পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ਚੋਂ স্বগীয়া মনোরমণ দেবীর অগস্থ্য-শ্ৰাদ্ধানুষ্ঠান ఆ6 ছিল না ব'লে তা ছাপানো হয় নি। সতের-আঠারো বৎসর আগে শান্তিনিকেতনে “শ্রেয়সী” ব'লে একটি হাতের লেখা কাগজ ছিল । তাতে মায়ের লেখা দু-একটি আছে বোধ হয়। এ ছাড়া তার একটি ভাল কবিতা ছাপানো হয়েছিল সেটি তিনি প্রায় ৩১.৩২ বৎসর আগে তার এক শিশুপুত্রের মৃত্যুতে লিখেছিলেন। তিনি প্রকৃতির ক্রোড়ে বাঁকুড়া জেলার স্বাভাবিক বন্য সৌন্দর্য্যের মধ্যে শৈশব কাটিয়েছিলেন, যৌবনে প্রয়াগধামের গঙ্গাযমুনার ত্রিবেণীধারার অপূৰ্ব্ব সৌন্দর্ঘ্য পান করেছিলেন এবং সমস্ত মন দিয়ে তাকে আপনার মধ্যে গ্রহণ করেছিলেন, তার অসম্পূর্ণ রচনাবলী হ’তে তা বোঝা যায়। কিন্তু বিধাতা তার জীবনে কঠোর সংগ্রাম যৌবনের প্রারম্ভ থেকেই লিখেছিলেন বলেই হয়ত র্তার স্বাভাবিক শক্তিগুলি বিকশিত হয় নি। আমাদের বাবা যখন যৌবনকালে উপবীত ত্যাগ করেন, তখনই মাত্র পনর-ষোল বৎসর বয়স থেকে মা উপযুক্ত সহধৰ্ম্মিণীর মত বাবার পাশে দাড়িয়ে তার সকল সংগ্রামে সমানে শক্তি দিয়ে এসেছেন । মনে পড়ে শিশুকালে দেখেছি মা বাবার কথাকে বেদবাক্যের মত সত্য বলে মনে করতেন এবং বাবার বিরুদ্ধতা যারা একতিলও করেছে, তাদের দিকে কখনও প্রসন্ন মনে তাকাতেনও না। কাজেই তিনি যে বাবার বহু দিকে সংস্কারপ্রবণ মনের সর্বপ্রধান সহায় হবেন, তা সহজেই বোঝা যায়। মার মুখে তার যে-সব নিৰ্য্যাতনের ইতিহাস শুনেছি, তাতে মনে হয়, এই সময় অনেক দিকে দৈহিক ও মানসিক দুঃখ বাবার চেয়ে মাকেই বেশী পেতে হয়েছে। আমাদের পিতামহী মাকে ভালবাসতেন এবং জ্ঞাতির বাবাকে ত্যাজ্যপুত্র করতে বলাতে কিছুতেই রাজি হন নি। কিন্তু তবুও এই সময় মাকে অপরের হাতে বহু দুঃখ পেতে হয়েছিল। ক্ষুদ্র বালিকা মাত্র হয়েও মা নির্যাতনে দমেন নি, আপন সত্য হতে এক চুল বিচলিত হন নি। মৃত্যু পৰ্য্যন্ত র্তার যে অদম্য জেদ দেখেছি, সেটা তেজস্বিতা ও সত্যনিষ্ঠারই রূপান্তর মাত্র। মা’র সত্য ও ন্তায়নিষ্ঠ মনে হয় যেন অন্ত সকল প্রবৃত্তি অপেক্ষা প্রবল ছিল । অন্যের অসৎ বা অন্যায় আচরণ যেমন তিনি সহ করতে পারতেন না, তেমনই র্তার নিজের আচরণ ও ব্যবহারের মধ্যে সত্য ও ন্তায়ের ব্যতিক্রম হ’তে দিতেন না। তিনি দৃঢ়চিত্ত ও জেদী ছিলেন–কিন্তু তার কোনও কার্ধে বা সংকল্পে সত্য বা স্থায়ের অতিক্রম হতে পারে, তা বুঝলে সে কাৰ্য্য বা সংকল্প সেই মুহুর্তেই ত্যাগ করতেন । বাবার সততা ও সাধুতা বিষয়ে মা’র কিরূপ উচ্চ ধারণা ছিল, তার রসবোধের একটি গল্প হতে বোঝা যায়। মা একবার আমাদের বলেছিলেন, “জানিস্, তোদের বাবার বন্ধুদের একটা সভা আছে, সেখানে সবাই নিজেদের নিজেদের দোষ স্বীকার করে। সভার দিনে সব চেয়ে বেশী পাপী কে হয় জানিস ?” জিজ্ঞাসা করলাম, “কে ?” মা বললেন, “কে আবার ? তোদের বাবা ” এই কথা বলে মা হেসে লুটিয়ে পড়লেন। প্রথম যুগের সংগ্রামের পর এলাহাবাদে মা কিছুকাল তার স্বাভাবিক আনন্দময় জীবন কাটিয়েছিলেন । কিন্তু তার পর আরম্ভ হ'ল আরও নূতন নূতন সংগ্রামের পালা। এগুলি আমাদের নিজেদের চোখে দেখা । স্বদেশী আন্দোলনের দু-বছর আড়াই বছর পরে বাবা চাকুরী ছেড়ে দেন এবং স্থির করেন যে এর পর আর পরের চাকুরি করবেন না। তখন আমরা পাচ ভাই বোন খুব ছোট ছোট, সকলের শিক্ষাও আরম্ভ হয় নি। বাবা ধনীর সস্তান ছিলেন না, তার হাতে এমন কিছু উদৃত্ত সঞ্চিত টাকা ছিল না, যাতে চাকুরি ছাড়া একটি মাসও সংসার চলতে পারে। শুধু মা কিছু সঞ্চয় করে বাঁকুড়ায় একটি বাড়ি কিনে রেখেছিলেন। তবু নিঃস্ব অবস্থায় বাবার চাকুরিতে ইস্তফা দেওয়ায় মা বিন্দুমাত্রও আপত্তি করেন নি—সম্মতি দিয়েছিলেন। কলেজ কমিটির সঙ্গে মতান্তর হওয়াতে বাবা চাকরি, ছেড়ে দেন। তাই সত্যবাদিত, আদর্শাল্বসারিত্ব, স্বায়পরায়ণত্ব ও স্বাধীনচিত্ততা রক্ষা করবার জন্য বাবা যে-কোনো অস্ববিধ বা বিপদে পড়ুন না কেন, মা তার সম্মুখীন হতে সৰ্ব্ব প্রস্তুত ছিলেন। প্রবাসী কাগজ কিছুদিন আগেই বেরিয়েছিল, চাকরি ছাড়ার পর বাবা মডান রিভিৰু বার করেন। এই কাগজ দুটিকে স্বপ্রতিষ্ঠিত ক’রে এদেরই সাহায্যে সংসার নির্বাহ করার চেষ্টা করা হবে স্থির হ’ল । বাবা বলেন, আমাদের মা’র চারিত্রিক দৃঢ়তা ও স্বাবলম্বন ছাড়া এই কাগজ দুটির কোনোটিই প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হতে পারত না । 驗