পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Uసాచి আমরা মা বাবার সঙ্গে তা দেখতে গিয়েছিলাম। একদিন থেৰত্ৰ সম এক জন বিশাল আকৃতি পঞ্জাবী পাঠান অসাবধানত কিংবা অশিষ্টতার জন্য র্তার এক কন্যার শাড়ী পা দিয়ে মাড়িয়েছিল। মা তাকে দুই একবার সরে যেতে বলেন। সে না সরাতে মা তাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেন। সেদিন সঙ্গে অভিভাবক কেউ ছিলেন না । সেই বৎসরই এক ভদ্রপরিবারের সঙ্গে আমরা আগ্রা দেখতে গিয়েছিলাম ; বাবা সঙ্গে ছিলেন না। একদিন রাত্রে বাসা-বাড়িতে চোর আসে । মা সেই অচেনা দেশে অজানা নূতন বাড়িতে রয়ে উঠে চোরদের তাড়াতে যান। চোরের ভয়ে পালিয়ে যায়ু । মার নিজেরই যে শুধু সাহস ছিল তা নয়, অন্যের সাহসকেও তিনি উপযুক্ত মৰ্য্যাদা দিতে জানতেন । র্তার মামার বাড়ি বঁকুড়া জেলার এক অরণ্যসক্ষুল গ্রামে। শহর থেকে অনেক মাইল পায়ে হেঁটে মা তার মামাদের সঙ্গে শৈশবে সেই জামজুড়ি গ্রামে যেতেন। সেখানে পথে বাঘভালুকের সঙ্গে সাক্ষাং নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার ছিল। এই পথে জামজুড়ির গোয়ালার মেয়ের দুধ নিয়ে শহরে বেচতে যেত, এবং ভালুকের সঙ্গে মুখোমুখি হ'লে কি আশ্চৰ্য্য সাহস এবং উপস্থিতবুদ্ধির পরিচয় দিয়ে বিপদ থেকে মুক্ত হ’ত, তার বর্ণনা মায়ের মুখে সহস্রবার শুনেছি। তার দিদিমা প্রায় নব্বই বৎসর বয়সে কি রকম লাঠি হাতে ক'রে বাঘের আক্রমণ থেকে নিজের গোয়ালের গরুবাছুর রক্ষা করতে গিয়েছিলেন, তার গল্পও মা খুব গর্বের সঙ্গে করতেন। বিপদের মুখে হতবুদ্ধি হয়ে যাওয়াকে মা অত্যন্ত ঘৃণা করতেন । নিজে কখনও সঙ্কটকালে বুদ্ধি হারান নি, এটা আমরা সৰ্ব্বদাই লক্ষ্য করেছি। তার কষ্ঠি কন্যা যখন ছয় মাসের শিশু, তখন মা এক বার বা{ড় যাচ্ছিলেন। বাবা সঙ্গে ছিলেন না, এক জন বন্ধু আঃ ভাবক রূপে সঙ্গে যাচ্ছিলেন । তখন দামোদরে বন্ত ls. মা শিশুদের নিয়ে যে নৌকায় উঠলেন তাতে অসম্ভব" ভীড় হ’ল, এবং লোকজনের ঠেলাঠেলিতে এক জন জলে পড়ে গেল। সামনেই মা শিশুকন্যাকে কোলে নিয়ে বসেছিলেন। লোকটি প্রাণের দায়ে সেই শিশুরই একথান হাত ধরে ফেলল। ম৷ যদি তখন উপস্থিতবুদ্ধি হারাতেন, তা হ’লে শিশুকন্যাকে הלחיש 398 বঁচোন যেত না, কারণ সেই লোকটির টানে শিশুটিও জলে পড়ে যাচ্ছিল। নৌকাস্থদ্ধ লোক যখন হৈ চৈ করতে ব্যস্ত, মা তখন মেয়েকে বাঁচাবার চেষ্টায় তাড়াতাড়ি ঝুকে পড়ে নিজেই প্রাণপণে সেই লোকটিকে ধরে রাখলেন। তুর্থন অন্য লোকেরা সাহায্য করতে এগিয়ে এল এবং তাকে জল থেকে তুলে ফেলল। মা’র বয়স তখন ২২ বৎসর মাত্র। এলাহাবাদে কখন কখন এমন বাড়িতে আমরা বাস করেছি, যার ধারে কাছে জনমস্তষ্যের বসতি নেই। তদুপরি সাপ, হায়েন, চোর, ডাকাত প্রভৃতির উৎপাত যথেষ্ট ছিল । এমন স্থানেও মাকে কথন বুদ্ধি হারাতে দেখি নি, বা ভয় পেতে দেখি নি। একটা বাড়িতে আমরা, বাবার এক বন্ধুপরিবারবর্গ ও অন্য বন্ধুদের সঙ্গে, একত্র থাকতাম। একদিন রাত্রে উঠানে একটা বড় সাপ বেরোনোতে বাড়ির সকলে চেচামেচি ক’রে উঠলেন। মা ঘরের ভিতর ছিলেন, তাড়াতাড়ি একট। বিছানার চাদর আর দেশলাই হাতে ক’রে বার হয়ে এলেন । পরে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে ঐদুটি জিনিষ তিনি কেন নিয়ে এসেছিলেন। মা বললেন, “অন্ধকার রাত্রি, চোখে ত কিছু দেখা যায় না ; তাই ভেবেছিলাম চাদরটায় আগুন লাগিয়ে দেব, যদি দরকার হয়। তা হ’লে সব স্পষ্ট দেখ: যাবে ।” সাহসের সঙ্গে সঙ্গে স্বাধীনতাও তার স্বভাবে প্রচুর পরিমাণে ছিল । কারও দেপাদেখি কোন কাজ করাকে তিনি অত্যন্ত অপছন্দ করতেন। তিনি যে নিজের পায়ে দাড়াতে সকল দিক দিয়েই সমর্থ, তা সকলকে বুঝিয়ে দিতেন। ঝিচাকর ছেড়ে গেলে তখনই তার জায়গায় অন্য লোক রাখতে ভালবাসতেন না। বলতেন, “ওরা না হলেও যে আমার সংসার অচল হবে না, তা সবাই দেখুক ।” অথচ আজকালকার দিনের মত চাকরদাসীকে সংসারযাত্রা নিৰ্ব্বাহের একটা যন্ত্র মাত্র তিনি মনে করতেন না। যার র্তার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করেছে, সেই সব ঝি-চাকরকে ম৷ চিরদিন মনে করে ভালবাসতেন। মাতাভিখ’ বলে মা’র এক জন চাকর ছিল । সে কি রকম প্রভূভক্ত ও কৰ্ত্তব্যনিষ্ঠ ছিল এবং তার কি রকম সময়জ্ঞান ছিল, মা তার অনেক বন্ধুবান্ধবের কাছে সে গল্প করতেন । ৩৫ বৎসর আগে গণেশ মহারাজ বলে মা'র এক পাচক ছিল । সে গত বৎসর