন্তে শব্দস্বষ্টির কাজে তার আড়ষ্টত যায় নি। তবু ক্রমশ তার নমনীয়তা বাড়বে আশা করি। এমন কি, আজই যদি কোনো তরুণ লেখক লেখেন, “মাইকেল বাংলা-সাহিত্যে নূতন সম্পদের ভাণ্ডার উদঘাটিলেন” তা নিয়ে প্রবীণর খুব বেশী উত্তেজিত মা হতে পারেন। ভাবীকালে আধুনিকেরা কতদূর পর্য্যস্ত স্পদ্ধিয়ে উঠবেন বলতে পারি নে কিন্তু অস্তত এখনি তার “জিজ্ঞাসা করিলেন”-এর জায়গায় যদি "জিজ্ঞাসিলেন” চালিয়ে দেন তাহলে বাংলা ভাষা কৃতজ্ঞ হবে । র্যার প্রাকৃত বাংলায় লেখেন তাদের লিখতে হবে, জিজ্ঞাস্লেন, জিজ্ঞাস্ব, জিজ্ঞেসেছি, জিজ্ঞেসেছিলেম, জিজ্ঞেস্ছ, জিজ্ঞাসি । জিজ্ঞাসা কথাটাই স্বভাবত কিছু ভারিকি, তার কোনো উপায় নেই। “লজ্জ করবার কারণ নেই” এটা আমরা লিখে থাকি । “লজ্জাবার কারণ নেই” লেখাটা নিল জতা । এমন স্থলে ঐ জোড় ক্রিয়াপদটাবর্জন করাই শ্রেয় মনে করি । লিথ লেই হয় “লজ্জার কারণ নেই”। “প্রীফ সংশোধন করবার বেলায়” কথাটা সংশোধনীয়, বলা ভালো”সংশোধনের বেলায়” । সহজ ব’লেই গঙ্গে আমরা পুরো মন দিইনে, বাহুল্য শব্দ বিনা বাধায় যেখানে সেখানে ঢুকে পড়ে। আমার রচনায় তার ব্যতিক্রম আছে এমন অহঙ্কার আমার পক্ষে অত্যুক্তি হবে। ভাষার খেয়াল সম্বন্ধে একটা দৃষ্টান্ত আমার প্রায় মনে পড়ে। ভালো বিশেষণ ও বাসা ক্রিয়াপদ জুড়ে ভালোবাস শব্দটার উৎপত্তি। কিন্তু ও দুটো শব্দ একটা অখণ্ড ক্রিয়াপদ রূপে দাড়িয়ে গেছে। পূৰ্ব্বকালে ঐ “বাসা” শব্দটা হৃদয়াবেগস্থচক বিশেষ্যপদকে ক্রিয়াপদে মিলিয়ে নিত । যেমন ভয় বাসা, লাজ বাস। এখন হওয়া করা পাওয়া ক্রিয়াপদ জুড়ে ঐ কাজ চালাই। “বাসা” শব্দটা একমাত্র হৃদয়বোধসুচক ; হওয়া, পাওয়া, করা তা নয়। এই কারণে “বাসা’ কথাটা যদি ছুটি না নিয়ে আপন পূৰ্ব্ব কাজে বহাল থাকত জাহ’লে ভাবপ্রকাশে জোর লাগাতে। “এ কথায় তার মন ধিক্কার বাসল” প্রয়োগটা আমার মতে “ধিকার পেল”-র চেয়ে জোরালো । - এবারে সেই গোড়াকার কথাটায় ফেরা যাক । “কৃষ্টি” ৰুখাটা হঠাৎ তীক্ষ গিটার মতো বাংলা ভাষার পায়ে বিঁধেছে । কালচার وخه وك\ চিকিৎসা করা যদি সম্ভব না হয় অন্তত বেদন জানাতে হবে । ঐ শব্দটা ইংরেজী শব্দের পায়ের মাপে বানানো। এতটা প্ৰণতি ভালো লাগে না । ভাষায় কখনো কখনো দৈবক্রমে একই শব্দের দ্বারা দুই বিভিন্ন জাতীয় অর্থজ্ঞাপনের দুষ্টাস্ত দেখা যায়, ইংরেজীতে কালচার কথাটা সেই শ্রেণীর। কিন্তু অনুবাদের সময়েও যদি অনুরূপ কৃপণতা করি তবে সেটা নিতান্তই অনুকরণ-প্রবণতার পরিচায়ক। সংস্কৃত ভাষায় কর্ষণ বলতে বিশেষভাবে চাষ করাই বোঝায়। ভিন্ন ভিন্ন উপসর্গযোগে মূল ধাতুটাকে ভিন্ন ভিন্ন অর্থবাচক করা যেতে পারে, সংস্কৃত ভাষার নিয়মই তাই। উপসৰ্গভেদে এক কু ধাতুর নানা অর্থ হয়, যেমন উপকার বিকার আকার। কিন্তু উপসর্গ না দিয়ে রুতি শব্দকে আরুতি প্রকৃতি বা বিরুতি অর্থে প্রয়োগ করা যায় না। উৎ বা প্র উপসর্গযোগে কৃষ্টি শব্দকে মাটির থেকে মনের দিকে তুলে নেওয়া যায়, যেমন উৎকৃষ্টি, প্রকৃষ্টি। ইংরেজী ভাষার কাছে আমরা এমনি কী দাসগৎ লিখে দিয়েছি যে তার অবিকল অম্বুবর্জন করে ভৌতিক ও মানসিক দুই অসবর্ণ অর্থকে একই শব্দের পরিণয়-গ্রন্থিতে আবদ্ধ করব ? বৈদিক সাহিত্যে সংস্কৃতি শব্দের ব্যবহার পাওয়া যায়, তাতে শিল্প সম্বন্ধেও সংস্কৃতি শব্দের প্রয়োগ আছে । “আত্মসংস্কৃতির্বাব শিল্পানি।” একে ইংরেজী করা যেতে পারে, Arts indeed are the culture of soul I “ECWso বা, এতৈর্যজমান আত্মানং সংস্কুরুতে"--এই সকল শিল্পের দ্বারা যজমান আত্মার সংস্কৃতি সাধন করেন। সংস্কৃত ভাষা বলতে বোঝায় যে ভাষা বিশেষভাবে cultured, যে ভাষা cultured সম্প্রদায়ের। মরাঠি হিন্দী প্রভৃতি অন্যান্ত প্রাদেশিক ভাষায় সংস্কৃতি শব্দটাই কালচার অর্থে স্বীকৃত & toss of soft (Cultural history) ক্ৰৈষ্টিক ইতিহাসের চেয়ে শোনায় ভালো। সংস্কৃত চিত্ত, »Rys if culturedšmind, cultured intelligence অর্থে কৃষ্টচিত্ত কৃষ্টবুদ্ধির চেয়ে উৎকৃষ্ট প্রয়োগ সন্দেহ নেই। যে - মাঙ্গুষ cultured তাকে , কুষ্টিমান বলার চেয়ে সংস্কৃতিমান বললে তার প্রতিসম্মান করা হবে। ।