পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভাদ্র ---কে ? অজয় ? —-অজয় এসেছিল দু-দিন খোজ নিতে। আর তোমার ওই কবি-বন্ধুটি রোজ এসেছে, ঝাকড়া-ঝাকড় চুল, তার আবার বাড়াবাড়ি, এক গাদা ফুল কিনে আনা কেন পয়সা খরচ করে, আমাদের বাগানে ত কত ফুল পচছে । তোমার ওই হরিসাধন ছেলেটি বড় ভাল, সেই ত সব করলে, রাতজীগী— ---হরিসাধন ? কে ? —দাদা যেন কি, হরিসাধন-দাদাকে তুমি চেন না, তোমার ক্লাসফ্রেও ! ——খুব শুশ্ৰুষা করেছে ছেলেটি, কোন পাস করা ডাক্তার অত করতে পারত না । ---আমাদের সঙ্গে যে পড়ে ? —ই্যাগো, হরিসাধন-দাদা । অরুণ প্রতিমার মুখের দিকে চাহিয়া দেখিল । তাহার চোথ দুইটি উজ্জল, অধর আরক্ত হইয়া উঠিয়াছে । অজয়ের মনে পড়িল হরিসাধনের সহিত তাহার ভাব করিবার ইচ্ছা হইলেও পরিচয় ঘনিষ্ঠ হইয় ওঠে নাই । সে প্রায়ই ক্লাসে আসে না । নিঃশব্দে আসে ক্লাসের শেষ বেঞ্চিতে বসে, বড় চুপচাপ থাকে। শুধুপ, মোটা কাপড় ও সাদা টুইলের শার্ট পর, বেশভূষার কোথাও একটু বাহুল্য নাই। স্কুলে সে যেরূপ অতি সহজ বেশে আসিত কলেজেও ঠিক সেইরূপ ভাবে আসে । কিন্তু তাহার দেহের কাচ সোনার গৌরবর্ণের জন্য অতি সাধারণ বেশভূষাতেও তাহাকে চোখে পড়ে। মুখখানি অতি শাস্ত, চোখ দুইটি মাঝে মাঝে জলজল করিয়া ওঠে। নম্র দীনতার সহিত অপূৰ্ব্ব তেজভরা মূৰ্ত্তি। সে ছেলেটি হঠাৎ কিরূপে প্রতিমার রোগগৃহে প্রবেশ করিল ও দাদা হইয়া উঠিল । অরুশ উংস্থক ভাবে ঠাকুমার মুখের দিকে চাহিল। ঠাকুমা বলিলেন—হঁ্যা, হরিসাধন তোমার সন্ন্যাসী-মামার উপযুক্ত শিষ্য বটে ! —জানো দাদা, সন্ন্যাসী-মামা এসেছেন। —সত্যি ! কোথায়, কোথায় তিনি ! —বোধ হয় গঙ্গাস্নান করতে গেছেন। —বহুদিন পর এলেন। खोषन्माझन्म وه هوا —তিনি যে দামোদরের বন্যাপীড়িতদের সেবা করবার জন্তে কাশ্মীর থেকে এসেছেন দু-বছর হ’ল । বৰ্দ্ধমানের কোন গ্রামে হরিসাধন-দাদার সঙ্গে তার পরিচয় হয় । —জনিস অরু, সেবানন্দ এসে আমায় রক্ষা করেছেন । সেদিন দুপুরে হঠাৎ মেয়ের জর গেল বেড়ে, মেয়ে একেবারে অজ্ঞান হয়ে পড়ল । আমি ত ভয়ে মরি । তোর কাকাকে জানিস্ত, সে বললে, আমি মেমসাহেব নাস এনে দিচ্ছি, ভাল, নাসিং দরকার । সেদিন বিকেলে হঠাৎ তোর সন্ন্যাসী-মামা, এসে হাজির হলেন । আমি বুঝলুমঠাকুর এযাত্রা রক্ষা করেছেন, আর ভয় নেই। সেবানন্দ কিছুতেই মেমসাহেব নাস" আনতে দিলেন না । তিনি হরিসাধনকে ডেকে পাঠালেন । ওদের নাকি এক সেবক-সমিতি আছে । সবার বাড়িবাড়ি গিয়ে শুশ্ৰুষা করা তাদের কাজ । —-হরিসাধন-দাদা এপনও এল ন; ঠাকুমা, অামায় যে ব’লে গেল সক্কালে আসবে। - —ওই তোর সন্ন্যাসী-মামা আসছেন অরু । নগ্নপদ গেরুয়া রঙের বস্ত্র ও আলখাল্প-পরা, মুঠাম দীর্ঘ দেহ শাস্ত শুাম মুখশ্ৰী, শাস্ত চোখে একটু ক্লাস্তির ছায়, কালে চুলের রাশি ঘাড়ে ঝুলিয়া পড়িয়াছে, সহস্ৰ লোকের মধ্যে একটি বিশেষ ব্যক্তিরূপে সন্ন্যাসী-মামাকে প্রথমেই চোখে পড়ে, কৰ্ম্ম-সেবকের সমূপে মাথা ভক্তিতে নত হইয়া আসে । অরুণ সন্ন্যাসী-মামার নগ্নপদের ধূলা লইয়া প্ৰণাম করিল। সেবানন্দ অরুণকে বুকে জড়াইয়ু ধরিলেন, বলিলেন–খোক, খুব বড় হয়ে উঠেছিস্ ত, মাথায় আমার সমান-সমান ; বা . গোফের রেখাটি বড় সুন্দর, তবে এখনও তা দেবার মত হয় নি। খুব পড়াশোনা করছিস শুনলুম। প্রতিমুর মাথায় হাত বুলাইয়া তিনি বলিলেন–ব, ম, জর ত নেই, জর চলে গেছে—দূর হ, দূর হজর—আর অস্থখ আসবে না, কিন্তু কুইনাইন খেতে হবে, মনে আছে। —আমি কুইনাইন খাব না । --আমি কুইনাইনের ওপর মন্তর পড়ে দেব, সন্দেশের মত মিষ্টি হয়ে যাবে। বড় বড় আপেল এনেছি। চল খোক, তোঁর পড়ার ঘর দেখি গে। সন্ন্যাসী মামা অরুণের মাতার সহােদর। তিনি শিক প্রসাদের সহপাঠীও ছিলেন। কলেজে পাঠের সময়ই র্তাহার