পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Q9s Wye ইউরোপের চাপে ক্লিষ্ট দুই আধুনিক এশিয়াটিক জাতির দেশহিতৈষণাম্বারা (কচিৎ বিশ্বমানবের প্রতি প্রীতি দ্বারা ) অনুপ্রাণিত শিক্ষিত দুই-চারি জনের ভাবসম্মেলন। চীনের সঙ্গে ভারতের সংস্কৃতির ঐক্য নেই,— বৌদ্ধধৰ্ম্মের স্বত্রে বে যোগটুকু ছিল, যুগধৰ্ম্মের ফলে সে যোগস্থত্র প্রায় ছিড়ে গিয়েছে । ভাষা, ঐতিহ, বোধ, বিশ্বপ্রপঞ্চের প্রতি আমাদের প্রতি-ম্পন্দন, সবই আলাদা । চীনের ভাষা, মনোভাব, ঐতিহ বুঝে তার সঙ্গে আলাপ করলে বন্ধুতা করলে একটা আধিমানসিক মৈত্রী ও আত্মীয়তা-বোধ আসতে পারে, সেটা হয় তো খুব গভীর জিনিস হ’ম্নে উঠতে পারে ; যেমন প্রাচীন কালে ২• • • ॥১৫০০।১০০০ বছর আগে ভারতের সংস্কৃতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরিচয়ের সঙ্গে সঙ্গে চীন ভারতকে কল্যাণ-মিত্ৰ ক’রে বরণ ক’রে নেয়, ভারতের সঙ্গে তার আত্মিক যোগ-সাধন ঘটে। কিন্তু আজকাল আর সেটা কতদূর হতে পারবে ? এই জাহাজে যে চীনারা যাচ্ছে, তার আলাদা বসে থাকে । ইউরোপীয় মেয়েদের সঙ্গে শাড়ীপর। ভারতীয় মেয়েদের কোথাও কোথাও অtলাপ, কথাবার্তা হচ্ছে দেখছি, কিন্তু লম্বা গাউন-পর চীনা মেয়ে কারু সঙ্গে তারতীয় ( বা ইউরোপীয় ) মেয়ের আলাপ হ’তে দেখি নি। আমাদের ক্যাবিনে আমরা চার জন যাচ্ছি—কানপুর থেকে একটি তেবারী ব্রাহ্মণ ছোকরা, বীপ অবসরপ্রাপ্ত আই-এম-এস্ ডাক্তার, ছেলেটি যাচ্ছে বিলেতে ইলেকটিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে ; একটি পাঞ্জাৰী হিন্দু ছোকরা, এর বাপ-ম ইউরোপে বেড়াতে যাচ্ছেন, তারা আছেন সেকেও ক্লাসে, এ সঙ্গে যাচ্ছে ; আর আমি ; এই তিন জন ভারতীয় ; আর একটি চীনা ছোকরা, কানটন থেকে লণ্ডনে অর্থশাস্ত্র প’ড়তে যাচ্ছে । চীনা ভাষা আর সাহিত্য সম্বন্ধে আমি খোজ রাখি, নিজের নামটা চীনা অক্ষরে লিখতে পারি, তার পরিচয় পেয়ে এর মনে আমার সম্বন্ধে একটা আত্মীয়তাবোধ এসে গিয়েছে । একদিন ছেলেটি তার স্বজাতীয়দের মধ্যে ব'গে অাছে, হাতে একখানা চীনা পত্রিকা ; সেখানা তার কাছ থেকে নিয়ে উল্টেপাটে দেখতে লাগলুম, পরিচিত চীনা অক্ষরও দুশ্চারটে ধরা গেল ; পত্রিকাখানার ছবি দেখে আর রোমাম অক্ষরে লেখা প্রবাসী SNご総ミ ইউরোপীয় নামের ছড়াছড়ি দেখে বুঝলুম, এটায় আধুনিক ইউরোপীয় সাহিত্য সম্বন্ধে প্রবন্ধ আছে ; চীনা ভাষা আর সাহিত্যে আমার interest বা প্রীতি আছে দেখে, অন্ত চীনগুলি একটু সচেতন হয়ে উঠল কিন্তু হায়, এ বিষয়ে আমার পুজি এত কম যে ভদ্রভাবে অলিপি করা চলে না। তবুও আমাদের পরস্পরের মধ্যে এই পরিচয় থাকলে, অর্থাৎ সংস্কৃতিগত পরিচয় একটু গভীরতর হ’লে, মিলট আরও অন্তরঙ্গ হ’তে পারত। ইউরোপের বিভিন্ন ভাষাভাষী জাতির আর বিভিন্ন শাসনের অধীন লোকেরা কিন্তু এক : কথাটা ঘুরিয়ে বললে বলা যায়, নানা ভাষায় আর বিভিন্ন রাজ্যে বিভক্ত হ’লেও, ইউরোপে একটি জাতি আর একটিমাত্র সংস্কৃতি বিদ্যমান। তাই ইউরোপীয়ানরা ভারতীয় বা চীনার সামনে এক । এশিয়ার ভারতীয়, চীনা, আরব এক নয়, বিভিন্ন ভাষারও বটে বিভিন্ন সংস্কৃতিরও বটে ; তাই ইউরোপের সামনে আমরা এক নই,—বিক্ষিপ্ত, বহু । জগতের গতি যে ভাবে চলেছে, তাতে মনে হয়, সকলকে যদি কোনও কিছু এসে এক করতে পারে তা সে হচ্ছে ইউরোপীয় সংস্কৃতি । যেহেতু এই ইউরোপীয় সংস্কৃতি এখন সৰ্ব্বগ্রাসী । চীনের ভারতের ইস্লামের সংস্কৃতিতে বড় যা-কিছু আছে তাও এর দৃষ্টি এড়াচ্ছে না, তাকেও নিয়ে হজম ক’রে নিজের পুষ্টিসাধনে এই সভ্যতা যত্নবান,-সেই হেতু একে আমরা আর ইউরোপের গতীর মধ্যে বন্ধ না ক’রে রেখে, “ইউরোপীয় সভ্যতা” নাম না দিয়ে, “আধুনিক সভ্যতা” বা “বিশ্বসভ্যতা’ নাম দিতে পারি ; এতে ক’রে আমাদের আত্মসম্মান একেবারে যাবে না, কারণ আমাদের মনে এই বোধ থাকবে যে এই বিশ্বসভ্যতায় আমাদের অঙ্কিত উপাদানও আছে । চীনেরও তেমনি এতে • সরিকানি-স্বত্ব থাকবে—বদিও এর ছাঁচটা গ্রীসের অরি ফ্রেঞ্চ জামান ইটালীয়ান ইংরেজ স্পেনিশ রুষ প্রভৃতি আধুনিক ইউরোপের কতকগুলি জাতের দ্বারা ঢালা হয়েছে। আমাদের ভারতীয় সভ্যতা, এই বিশ্বসভ্যতার প্রাদেশিক রূপ না হোক, বিশ্বসভ্যতার আর আমাদের দেশের জলবায়ু ইতিহাস মনোভাব থেকে উৎপন্ন ভারতীয় সভ্যতার একটি মিশ্রণে পৰ্য্যৰসিত হবে ।