পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ዓ›ኪ” জানি ! নিজের ভাবনায় মশগুল! অনেক দিন পরে রাণুদি'র সঙ্গে দেখা, মনে হইল আর একটা কবিতার থাত করিব । নহিলে এ-আনন্দ কেমন করিয়া নিজের মনের মধ্যে চাপিয়৷ রাখি ! নিজের শরীরের মধ্যে যেন শিহরিয়া উঠিতেছিলাম - ভয়ে নয়, মানন্দে ! গাড়ী তেমনি চলিতেছে, কোথা দিয়া চলিয়াছে জানিবার দরকার নাই---যখন হোক পৌছিবে নিশ্চয়ই । হঠাৎ দেপি গাড়ী কথন থামিয়াছে । সরকার-মশাই মোটর হইতে নামিল ; বলিল- - আয়, নেমে আয় । বলিলাম---এখানে কেন ? এখানে তো আমাদের বাড়ি कै | সরকার-মশাই আর বাক্যব্যয় না করিয়া আমার হাত ধরিয়া টানিল। চালাকী করতে হবে ন!—নেমে পড়ে । আস্তে আস্তে মোটর হইতে নামিলাম। সরকার-মশাই বলিল--দেখি ওটা ! বলিতে বলিতে আমার হাত হইতে কাপড়ট কাড়িয়া লইল । বলিলাম--কাপড় যে আমার । সরকার-মশাইয়ের মুখ বিকৃত হইয় উঠিল। কোথাকার কে চাল নেই, চুলে নেই, এক কথায় অমনি কাপড়—দানছত্তর পেয়েছিল। জানিস, সকালবেলায় তোর জন্যে আমার যত দুৰ্গতি । বলিয়া সরকার-মশাই গাড়ীতে উঠিয়া বসিল । বলিল— আর যদি কখনও ওবাড়ি-মুখে হবি তো দেথিস্ ! বলিতে বলিতে গাড়ী ছাড়িয়া দিল । সমস্ত ঘটনাটা ঘটিল এক নিমেষে, চুপ করিয়া দাড়াইয়া রছিলাম, চারি দিক শূন্ত, কোথাও একটা অবলম্বন নাই। রাণুদি'র কথামত সেদিন ভগবানকে ডাকিবার কথা মনে মাসে নাই। মনে হইয়াছিল, তখন যদি কেহ পটু বলিয়া ডাকিয়া মাথায় হাত বুলাইয়া দেয়, তবেই হয়ত সাত্বনা পাইব । তার পরে রাণুদি'র সঙ্গে আর দেখা করি নাই। দীর্ঘ-জীবনের প্রায় অর্থাংশ কাটাইয়া জিয়াছি । সব জিনিষই তুলিতে বলিছিলাম, কিন্তু কেমন করিয়া অপ্রত্যাশিত ঘটনাক্ষে হঠাৎ জাবার সমস্ত গোলৰোগ হইয় প্রবাসী SNOBo. গেল। আবার নামিয়া আসিলাম সেই পুরাতন নিঃসঙ্গতায়। আমার জীবনের অকৃতকাৰ্য্যতার চেতনী-বোধে ! নুতন আঘাত লাগিয়া পুরাতন ক্ষত আবার আরক্ত হইয়া উঠিল। কেমন করিয়া ঘটিল সে-কথা কেউ জানে না ! তবু ঘটিয়াছে—অস্বীকার করিবার উপায় নাই । সিড়ি হইতে পড়িয়াই ছেলেটি অজ্ঞান হইয়া গিয়াছে। রক্তে মেঝেট ভাসিয়া গিয়াছে। ব্যাপারটি যেমন আকস্মিক, তেমনই বীভৎস। কল্পনায় শিহরিয়া উঠতে হয়। এই একটু আগে ছেলেটি খেলা করিয়া বেড়াইয়াছে। এক মুহূৰ্ত্ত আগে আকাশবাতাসের সঙ্গে ছিল তাহার প্রাণবায়ুর যোগাযোগ, ছিল নক্ষত্রের গতিবিধিতে নিয়ন্ত্রিত। নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে পৃথিবীর ঐশ্বৰ্য্যের স্বাদও পাইয়াছে। নীল আকাশের সীমাহীন বিস্তৃতিতে ছিল ওর দৃষ্টি প্রসারিত ; একটি তৃণ, একটি ফুল, একটি তারা ইহাদের সবাকার সঙ্গে উহার অস্তিত্বও ছিল বাস্তব। এখন আর তাহা নাই । ছেলেটিকে হাসপাতালে লইয়। যাইবার পরও অনেক ক্ষণ বসিয়া বসিয়া ইহাই ভাবিয়াছি । ছেলেদের ছুটি হইয়া গেল । সবাই চলিয়া গিয়াছে ; ঘরের ভিতর রাইচরণ বসিয়৷ বসিয়া নিজের কাজ করিতেছে । সমস্ত স্কুল-বাড়ি নিস্তন্ধ । আস্তে আস্তে ঘর হইতে বাহির হইয়া সেইখানে আসিয়া দাড়াইল । মেঝের উপর রক্তের দাগ লাগিয়া রহিয়াছে ! আশ্চৰ্য্য ! মৃত্যু-আকস্মিক মৃত্যুর অভূতপূৰ্ব্বত হঠাৎ যেন আমাকে ভয়-চকিত করিয়া দিল । মনে হইল ঃ তখনও যেন পাশাপাশি কোথাও ছেলেটি ঘুরিতেছে। দুপুরের সেট একটানা নিস্তব্ধতার মধ্যে যেন রাত্রের মোহ আছে। ভুল ভাঙিবার জন্য চারি দিকে চাহিলাম। কেহ কোথাও নাই । মনে পড়িল । ওই ছেলেটিকেই বুৰি কয়েক দিন আগে একবার শান্তি দিয়াছিলাম। কি অপরাধে মনে নাই! সে কি কাল্লা ! কান্না দেখিয়া নিজেই করুণায় আৰ্দ্ৰ হইবার ভয়ে ঘরে আসিয়া আত্মরক্ষা করিয়াছিলাম। গায়ে এতটুকু হাত তুলি নাই। অভিমানী ছেলেটির সে-কান্না দেখিয় যেন অনেক দিন আগের নিজেকে মনে পড়িআছিল। একদিন রাঁধুনি'র সাৰনাবাণীতে ঠিক অম্বনি করিয়া আমিও কাদিয়াছিলাম।-- -