পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬১৬ প্রবণসী ১৯৩৪২ ভাগই মুসলমান চাষীদের নিকট হইতে কিনিতে হয় । কিন্তু তাহারাও গো-পালন সম্বন্ধে অজ্ঞ ; উপযুক্ত খাদ্যাভাবে তাহীদের অস্থিকঙ্কালসার গভীগুলি আধ সের তিন পোয়া, বড় জোর এক সেরের বেশী দুধ দেয় না । কিন্তু আবীর কয় জন গৃহস্থেরই বা এমন সচ্ছলতা আছে যে প্রত্যহ নগদ পয়সা দিয়া দুগ্ধ কিনিতে পারে ; যেটুকু পারে তাহাও আবার শিশুদিগের পক্ষে যথেষ্ট নহে । সুন্দরবন-অঞ্চলের স্থানে স্থানে সামান্ত মুদির দোকানে সুইডেন ও সুইজারল্যাণ্ডে প্রস্তুত জমাট দুধ বিক্রয় হইতে দেখিয়াছি । আমার বাল্যকালের বাংলা এবং এখনকার বাংলায় কত প্রভেদ । তখন প্রত্যেক হিন্দুগৃহস্থ–ধনী, মধ্যবিত্ত বা দরিদ্র—গাভীকে সাক্ষাৎ ভগবতীজ্ঞানে পূজা করিত, যত্ন করিত। কিন্তু এখনকার গৃহলক্ষ্মীরা কি গোয়ালে গিয়া এই প্রকার গো-সেবা করিতে প্রস্তুত ? তাহারা ত গোয়াল দেখিয়া অভিকাইয়াই মূৰ্ছা যাইবেন। ইহার ফলে বাংলা দেশে শতকরা ৯৫ জনের ঘরে দুধের চেহারাই দেখা যায় না। কিন্তু পঞ্জাব অঞ্চলে প্রত্যেক গৃহস্থ বা কৃষক অন্ততঃপক্ষে একটি গাভী বা মহিষ পোষে, তাহাদিগকে প্রচুর খাদ্য যোগায় এবং ভাহাদের দুধ পর্যাপ্ত পরিমাণে নিজেরা ব্যবহার করে, বৃতাদি প্রস্তুত করিয়া বাজারে বিক্রয় করে । গ্রামে যদি কোন পথিক কোন গৃহস্থের নিকট একটু পানীয় জল চায় তাহা হইলে সে অবাক হইয়া জলের পরিবর্তে এক গ্লাস দুগ্ধ দিয়া থাকে । সন্নিকটে (আট-দশ মাইল দূরে ) কলিকাতার প্রচুর জমি পড়িয়া আছে। উদ্যমশীল যুবকগণ কয়েক বিঘা জমি লইয়া গো-পালন ও কৃষিকার্য্যের দ্বার স্বচ্ছলো জীবিকা অর্জন করিতে পারেন। চাই কেবল উৎসাহ ও অক্লস্তি পরিশ্রম । ব্যারাকপুর, পলতা প্রভৃতি অঞ্চলের মিউনিসিপ্যালিটির নিকট হইতে জমি ভাড়া লইয়া কয়েক জন পশ্চিম হিন্দু ও মুসলমান প্রচুর শাকসব্জী তরিতরকারী উৎপাদন করিয়া বেশ দু-পয়সা রোজগার করিতেছে । যে-সকল বাঙ্গালী যুবক দেশ-বিদেশে গিয়া কৃষিবিদ্যা-শিক্ষার জন্ত ব্যস্ত র্তাহীরা এই সকল সংবাদ রাখেন না । হাটকোট পরিয়া বা পরিচ্ছন্ন ধুতি শার্ট পরিয়া চেয়ার-টেবিলে বসিয়া হুকুম জারি করিয়া যাহার কেবল কুলী-মজুরের দ্বারা কাজ করাইবেন, তাহদের লাভ হওয়া দূরের কথা বিস্তর লোকসান দিয়া কৰ্ম্মক্ষেত্র হইতে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করিতে হইবে। পল্লীগ্রামে প্রাচীন গৃহিণীরা এখনও যেভাবে গো-সেবা করেন অর্থাৎ নিজ হাতে গোয়াল পরিষ্কার কর, গরুর জাৰ দেওয়া ইত্যাদি কাজ করেন-যুবকদের সেই কথা মনে রাখিয়া কারিক পরিশ্রম করিতে হইবে । এ-বিষয়ে খনার উক্তি অক্ষরে অক্ষরে সত্য । উহ! উদ্ধত করিয়া প্রবন্ধ শেষ করিব । খাটে খাটায় লাভের গীতি তার অৰ্দ্ধেক হাতে ছাতি ঘরে বসে পুছে ৰাত তাঁর ঘরে সদাই ই-ভাত ।*

  • এই প্রবন্ধের উপকরণ প্রতিষ্ঠানের এক জন হাতে-কলমে অভিজ্ঞ কৰ্ম্মী কর্তৃক সংগৃহীত।
  • * ::::