পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

V88 প্রবণসী ১৩৪২ মুখুজ্যে আসর জমিয়ে রাখেন। মুখুজ্যের চেহারায় আর মুখেতে “তরুণী” ফিল্মৃ-এর মানকের মত একটু ছেলেমানুষী-মাখ সারল্য থাকায় ভদ্রলোককে চট্‌ ক’রে সকলকার প্রিয় ক’রে তোলে। এ রকম সহযাত্রী পাওয়া আনন্দের কথা। অার এক জন বাঙালী যাচ্ছেন—সেন মহাশয় । ইনি তের বৎসর পূৰ্ব্বে প্রথম বিলেত যাম, আমিও সে সময়ে লওনে ছিলুম ! সমসমরিক আর দু-চার জনের কথা তুলে আমাদের প্রথম আলাপ জ’মূল। সেন মহাশয় ক'লকাতার কাষ্টমূল-বিভাগে কাজ করেন ; বেশ পড়াশুনো আছে, রসবেtধ আছে, অনেক কিছু অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের সুযোগ ঠীর হয়েছে ; সববাইয়ের সঙ্গে বেশ মেশেন, নানান বিষয়ে রকমারি খবর তিনি আমাদের দেন, আর মাঝে মাঝে বেশ পাকা মন্তব্য করেন । ইনি বেণী বাজে বকেন না ; কিন্তু এর সঙ্গে আলাপ করাটা বেশ উপভোগ্য । বাঙালী যাত্রীদের মধ্যে ইনি আমাদের একটি মস্ত asset, আর এক জন আছেন, বেশ সদালাপী, বিলেতে থেকে একাউন্টেলি পড়েন ছুটিতে দেশে এসেছিলেন, আবার ফিরছেন ; ইনি একটু ভোজন-বিলাসী, মুখুজ্যোমশাই এর নাম দিয়েছেন “ব্যারন-অফ-গ্যাসট্রনমি” সংক্ষেপে “ব্যারন”। একটা বিষয় দেখে বেশ আনন্দ হয়—deck quoit খেলার ভারতীয়ের পুরোদস্তুর যোগ দিয়েছে। শরীরচালনায় ভারতীয়েরা কাতর, এই রকম একটা কথা শোনা যেত ; কিন্তু সারা দিন ধ’রে দেখা যাচ্ছে ভারতীয়ের এই খেলার আসর গরম রেখেছে, বিশেষতঃ জন-কয়েক বাঙালী, মারাঠা আর দক্ষিণ ছেলে । এক জন গ্ৰীক ছোকরা, জনকতক ইটালীয়ান, মাঝে মাঝে জন-কতক রুষ, জামান, কচিৎ কখনও এক জন ইংরেজ—এদেরও খেলতে দেখা যায় । এতে ভারতীয়দের সম্বন্ধে লোকের ধারণা ভালই হয় । অন্ত জাতের লোকেরা একটু চুপচাপ ক’রেই চলছে, হয় ঘুমুচ্ছে নয় ডেক-চেয়ারে ব’গে বসে বই নিয়ে পড়ছে । লাহোর থেকে এক জন ধনী চামড়ার ব্যবসায়ী ধাচ্ছেন, তিনি স্কুলে কখনও পড়েন নি, ইংরিঙ্গী উর্দু, অভিধান নিয়ে ব’সে ব’সে ইংরিজী শব্দ সংগ্ৰহ ক’রছেন । ভদ্রলোকের এই প্রশংসনীয় অধ্যবসায় দেখে তার ব্যবসারও যে বেশ বাড়-বাড়ন্ত তা সহজেই বোঝা যায়। পাঞ্জাবী তরুণ স্বামী-স্ত্রী দু-জন যাচ্ছেন ; পাঞ্জাবী হিন্দু, মেয়েটির বয়স আঠার-কুড়ি হবে, খুব সুত্র দেখতে, স্বামীটির বয়স পঁচিশত্রিশের মধ্যে ; ধরণ-ধারণ দেখে মনে হয় নুতন বিবাহিত ; এর নিজেদের নিয়েই মশগুল, এদের চালচলন দেখে আমাদের দ্বারা এদের নামকরণ হ’য়েছে “কপোত-কপোতী” zil love-birds I ২৩শে মে বোম্বাই ছেড়েছি, ৩০শে হয়েজের থাল দিয়ে পোর্ট-সাইদ আর ৩রা জুন ভেনিস । জাহাজের পর্যাটা এই ভালেই শেষ হবে ব’লে মনে হয়—ব'সে ব’সে নানান জাতের মেয়ে পুরুষের দৈনন্দিন জীবন-পদ্ধতি দেখা, তা সব সুন্দর বা শোভন নয়, আর নানা বিষয়ে চিস্তা করা আর খেয়াল দেখা । এ কয়দিন সমুদ্র আর আকাশ চমৎকার ছিল, জাহাজ একটুও দোলে নি, যেন পুকুরের উপর দিয়ে এসেছে । বৰ্দ্ধন মহাশয় এক সাধক মহাপুরুষের ভক্ত ; তার বিশ্বাস এই মহাপুরুষটি তাকে আশীৰ্ব্বাদ করেছিলেন ব'লেই ঝড়ঝাপটা হয় নি। মহাপুরুষটি আমাদের বিরিঞ্চি বাবার একই আখড়ার নয় তো ? <N22