পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভাদ্র আগমণর দেখা লোক ৬২৫ দুইখানি উৎকৃষ্ট পুস্তক ছিল । উত্তরপাড়ার স্বনামপ্রসিদ্ধ জমিদার yজয়কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় মহাশয় একবার ঘোষণা করেন যে, বাঙ্গালী কৃষক-পরিবারের নিখুত বর্ণনা কেই বাঙ্গাল বা ইংরেজী ভাষায় লিখিতে পারিলে লেখক এক হাজার টাকা পুরস্কার পাইবেন । পুরস্কারের আশাতে অনেকে পুস্তক লিখিয়াছিলেন, তন্মধ্যে লালবিহারী দের গোবিন্দ সামগুই সৰ্ব্বোৎকৃষ্ট বলিয়া বিবেচিত হয়। যখন ঐ পুস্তক প্রকাশিত হয়, তখন লালবিহারী দে এবং মিঃ রো উভয়েই হুগলী কলেজে ইংরেজী সাহিত্যের অধ্যাপক ছিলেন । “গোবিন্দ সামন্ত” প্রকাশিত হইলে রে সাহেব নাকি উহার সমালোচনায় বলিয়াছিলেন “written in baboo English” অর্থাৎ বাঙ্গালীর ইংরেজী ভাষায় লিখিত । ষ্টহীর কিছুদিন পরে রো এবং ওয়েব উভয় শ্বেতাঙ্গ অধ্যাপক মিলিত হইয়া একথানি ইংরাজী ব্যাকরণ প্রকাশ করেন। সেই ব্যাকরণ সাধারণত: "Row's Hints’ নামে থ্যাত । ঐ পুস্তক প্রকাশিত হইলে লালবিহারী দে ঠাহীর সম্পাদিত “বেঙ্গল মিস্লেনি” নামক ইংরেজী মাসিক পত্রে ঐ ব্যাকরণের সমালোচনায় অসংখ্য ভাষার ভুল ও ব্যাকরণের ভুল দেখাইয়াছিলেন । সমালোচনার উপসংহারে তিনি লিখিয়ছিলেন, “যাহার বাঙ্গালীর লেখাকে ‘বাবু ইংলিশ বলিয়া বিদ্ধপ করেন, তাহীদের জানা উচিত যে, বাঙ্গালীর মধ্যে এমন বিশুদ্ধ ইংরেজী লেখক আছেন, মেসাস রো এণ্ড ওয়েব কোম্পানী যাহার জুতার ফিতা খুলিবারও অযোগ্য ।” এই ঘটনার পর এক দিন নাকি হুগলী কলেজে লালfবহারী দের সহিত রে সাহেবের হাতাহাতি হইবার উপক্রম হইয়াছিল এবং রো সাহেব লালবিহারী দের সহিত এক কলেজে অধ্যাপনা করিতে অনিচ্ছুক হইয়া কৃষ্ণনগর কলেজে চলিয়া যান। লালবিহারী দে সুবর্ণবণিকের পুত্র। র্তাহার SsSrN বাস ছিল বদ্ধমান জেলার এক পল্লীগ্রামে । আমার পিত যখন বৰ্দ্ধমানে স্কুলের ডেপুটি ইনস্পেক্টর ছিলেন, তখন পাঠশালা পরিদর্শন করিতে সেই গ্রামে যাইতেন । সেই গ্রামের এক জন ভদ্রলোক বাবাকে লালবিহারী দের "ভিটা" দেখাইয়াছিলেন। আমি পুৰ্ব্বেই বলিয়াছি, লালবিহারী, দে দীর্ঘকাল চন্দননগরে বাস করিয়াছিলেন । আদালতের ঠিক পশ্চিমে যে ভগ্ন অট্টালিকা আছে, তিনি তাই ভাড়া লইয়া বাস করিতেন । আমার পিতার সঙ্গে তাহার আলাপ ছিল, বাবা তাহীদের গ্রামে মধ্যে মধ্যে যান শুনিয়া তিনি বাবকে গ্রাম সম্বন্ধে কত প্রশ্নই জিজ্ঞাসা করিতেন । গ্রামের বাহিরে সেই বকুলগাছটা আছে কি না, খোড়া গুরু মহাশয়ের কেহ আছে কি না, দক্ষিণপাড়ায় নাপিতদের বাটতে কেহ গাছে কি না, সেকালের মত ঘটা করিয়া বারোয়ারি পূজা হয় কি না প্রভৃতি সমস্ত বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে জিজ্ঞাসা করিতেন। শৈশবের লীলাক্ষেত্র জন্মভূমির কথা ধৰ্ম্মান্তরগ্রাহী পুরাদস্তুর সাহেব হইয়াও বুদ্ধ ভুলিতে পারেন নাই ! আমার এই বর্ণনা ক্রমেই বাড়িয়া যাইতেছে, বুদ্ধ বয়সে সুদীঘ অতীত জীবনের কথা চিন্তা করিলে একটির পর একটি কত মুখই মনে পড়ে, কত বিস্মৃতপ্রায় ঘটনার চিত্র আবার মানদপটে পরিস্ফুট হইয় উঠে। লিপিতে লিখিতে কত লোকের কথা লিখিব মনে করিয়া হয়ত ভুলিয়া গিয়াছি, আবার যাহার কথা দুই চারি ছত্রে সারিব মনে করি, তঁহার কথা আর শেষ হইতে চায় না । হয়ত এই লেখা 'প্রবাদীতে প্রকাশিত হইবার পর এমন অনেকের কথা মনে পড়িবে, যাহা এই প্রবন্ধে উল্লেখ করা উচিত ছিল, যাহা উল্লেখ না করতে এই প্রবন্ধের অঙ্গহানি হইল । কিন্তু নিরুপায়। দুৰ্ব্বল স্মৃতিশক্তির উপর জুলুম চলে না। 7ত