পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఆరిని আসে। তার পর মথুর, গদাই, ক্ষেমঙ্করী উপস্থিত হয় সুধিমলের বজরায় । _ কলিকাতা হইতে একটা কল আসিয়াছে, তীরে জলের কিনারায় তাহ বসানো হইয়াছে ; মাছ ওজন হয়, জেলের দল ভিড় করিয়া দেখে, হরিপদ হিসাব রাখে । তার পর মাছ লইয়া গদাই যায় শহরে, টাকা লইয়া ক্ষেমঙ্করী যায় গ্রামে, মথুর বসে, তামাক খায়, দু-চারটা খোশগল্প বলে । আত্মীয়তা জমে নাই কি করিয়া বলা চলে ? একদিন সুবিমল বলিল—সর্দার, রোজ রোজ এতগুলো টাকা দিয়ে ক্ষেমুকে একা এক পাঠাচ্ছ— —ভয় নেই বাবু, জেলের মেয়ের হাতে বৈঠা, মাছ-বটি, কেউ সাহস ক’রে এগোবে না-মাথা চৌচির হয়ে যাবে যে । --আচ্ছা বাবু, শহরে থাকেন, খবরের কাগজ পড়েন, শুনছি জুনিয়ার খবর নাকি ঘরে বসে পান । হামেশাই ত শুনেন, গুওরি মেয়ে ধরে নিয়ে যায়, জেলের মেয়েকে নিয়েছে এ কখনও শুনেছেন কি ?—বলতে বলতে সর্দারের বুক ফুলিয় উঠে । এক মাস পর । কয়েকটা নেীক এসে চরে ভিড়িয়াছে। সব কয়টাই মালে ভৰ্ত্তি ; কোনটায় ইট, কোনটায় চুণ, সুরকি, কোনটায়-বা বাশ, বেত, খড় । ভোরের বেচা-কেনা শেষ হইয়াছে। গদাই মাছ লইয়া চলিয়া গিয়াছে। মথুর প্রশ্ন করিল—এ সব কি হবে ? —একটা বাংলো তুলবো—সুবিমল উত্তর করিল। –কি তুলবেন ? —বাংলো, নিজের থাকবার জন্তে একখানা ভাল ধর। নৌকায় থেকে থেকে আর ভাল লাগছে না সর্দার । এ জায়গাটা বেশ, ছেড়ে যেতে ইচ্ছা করছে ন—এখানেই থেকে ধীব ভাবছি। এ চরটা তাই আমি কিনলুম । ভয় নেই সর্দার, তোমাদের কাজের কোন অহুবিধা হবে না —একটা বড় কাগজ টেবিলে পেতে সুবিমল বললে – এই দেখ, এতে সব আঁকা আছে । তোমাদের সঙ্গে যাহোক ব্যকলার একটা সম্পর্ক দাঁড়াল ত । এইবার পাকাপাকি বন্দোবস্ত করব । এই দেখ এখানে প্রবাসী ১৩৪২ থাকবে আমার বাংলো। এই যে বড় ঘরটা দেখছ এট হবে তোমাদের থাকবার আড্ডা, আর এই যে এই ঘর —এটার নীচে বসে চলবে তোমাদের কাজ, রোদ বাদলে তোমাদের কষ্ট পেতে হবে না, কাজেও বাধা হবে না । আর চরের এই ভাগটায় জলে লোহার শিক দিয়ে হবে বড় একটা চাই । বারো মাস মাছ রাখা চলবে । তাড়াতাড়ি বেচে ফেলতে হয় ব’লে তোমরা দাম বড় কম পাও । বর্ষায় ধরে রাখবো, শীতের সময় বেচবে বেশ চড়া দামে । মথুর ই করিয়া শুনিল, ভাবিল—বাবু এসব বলে কি। সুবিমল লক্ষ্য করিল সর্দারের বিমুঢ়তা, বলিল-অবসর মত এ আলাপ হবে একদিন তোমার সঙ্গে। এখন তুমি এক কাজ কর ত সর্দার । তোমাদের কাজের কোন অসুবিধা না হয়, এমন একটা ঠাই দেখিয়ে দাও, মালপত্তরগুলো ত নামুক । হরিপদ, তুমি যাও ত সর্দারের সঙ্গে, হিসেব-মত মালগুলো বুঝে নেওয়ার ব্যবস্থা কর । তাহারা চলিয়া গেল। বজরায় সুবিমল আর ক্ষেমঙ্করী, দু-জনে একা। এমন ত বড় হয় না। দু-জনেই নীরব । স্ববিমল ভাবে—ক্ষেমঙ্করী যেন কি বলিতে চায়। ক্ষেমঙ্করী ভাবে বাবুর এ কি মতি-গতি হইল। নীরবতা ক্রমে অসহ হইয়া পড়িল । ক্ষেমঙ্করীই ডাকিল–বাৰু --कि —সত্যি-সত্যিই এ চরে থাকৃবেন আপনি ? —কেন, তোমার কি আপত্তি আছে ? জায়গাটা ত বেশ– —কিন্তু, খাবেন কি ? —রোজ রোজ ষা খাই— —পাবেন কোথা ? —তুমি জুটিয়ে আনবে। —বাবু-বড় বড় চোখ তুলিয়া ক্ষেমঙ্করী হবিমলের মুখের উপর রাখিল । সুবিমল চেয়ার ছাড়িয়া উঠিল, ধীরে ধীরে ক্ষেমঙ্করীর দিকে অগ্রসর হইল, দুই হাতের মুঠোয় তাহার একটি হাত ধরিয়া তুলিল, তারপর মোলায়েম স্বরে বলিল— তুমি কি আমার ঘর করবে না ক্ষেমু ? ক্ষেমঙ্করী দুই চক্ষু মুজিত করিল।