পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লোকবৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক বিপৰ্য্যয় @রাধাকমল মুখোপাধ্যায় প্রাচীন জনপদে লোকসংখ্য অত্যধিক বাড়িলে মাটি ও জল এবং উদ্ভিদ ও মানুষের পরস্পরের জীবনযাত্রায় যে সমতা প্রকৃতি পোষণ করে তাহার ব্যত্যয় ঘটে । একদা সিন্ধুনদের তীরে যে বিপুল সভ্যতা গড়িং। উঠিয়াছিল তাঙ্গ ঐ প্রদেশ শুকতাপ্রাপ্ত হওয়াতে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়, তাহার কঙ্কালাবশেষ আজ মাঝে মাঝে বালুকাস্তুপের মধ্যে আবিষ্কৃত হইতেছে । স্পন আলেকজাণ্ডার পঞ্জাব-বিজয়ে আসিয়াছিলেন তপন সিন্ধুনদের তীরবর্তী বনভূমি হইতে আহৃত কাষ্ঠ-সমুদায়ের তৈয়ারী নৌ-বাহিনীতে তিনি নদীপথে নামিয়া জেডরোসিয়াতে ফিরিয়াছিলেন। বনভূমি বিনষ্ট হওয়ায় সিন্ধুপ্রদেশ ক্রমশ: শুষ্ক হয়। প্রাকৃতিক বিপর্যায়েষ্ট ঐ প্রাচীন সভ্যতার পতন । অতীত যুগে যেমন মোহেন-জো-দাড়ে ও চারাঙ্গ মামুষের অপরিণামদশিত ৪ প্রকৃতির দগুবিধানের সাক্ষ্য দেয়, তেমনষ্ট বৰ্ত্তমান যুগে আগ্র ও মর্থর প্রদেশের ক্রমিক বালুকাভূমিতে রূপান্তর কৃষিবিস্তারের সঙ্গে অরণ্য ও গোচরণ-ভূমির বিনাশসাধনের বিষময় ফলের সাক্ষ্য দিতেছে । কুশীনারা, কপিলাবস্তু ৪ বৈশালী যে সভ্যতার কেন্দ্র ছিল তাহাও বনজঙ্গলে আঞ্জ আচ্ছাদিত । এখানে মরুভূমি নহে, অরণ্যভূমির আক্রমণ মানুষকে পরাস্ত করিয়াছে । যুগে যুগে মাকুয সংখ্যাবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মাটিকে বিধ্বস্ত করিয়া অমুর্বর করিয়াছে ; গোচারণ ৪ বনভূমি ধ্বংস করিয়৷ কাটাবনে পরিণত করিয়াছে ; সমগ্র প্রদেশের গাছপালা, ঘাস ও বন্যজন্তুর উচ্ছেদ করিয়৷ আবেষ্টনকে বংশপরম্পরার নিকট প্রতিকূলতর করিতেছে। বসুন্ধরার প্রতি যুগপরম্পরাব্যাপী অত্যাচারের ফলে দেশের উর্বরত ও আবহাওয়ার সরসতা নষ্ট হয়। হিমালয়, বিন্ধ্যপৰ্ব্বত, নীলগিরি ও পূৰ্ব্ব ও পশ্চিম ঘাটের পাদদেশে অথবা ছোটনাগপুরের উপত্যকাভূমিতে যে দ্রুতগতিতে বনজঙ্গল ৰূমিসাং হইতেছে তাহার ফলে ভারতবর্ষে নদীর বস্ত বাড়িয়াছে, নদনদী গ্ৰীণতোয় হইতেছে, উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলে বহু অর্থের দ্বারা তৈয়ারী কুল্যাগুলি পৰ্য্যন্ত বিপন্ন হইতেছে। যুক্তপ্রদেশ, গোয়ালিয়র, বোম্বাই প্রদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নদীতটে অবাধ গোচরণ ও গো-স্কুর আঘাতের ফলে ঘাসের আচ্ছাদনের অপকর্ষ ও বিনাশ হেতু গভীর খাদ শু গলির স্বষ্টি হইয়াছে। বৃষ্টিপাতের পর বহু যুগের সঞ্চিত নদীর উৰ্ব্বরতা ধুইয়। ঐ খাদ ও গলিপথে নদীস্রোতে প্রবাহিত হইতেছে। ফলে মাটির উর্বরতা হ্রাস ও নদীরও অবনতি । শ্ৰীকৃষ্ণের লীলানিকেতন, ভারত-প্রসিদ্ধ ব্ৰজভূমি, আজ ধ্বংসের মুখে । রাজপুতানার মরুভূমি তাহার একটি তীক্ষ, উষ্ণ, লেলিহান জিহবা যুক্তপ্রদেশের অতিপ্রাচীন সমৃদ্ধিশালী অঞ্চলের অভ্যস্তরে প্রেরণ করিয়াছে। সমগ্র মথুরা-বৃন্দাবন অঞ্চলে আজ মাটি বিশুষ্ক । আগ্রা ও মথুরা জেলায় কূপের জলরেখা এভ নিম্নে অবতরণ করিয়াছে যে গোঞ্জাতি জল তুলিবার পরিশ্রমে কাতর। স্থানে স্থানে গত অৰ্দ্ধ শতাব্দীতে মাটির আভ্যস্তরীণ জলরেখা পঞ্চাশ ফুট নামিয়া গিয়াছে। ঐ প্রদেশের কুলি এখন এমন বিপন্ন যে এঞ্জিনিয়ারগণ মাথ৷ খুড়িয়া সমস্তার সমাধান করিতে পারিতেছেন না। আর এক দিক হইতে নদী ও জলপথের অবরোধ হেতু প্রাকৃতিক বিপ্লব যে দেশকে ধ্বংস করে তাহার প্রকৃষ্ট উদাহরণ বাংলা দেশের পাঁচ ভাগের দুই ভাগে জঙ্গল ও জলাভূমির প্রসার ও ম্যালেরিয়ার প্রকোপ । এখানেও বাধ বাধা, রেল ও রাস্ত নিৰ্ম্মাণ লোকসংখ্যাবৃদ্ধিহেতু প্রাকৃতিক কেন্দ্রচুতিকে বেশী করিয়া প্রকট করিতেছে। ফলে বাংলা দেশেও প্রকৃতি প্রতিহিংসা লইয়াছে আজ ৬• • • • গ্রামকে বিধ্বম্ভ করিয়া । বাংলার নদীর পুনরুদ্ধার সম্বন্ধেও এঞ্জিনিয়ারগণ অধিক আশা দিতে পারিতেছেন না । একটা নগর, একটা বাজার বা একটা সেতু নষ্ট হইলে পুনরায় তাহা গড়া যায়। কিন্তু কোন দেশের সরসত, উৰ্ব্বরতা ও জলনিকাশের সহজ প্রণালী বিনষ্ট হইলে দেশকে পুনর্গঠন করা যায় না। মাছুষের প্রভুজের পর, হয় মরুভূমি