পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ማግs শিক্ষায়, বৌদ্ধসত্তেঘর ভিক্ষুদিগের ধৰ্ম্মপ্রচারে বৈদিক ধৰ্ম্ম শিথিলমূল হইয়া পড়িয়াছিল। ব্রাহ্মণদিগের প্রতিষ্ঠ, র্তাহাদের প্রাধান্ত হ্রাস হইতেছিল। সহস্ৰ সহস্ৰ লোক সনাতন ধৰ্ম্ম পরিত্যাগ করিয়া বৌদ্ধধৰ্ম্মে দীক্ষিত হইতেছিল। গীতার মুখ্য উদ্দেশু গৌতম বুদ্ধের শিক্ষা প্রতিবাদ করা ও তাহাকে নিষ্ফল করা। শাক্যমুনির শ্রেষ্ঠ শিক্ষ, অহিংসা পরমো ধৰ্ম্ম । গীতায় শ্ৰীভগবান শিথাইতেছেন ক্ষত্রিয়ের পক্ষে ধৰ্ম্মযুদ্ধ কেবল বৈধ নহে, অবশ্বকৰ্ত্তব্য। কে কাহাকে বধ করে ? দেহ নশ্বর, ক্ষণভঙ্গুর, কিন্তু যিনি দেহে বাস করেন কাহার সাধ্য র্তাহাকে বধ করে ? নৈনং ছিন্দস্তি শস্ত্রাণি নৈনং দহতি পাবকঃ । ন চৈনং ক্লেদয়ন্ত্যাপে ন শোষয়তি মারুতঃ ॥ শস্ত্রসমূহ এই আত্মাকে ছেদন করিতে পারে না, ইহাকে দাহ করিবার সামর্থ্য অগ্নির নাই, জল আত্মাকে আর্দ্র করিতে অপারগ, এবং বায়ু তাহাকে শুষ্ক করিতে অক্ষম। বুদ্ধদেবের বহু পূৰ্ব্ব হইতে আৰ্য জাতির মধ্যে কৰ্ম্ম সম্বন্ধে বিশ্বাস বদ্ধমূল ছিল, কিন্তু তিনি এই বিষয়ে নূতন তত্ত্ব প্রচার করিলেন। তিনি শিখাইলেন মানবের সর্বশ্রেষ্ঠ কৰ্ত্তব্য কর্মের কঠিন পাশবন্ধন হইতে মুক্ত হইয়া নিৰ্ব্বাণ লাভ করা। কৰ্ম্মফল হইতে রক্ষা পাইবার কোন উপায় নাই। যীশুখ্ৰীষ্ট বলিয়াছেন, যেমন তুমি বপন করিবে সেই অনুসারে তোমাকে ফল সংগ্ৰহ করিতে হইবে। ইহাই কৰ্ম্মমত। কারণ একবার সঞ্চালিত হইলেই কৰ্ম্ম তাহার অবশুম্ভাবী ফল। কারণ ও কাৰ্য্যের যে পৰ্য্যায় তাহাই কৰ্ম্ম এবং কৰ্ম্ম অনুষ্ঠিত হইলে তাহার ফল অনিবাৰ্য্য। বুদ্ধদেব অকাট্য যুক্তির দ্বারা এই মত সমর্থন করেন। কৰ্ম্মকৰ্ত্তার কোন উপায় নাই, কৰ্ম্মফল হইতে নিষ্কৃতি পাইবার সম্ভাবনা নাই। যে কৰ্ম্ম করে স্বফল অথবা কুফল তাহাকেই ভোগ করিতে হইবে, এবং জন্ম হইতে জন্মাস্তরে কর্মের দীর্ঘ হইতে দীর্ঘতর শৃঙ্খল তাহাকে বহন করিতে হইবে। কোন মধ্যস্থ অথবা রক্ষকের নিকট কোনরূপ সহায়তা পাইবার আশা নাই। তাহার মুক্তি অথবা যন্ত্রণাভোগ তাহার স্বেচ্ছাধীন। সে ভিন্ন তাহার অদৃষ্টলিপির নিয়ন্ত আর কেহ নাই। গীতায় ঐকৃষ্ণ উপদেশ করিয়াছেন কৰ্ম্ম ও কর্ণফল অভিন্ন জড়িত নহে, মানুষ ইচ্ছা করিলে কৰ্ম্মফল পরিত্যাগ করিতে পারে। প্রবাসী ૭૭૭૨ ফলের কামনা না করিয়া কৰ্ম্ম অনুষ্ঠিত হইতে পারে, কৰ্ম্মফল ভগবান অর্থাৎ শ্ৰীকৃষ্ণকে অপিত হইতে পারে। ইহাই মহৎ, অতি উদার নিষ্কাম কৰ্ম্ম, কামনারহিত কৰ্ম্মের আচরণ। যে ক্ষেত্র কর্ষণ করিয়া শস্ত বপন করিয়াছে ফসল সে না লইয়া বেতাৰুে উৎসর্গ করিতে পারে। কাৰ্য্য-কারণের অলঙ্ঘ্য সম্বন্ধ বিচ্ছিন্ন হইল। যে কৰ্ম্ম করে তাহাকে কৰ্ম্মফল ভোগ করিতে হইবে না। ব্যক্তিবিশেষের পক্ষে এই আদর্শ অত্যন্ত উচ্চ কিন্তু তাহার দায়িত্বও লাঘব হয়। অনেক যজ্ঞে, ব্রতে ও ক্রিয়ায় এই অনুসারে মন্ত্রাদি পরিবর্তিত হইয়াছে। গীতায় যে শিক্ষা তাহার অনুযায়ী পুরোহিত এইরূপ মন্ত্র আবৃত্তি করান যে ব্রত অথবা যজ্ঞের ফল শ্ৰীকৃষ্ণকে অর্পণ করিতেছি—শ্ৰীকৃষ্ণায় অপামি। বৌদ্ধ ধর্মের মূল শিক্ষা নিরাকরণ ব্যতীত ভগবানের ধরাতলে আবির্ভাব সম্বন্ধে, অর্থাৎ অবতারবাদে গীতায় স্পষ্ট নির্দেশ আছে। পুরাণে দশাবতারের উল্লেখ আছে, বেদে অথবা উপনিষদে এ বিষয়ে কোন উল্লেখ নাই। জয়দেব ও শঙ্করাচার্ধ্যের স্তোত্রে এই দশ অবতারের মধ্যে শ্রীকৃষ্ণের নাম নাই, বলরামের আছে। এই দশ জনই কেশবের অথবা নারায়ণের শরীর, অবতার। দশের সংখ্যা এইরূপ— মীন, কূৰ্ম্ম, শূকর, নরসিংহ, বামন, পরশুরাম, রাম, হলধর, বুদ্ধ ও কল্কি। সর্বশেষে যাহার নাম তিনি ভবিষ্যতে অবতীর্ণ হইবেন। গীতার যে শ্লোক সৰ্ব্বদা উদ্ধৃত ও আবৃত্ত হয় তাহাতে ভগবানের মর্ত্যে আবির্ভাবের কারণ স্পষ্টরূপে নির্দিষ্ট হইয়াছে। শ্ৰীকৃষ্ণ ভগবান অর্জুনকে কহিতেছেন, আমি জন্মমরণরহিত এবং সৰ্ব্বভূতেশ হইয়াও নিজ মায়াকে অবলম্বনপুৰ্ব্বক জন্ম পরিগ্রহ করিয়া থাকি। ইহার পরবর্তী শ্নোকে ইহার কারণ ও উদ্দেশ্য বিশদ রূপে ব্যক্ত হইয়াছে – যদ যদা হি ধৰ্শ্বস্ত গ্লানির্ভবতি ভাৱত । অভু্যুথানমধৰ্ম্মস্ত তদান্মানং श्रजैविारम् । পরিত্রাণায় সাধুনাং বিনাশায় চ দুষ্কতাম। ধৰ্ম্মসংস্থাপনাখায় সম্ভবামি যুগে যুগে । পালন ও দমনের এই আদর্শ অবতার সংখ্যা হইতে বুঝিতে পারা যায় না। প্রথম তিন অবতার স্পষ্টতঃ প্রাণীর উৎপত্তি এবং বিবৰ্ত্তনবাদের সহিত সংপৃক্ত। নৃসিংহ মূৰ্ত্তি কতক পশু, কতক মনুষ্য, স্তম্ভ বিদীর্ণ করিয়া নির্গত হইয়া