পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈশাখ জন্মস্বত্ব &$ সুরেশ্বর বলিলেন, “নিজে যে যেমন, সেই রকমটাই তার কাছে শ্রেষ্ঠ বোধ হয় ব’লে জানতাম । তুমি দেখি সকল দিকেই উণ্টে । নিজে ত ছিলে পুরো ফিরিঙ্গী, মমতার বেলা এত গোড়ামী কেন ?” বামিনী বলিলেন, “ফিরিঙ্গী শিক্ষা পেয়েছিলাম বলেই সেটা যে কতখানি ভূয়ে তা বুঝতে পেরেছি। তোমরা সেটা পাও নি, কাজেই তার মোহে এখনও মুগ্ধ হয়ে আছে ।” স্বরেশ্বর এবং যামিনীর স্বভাবের এক জায়গায় মাত্র একটা মিল ছিল । দু-জনেরই ইচ্ছাশক্তি কিঞ্চিৎ দুৰ্ব্বল । নিজের ইচ্ছা গায়ের জোরে ফলাইয়া তুলিবার মত জোর তাহারা সব সময় মনের মধ্যে খুজিয়া পাইতেন না । বিশেষ সুরেশ্বর । তর্ক করিতেন, স্ত্রীকে বিদ্রুপ করিতেন, তাহার পর বৈঠকখানায় ফিরিয়া গিয়া সে-সব কথা মন হইতে ঝাড়িয়া ফেলিতেন । র্তাহার তাসপাশা থেলী, ঘোড়ায় চড়া, সিনেমায় যাওয়া প্রভৃতিতে প্রায় সব সময় চলিয়া যাইত । ঘর-সংসারের ব্যবস্থা করিবার সময় কোথায় ? তিনিই যদি সব করিবেন, তাহা হইলে লোকজন এবং স্ত্রী আছেন কি করিতে ? 'অতএব সমালোচনা করিবার কাজটুকু মাত্র করিয়া তিনি সরিয়া পড়িতেন । যামিনীর এ-সব বিরোধ-বিসংবাদ ভাল লাগিত না বটে, তবু মনে ক্রমেই যেন তাহার দৃঢ়তার সঞ্চার হইতেছিল। মমতাকে ভাল ভাবে মানুষ করিবার সঙ্কল্পটা ষ্টাহাকে নেশার মত পাইয়া বসিতেছিল । তিনি জীবনে যদিও কোনোদিন ঝগড়া করেন নাই, ইহার জন্ত দরকার হইলে তাহা করিতেও তিনি প্রস্তুত ছিলেন । সুতরাং মমতা লোরেটোতে ভৰ্ত্তি না হইয়া ঘরেই এক বাঙালী শিক্ষয়িত্রীর কাছে পড়াশুনা আরম্ভ করিয়া দিল । বায়ের কাছে বাজনা শিখিতে লাগিল, ছবি আঁকা শিখিতে লাগিল । সুজিত যখন চার বৎসরের হইল, তখন তাহাকেও ইংরেজী স্কুলে দিবার জন্ত সুরেশ্বর ব্যস্ত হইয়া উঠিলেন । निएछ। जैशिंहक अनिक कहे कब्रिब| हेक्षत्नी आँक्दकाझन।' শিখিতে হইয়াছে, অনেক জায়গায় ঠকিয়াছেন, অনেক জায়গায় অপ্রস্তুত হইয়াছেন। এখনও মাঝে মাঝে ঠেকিয়! যাইতে হয়। খোকার যাঁহাতে এ-বিষয়ে গোড়াপত্তনটা ভাল করিয়া হয়, এই ছিল তাহার ইচ্ছা । বড়মানুষ জমিদারের ছেলে, তাহাকে উপযুক্ত শিক্ষা ত দিতে হইবে । সুতরাং এ-বিষয়ে বেশ লড়িবার জন্ত প্রস্তুত হইয়াই তিনি স্ত্রীর কাছে গিয়া উপস্থিত হইলেন । কিন্তু যামিনী মোটেই এক্ষেত্রে যুদ্ধ ঘোষণা করিলেন না দেখিয়া সুরেশ্বর রীতিমত অবাক হইয়া গেলেন । বলিলেন, “এর বেল বুঝি তোমার কিছুই বক্তব্য নেই 8 ছেলের শিক্ষাটা কি মেয়ের শিক্ষণর চেয়ে কম দরকারী ব’লে তোমার ধারণা ? যামিনী বলিলেন, “সব মানুষেরই শিক্ষা সমান দরকার, কিন্তু ছেলেকে তুমি যেমন বোঝ তাই শিক্ষা দাও । মেয়ের জীবন যে কেমন হবে, তা আমি অনেকটাই অনুমানে বুঝি, তাকে সেই জীবনের জন্ত প্রস্তুত করতেও চেষ্টা করি । কিন্তু ছেলের ভবিষ্যৎ জীবনযাত্রা তত পরিষ্কার ক’রে আমি দেখিতে পাই নে, তোমার পক্ষেই সেটা বেশী পারা সম্ভব । তুমিও বুঝে দেখ তাকে কি ভাবে মানুষ করা দরকার।” অত ভাবিতে আবার সুরেশ্বর নারাজ ! তাবিবার ক্ষমতাও তাহার খুব বেশী আছে কিনা সন্দেহ । স্ত্রী একটা কিছু ব্যবস্থা করিলে তাহার খুৎ বাহির করা খুবই সহজ, তাহার ঠিক উণ্টাটা বলিলেই হইল। কিন্তু নিজে ব্যবস্থা করা ভারি হাঙ্গামের ব্যাপার, কত ভাবনাই যে ভাবিতে হয় তাহার ঠিক-ঠিকানা নাই । কিন্তু স্ত্রীর কাছে হার মানাই ব চলে কি করিয়া ? কাজেই সুরেশ্বর উঠিয়া গেলেন এবং কয়েক দিন পরেই খোকা স্বজিত ইংরেজী স্কুলে বাইতে আরম্ভ করিল। মমতা স্কুলে যাইতে পাইলে বাচিয়া যাইত, বাড়িতে পড়ার ধাতায় কোনো সময়েই সে ছুটি পায় না । পড়াশুনা ত আছেই, তাহার উপর দেশী এবং বিলাতী বাজনা শেখা, সেলাই ও শিল্পকাজ শেখা, এমন কি একটু একটু গৃহকৰ্ম্ম শেখা এও সে ইহারই মধ্যে আরম্ভ করিয়াছে । যামিনী নিজে যখন যাহা-কিছুর জন্ত ঠেকিয়াছেন, কস্তাকে সে-সব কিছুর জন্ত ঠেকিতে না দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বাড়ির লোকে হাসাহাসি করে, সেটা বুঝিয়াও তিনি নিজের সঙ্কল্প ছাড়েন না । স্বজিতের পড়াশুনার বিশেষ বালাই নাই। রোজ বাড়ি ফিরিয়া নিত্যনুতন বিলাতী উচ্ছ্বাস