পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভজি কলকাতায় এসেই মার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। মা যখন এলাহাবাদ ছেড়ে আসেন তখন মার গোয়ালিনী বড়ই দুঃখে কাতর হয়ে বলেছিল, “ম-জী যদি ( এলাহাবাদের নিকটেষ্ট নমুনার পরপারে ) নইনী পৰ্য্যন্ত যেতেন, ত আমি সুধ দিয়ে আস্তাম ; কিন্তু কলকাতা পৰ্য্যন্ত ত যেতে পারব না।” - গণেশ মহারাজের ছোট একটি মেয়ে ছিল। সে রোজ সকালে আমাদের সঙ্গে বাটি নিয়ে দুধ স্বজি থেতে বস্ত, মার নিজের ছেলেমেয়েদের মত সমানে সমানে। এই শিশুটির কচি মুখের গল্প শুনতে এবং তা পরকে শোনাতে মা খুব ভাল বাসতেন । আমাদের মাতুল বলেন যে যখনই তার দেশ থেকে আসতেন প্রতিবারই মা তার বাপের বাড়ি ও মামাবাড়ির প্রামের সব লোকের কথা, এমন কি খয়রা, বাউরীদের কথাও পৃটিয়ে খুটিয়ে জিজ্ঞাসা করতেন। কারুর অক্ষণ কি মৃত্যুর কথা শুনলে অত্যন্ত দুঃগিত হয়ে শোক প্রকাশ করতেন । কুমারডাঙ্গার গঙ্গা পরামাণিক নামে এক ব্যক্তির চিকিৎস করাবার সঙ্গতি ছিল না ; মা তার চিকিৎসার জন্য অনেক ঔষধ মামার হাতে পাঠিয়েছিলেন। মৃত্যুর পূর্বদিনেও ম৷ তার ছোট ভাইকে গ্রামের সকলের ও অতি শৈশবের সঙ্গিনীদের কথা জিজ্ঞাসা করেছেন। আমাদের স্নেহশীলা ম যখন সংসারের কৰ্ম্মক্ষেত্রের কেন্দ্র হয়েছিলেন তখন যে র্তার সন্তানসেবা, পতিসেবী ও বাৎসল্যের সীমা থাকৃবে না তা সহজেই বোঝা যায়। যখন আমরা তিন জন অতিশিশু তখনই আমাদের বাবা বাংলাদেশ ছেড়ে দূর প্রবাসে প্রয়াগধামে চলে যান। তারও অনেক আগে ছেলেমেয়েদের জন্মের পূৰ্ব্বেই বাবা যখন ব্রাহ্মসমাজে আসেন, তখনই পনেরষোল বৎসর বয়সে বাবার আদর্শকে সত্য বলে বুঝে সৰ্ব্বপ্রকারে তাহার সাহায্য করবার জন্য মা বাবার সঙ্গে বাঁকুড়া থেকে কলকাতায় চলে আসেন। এতে দেশে তার খুব নিন্দ হয়েছিল। কিন্তু জ্ঞাতিরা যদিও ভেবেছিলেন যে মা বাবার সমস্ত টাকা একলা ভোগ করতে কলকাতা গিয়েছেন, তবু দেখা গিয়েছিল এখানে মা নিজেদের জন্ত নিজে রন্ধনাদি ক’রে উদ্ভূত্ত টাক বাঁকুড়ার সংসারে পাঠাতেন। মাত্র একুশ বংসর বয়সে মা তিনটি শিশু-সন্তান নিয়ে সম্পূর্ণ অপরিচিত দেশে প্রয়াগে bూనె - ): স্বৰ্গীক্ষা মনোরম দেীর আদ্য-শ্ৰাদ্ধানুষ্ঠান ఆsve কাহারও সাহায্যের আশা না রেখে গিয়েছিলেন । বন্ধুজনে মাকে অযাচিত সাহায্য যে কেউ করেন নি তা নয়, কিন্তু মা কখনও কাহারও সাহায্যভিক্ষ করেন নি। তিনি ছ’টি সন্তানকে মামুন করেছিলেন শুধু স্তন্ত দিয়ে নয়, তাদের সকল প্রয়োজন, সকল অভাব মিটিয়ে । সে দেশে বছরের মধ্যে তখন ছমাস রাধুনী পাওয়া যেত না, কাজেই ছ-মাস ধরে মার হাতের রান্নাই বাড়ির সকলে দু-বেলা থেয়েছি। শুধু যে আমরা পেয়েছি তা নয়, তখনকার দিনে আতিথ্যকে মানুষ একটা অবগুকৰ্ত্তব্য বলেই জানত ব'লে আমাদের বাড়িতে সারা বছরই অতিথির ধুম লেগে থাকৃত। বাঙালী, মরাঠা, পঞ্জাবী, সিন্ধী, হিন্দু মুসলমান কত বন্ধু-বান্ধব যে আমাদের সাদাসিধা গৃহস্থালীর ভিতর এসে মার সযত্ন সেবা গ্রহণ ক’রে গেছেন বলা যায় না। র্তার ধনী লক্ষপতি কি দরিদ্র ভবঘুরে, গৃহী কি সন্ন্যাসী, একক কি সপরিবার, মা তার বিচার করতেন ন, সকলকে সমানভাবে স্বামী-পুত্র-কন্যার সঙ্গে একই অল্প পরিবেশন করে একই ভাবে যত্ন করেছেন। র্তার সঙ্গে পুত্রকন্যাদেরও সেবা করতে শেখাতেন । কত বন্ধু আমাদের গুহে তিন-চার মাস ছ-মাস পর্য্যস্ত শুধু পরম আত্মীয়ের মত নয়, পরম আত্মীয় হয়ে গিয়ে থেকেছেন । মা তাতে এতটুকু অসন্তুষ্ট ত হনই নি, তাদের চিরদিনের মত আপনার ক’রে রাপতেই চেয়েছেন । মনে আছে এমন অনেক অতিথি আমাদের বাড়ি এসেছেন, র্যাদের পরবার দ্বিতীয় বস্ত্র নেই, গায়ের একটা কম্বল নেই । সে-সব অতিথির প্রতিও মা কখন বিমুখ হন নি। তারা অশোভন আচরণ করলেও মা সেটা হাসি গল্প করে উড়িয়ে দিতেন। বাবা দরিদ্র ছিলেন না, তার অবস্থা সচ্ছলই ছিল । তবুীমা মিতব্যয়িতা পছন্দ করতেন ব'লে ছেলেবেলা আমরা আধুনিক জীবনযাত্রার আড়ম্বর জানতাম না। মা'র সংসারের সহস্ৰ কাজের ভিতর মা তার ছেলেমেয়েদের সকলের পরিচ্ছদ নিজের হতেই সেলাই ক’রে দিতেন, তার একটা সেলাইয়ের কল পধ্যস্ত বহু দিন ছিল না। মা'র হাতের একটিএকটি ক’রে ফোড়-তোলা জামাকাপড় আমরা তের-চৌদ্দ বৎসর বয়স পৰ্য্যন্ত পরেছি। দরজির সেলাই কালেভদ্রে পেতাম । নিজের সংসারের খরচ বাচিয়ে মা যেটুকু সঞ্চয় করতেন, তা দিয়ে শ্বশুরবাড়ি ও বাপের বাড়ির আত্মীয়-স্বজন কত লোকের