পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভাদ্র উপরের দিকে চাহিয়া দেখি ; ভাঙা রেলিঙের ফাকটি যেন তখনও বিকৃত-মস্তিষ্কের মত হা হা করিয়৷ হাসিতেছে । পৈশাচিক সে হাসি। চোখ বুজিয়া রহিলাম। কেন এমন হইল ? কিসের জন্য ? সেই নিস্তন্ধ দ্বিপ্রহরে সমস্ত স্কুল-বাড়িটি যেন একটা প্রেতপুরীতে রূপান্তরিত হইয় গেল। বাড়ির প্রত্যেকটি ইট-কাঠ যেন সজীবতা পাইয়াছে । সবাই আমাকে নির্দেশ করিয়া বলিতেছে —ওই –ওই যে ! মনে হক্টল যেন আমিষ্ট অপরাধী। ভাঙা রেলিং এতদিন ধরিয়া কেন মেরামত হয় নাই । কেন এদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখি নাই ? সেই কালে রক্তের দাগ যেন আরও কালো হইয়া উঠিতেছে ; মনে হইতেছে--মৃত্যু যেন শ্বাপদসতর্ক পায়ে ঘনাইয়া আসিতেছে । প্রকাও পার্থীর মত মৃত্যু যেন হিম-শীতল পাথা বিস্তার করিয়া আকাশ পৃথিবী অন্ধকার করিয়! আমার চারি দিকে নামিতেছে । সমস্ত ঘটনাট যেন ঠিক উপলব্ধি করিতে পারিতেছি মা । কেন এমন হয় ? এই যে মৃত্যু-এক মুহূৰ্ত্ত আগে কে সেকথা কল্পনা করিতে পারিয়াছিল ? সেই দ্বিপ্রহরের প্রাখয্যের মধ্যে যেন রাত্রির স্বপ্নময়ত, রাত্রির রহস্ত নামিয়া আসিল । কেন এমন কয় ? ছট্‌ফট্‌ করিতে করিতে কে আমার আশপাশ হইতে বলিয় ওঠে— জল – জল• • • বিকালবেলা খবর পাইলাম – শেষ ! ! ! কেন জানি না, মনে হইল-কোথায় যেন গ্রস্থি বাধিয়াছে । ঠিক সেই দিনাতিবাহনের স্বমার্জিত স্বশৃঙ্খল গতি-প্রবাহ আর নাই । বাহিরের আঘাত যেন নিজের গত জীবনের সব দুৰ্ব্বলতা সব ব্যর্থতা আবার উন্মুক্ত করিয়া দিল । ঠিক এমন সময়ে এমন আকস্মিকতা এবং অনিবাৰ্য্যতার আবির্ভাব যেন মিথ্যা ! যেন কোন অজ্ঞাত অপরাধ করিয়াছি—নহিলে হয়ত এমন ঘটিত না । সারাট দিন অনুশোচনার অাঁর অস্ত রছিল না ! -- সন্ধ্যাবেল আর কোনমতেই ঘরের ভিতর বসিয়া থাকিতে পারিলাম না । চটিজোড়া পায়ে দিয়া বাহির হইলাম। কোনদিকে চলিয়াছি ঠিক নাই। উদেগুহীন গতিতে পা চালাইয়া তৃতীয় তরঙ্গ S, চলিয়াছি। এতটুকু জীবনীশক্তি যেন আর শরীরে সঞ্চিত নাই। রাস্তার পর রাস্তা— বাজার –থানা-কোন দিকে চলিয়াছি ঠিক রাখিবার দরকার নাই। মনে হইল : আজ বাসায় না ফিরিলেও চলে। সারা রাত মাঠে মাঠে ঘুরিয়া বেড়াইলে হয়ত সাম্ভুনা পাইব । সারা জীবনে কাহাকেও আত্মীয়তা-পাশে আবদ্ধ করিতে পারি নাই। যাহার নিকটতম ছিল তাহারা চলিয়া গিয়াছে। তবু যাহাঁদের কাছে পাইয়া নিজের বিগত ব্যর্থ দিনগুলির কথা ভুলিয়াছিলাম— আজ তাহদের দিক হইতেই ব্যবধান আসিল । সে দুরতিক্রম্য ব্যবধান যেন সরাইবার আর কোনও উপায় রাখি নাই। এমনি করিয়া ব্যর্থতা আসিয়া যেন আমাকে উন্মাদ করিয়া তুলিয়াছে - . দেখিতে দেপিতে কখন ষ্টেশনের কাছে আসিয়া পৌঁছিয়াছি। ট্রেনের শব্দে চমক ভাঙিল। প্রখর আলে| জালিয়৷ ট্রেনটি ভীমবেগে আসিতেছে !...আসিয়া থামিল— আবার খানিক পরে ছাড়িয়া দিবার শব্দও পাইলাম । ষ্টেশনের আশেপাশে ঘুরিয়া বাড়ির দিকে ফিরিতেছিলাম ।


এই যে মশাই, আপনিও এসেছেন । চাহিয়া দেখি : রাইচরণ--তাঙ্গর একহাতে তেলের

বোতল, অন্য হাতে বাজার • • রাইচরণ বলিল – দেখে আমুন ষ্টেশনে । কি কাণ্ড -- অজ্ঞান হ’য়ে পড়ে আছে মশাই । ছেলের খবর পেয়েই এসেছে তার ম—মরার খবর পেয়েই –একেবারে. বলিলাম – কে ? সে-কথার উত্তর না দিয়া রাইচরণ বলিল-লীগগীর আসবেন, ভাত নিয়ে ল'সে থাকবো... হন হন করিয়৷ ষ্টেশনের দিকে গেলাম। মনে হইল আমিই অপরাধী – অপরাধী আমি ! সেই ভাঙা রেলিঙের ফাকটি যেন বিরুত মস্তিষ্কের মত হা হা করিয়া হাসিতেছে । সে হাসি এখানেও শুনিতে পাইতেছি । চারি দিকে সব-কিছু আকাশ, বাতাস, গাছপালা আমাকে নির্দেশ করিয়া যেন বলিতেছে—ওই—ওই যে— কাছে গিয়া দেখি ; রীতিমত জনতা জমিয়া গিয়াছে।. কোনও বড় ঘরের মহিলা নিশ্চয়ই । চাপরাশি, দরোয়ান, লোকজন কিছুরই অভাব নাই। অতি সন্তপণে উকি