পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্ত্রীলোক সৰ্ব্বক্ষেত্রেই পুরুষের চেয়ে হীন ইহা তিনি ভুলিতে পারিতেন না। যামিনী উগ্ররকম আধুনিক ছিলেন না, তাই বিবাহ হইবা মাত্রই বিরোধ বাধিয়া যায় নাই। প্রথম বৎসর হুই তিন তিনি সতাই সুরেশ্বরের মনোরঞ্জন করিয়া চলিতে সমর্থ হইয়াছিলেন। তাহীকে দেখিলে পাথরে গড়া প্রতিমা বলিয়াই ভ্রম হইত। রাগ বা অনুরাগ, কিছুরই লীলা তাহার মধ্যে দেখা যাইত না। নিজের ঘরের কোণে লুকাইয়া থাকিতে পারিলেই তিনি যেন বাচিয়া ঘাইতেন । কিন্তু মমতার মা হইয়াই ঘামিনী বদলাইয়া গেলেন। স্বামীর সঙ্গে ছোট-বড় নানা বিষয়েই র্তাহার বিরোধ বাধিতে লাগিল এবং সুরেশ্বরের তুৰ্ব্বল ইচ্ছাশক্তি ও অসহিষ্ণুতা প্রত্যেকবারেই তাহার পরাজয় ঘটাইতে লাগিল । সুরেশ্বরের ইচ্ছা ছিল খানিকট পোষাকী শিক্ষণ দিয়াই তিনি মেয়ের বিবাহ দিয়া দিবেন। কিন্তু এক্ষেত্রেও স্ত্রীর বিরুদ্ধতা তাহাকে বাধা দিতে লাগিল। যামিনী বলিলেন, “ঐটুকু মেয়ের বিয়ে আমি কিছুতেই দিতে দেব না । সংসারের কি বোঝে ও, বিয়েরই বা কি বোঝে ?” সুরেশ্বর বলিলেন, “তবে কবে বিয়ে দিতে হবে ? চল্লিশ বছর বয়সে ?” যামিনী বলিলেন, "চল্লিশ আর বারোর ভিতর আরও অনেকগুলি বছর আছে, তার যে-কোনো একটাতে দিলেই হবে।” স্বামীর ভয়েই এক রকম তিনি মেয়েকে তাড়াতাড়ি স্কুলে ভৰ্ত্তি করিয়া দিলেন । বৎসরের পর বৎসর কাটিতে লাগিল। মমতার সম্বন্ধ নিয়মমত অtfসতে লাগিল এবং ভাঙিতে লাগিল, সে এদিকে একটার পর একটা করিয়া ক্লাস ডিভাইয়া ম্যাট্রিকুলেশনের দিকে অগ্রসর হইতে লাগিল। এখন আর স্কুল তাহার খারাপ লাগে না, বরং অনেকগুলি বন্ধু জোটাইতে পারায় বেশ ভালই লাগে। বাড়িতে ত কথা বলিবারই মানুষ নাই। মা এমন চুপচাপ মানুষ যে র্তাহার সঙ্গে দুইটার বেশী তিনটা কথা বলিতে পারা যায় না । সুজিত নিজের মহিমায় এমন বিভোর যে তাহার সঙ্গে কথা বলিতে গেলে বিরক্তিই আসে। বাড়িতে আরও আত্মীয়া যাহারা আছেন, তাহারা অবগু গল্প করিতে সদাই প্রস্তুত, তবে যামিনীই মেয়েকে র্তাহাদের কাছে ঘোষিতে দেন না। কবে কাহার বিবাহ wg 21st-it on Nరి8R হইয়াছে, কত অল্প বয়সে কে সস্তানবতী হইয়াছেন, কাহার শাশুড়ী ননদ কেমন, কে কত রূপবর্তী এবং স্বামীগোহাগিনী ছিলেন, এ-সব গল্প মমতার খুব বেশী শোনা তিনি পছন্দ করেন না । তাহার চেয়ে স্কুলে থাকা ভাল। মমতা দেখিতে ভাল, পড়ায় ভাল, বড়মানুষের মেয়ে, তবু তাহীর অহঙ্কার নাই, এই সব কারণে সে সকলেরই খুব প্রিয়। ক্লাসে আরও একটি বড়মানুষের মেয়ে আছে তাহার নাম অলকা । পড়াশুনার দিকে তাহার বিন্দুমাত্রও নজর নাই, তবে গানবাজনার ভাল। সাজসজ্জা করিতে তাহার বোধ হয় সারা সকালটাই কাটিয়া যায় । স্কুলে আসে এমন বেশে, ঠিক যেন বিবাহ-বাড়িতে নিমন্ত্রণ থাইতে যাইতেছে। মাথার ফিতা হইতে পায়ের জুতা পর্যাস্ত তাহার এক রঙের এবং মানানসই হওয়া চাই, না হইলে জগৎ তাহার চোথে অন্ধকার হইয়া ধায় । হাতে, গলায়, কানে, চুলে তাহার দশ রকম গহনা, তাও দুই দিন অন্তর বদল হয়। মুখে পাউডার স্নোর চাকচিক্য, পরিচ্ছদে এসেন্সের গন্ধ। বই পড়ক বা নাই পড়ুক সেগুলির যত্ব খুব। বই রাথিবীর ব্যাগ, পেন্সিল রাখিবার চামড়ার কেস, ঘট কত রকম। টিফিনের সময় অন্ত মেয়েরা যখন খাইতে এবং খেলা করিতে ব্যস্ত থাকে, অলকা তখন বোর্ডিঙের কাপড় পরিবার ঘরে ঢুকিয়া আবার চুল ঠিক করে, মুখে পাউডার দেয়, শাড়ী ঝাড়িয়া-ঝুড়িয়া ঠিক করে। অন্ত মেয়ের প্রায়ই মধ্যবিত্ত গৃহস্থ ঘরের, তাঁহাদের সঙ্গে মিশিতে অলকার ভাল লাগে না । মমতা খুব বড়লোকের মেয়ে শুনিয়া সে তাড়াতাড়ি তাহার সঙ্গে ভাব করিতে গিয়াছিল, কিন্তু মমতার চালচলনের বথোপযুক্ত আভিজাত্যের অভাব দেখিয়া সে আবার পিছাইয়া গিয়াছে। অলকা বেচারী জাত বঁচিাইবার জন্ত একলাই ঘোরে। মমতার এদিকে বন্ধুর ভীড়ে কাহারও সঙ্গে ভাল করিয়া কথা বলিবারই অবসর হয় না । ছায়া বলিয়া একটি মেয়ে নূতন আসিয়াছে। সে সেকেও ক্লাসে ভর্তি হইল। ইহার আগে সেও নাকি ঘরেই পড়িয়াছে। পড়াশুনায় বেশ ভাল। প্রথম দিনই মমতার তাঁহাকে বড় ভাল লাগিয়া গেল, হয়ত তাহার