পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

جسيفه আছে তাহা বিক্রয় করিয়া যদি কিছু পায় সেই চেষ্টায় আসিয়াছে । সে-কথা এখনও তোলে নাই । কত কাল পরে বাল্যবন্ধুর সঙ্গে দেখা । প্রথমেই কি স্বার্থের কথা তোলা যায় ? পথে যাইতে যাইতে দুই বন্ধুতে স্বল্প কথাবাৰ্ত্তাই হইল। পূৰ্ব্বস্বতি ও চিন্তার স্রোতে শৈলেনের মুখের কথা কোথায় ভাসিয়া গেল। কোথাও পুরাতন স্থানের অবিকৃত পূৰ্ব্ব রূপ তাহাকে বাল্যের কত কথাই মনে করাইয়া দিল । কোথাও বা পুরাতনের নূতন রূপ তাহাকে ব্যথিত করিল। যেখানে ছায়াভরা বন ছিল—যাহার মধ্যে দুই বন্ধুতে কত স্তন্ধ দ্বিপ্রহর ও অপরাঃ কাটাইয়াছে, সেখানে আজি ছেলেদের ছুটাছুটি করিবার ও ফুটবল খেলিবার মাঠ হইয়াছে। প্রতি প্রভাতে ও সন্ধ্যায় এখন সেই স্থান চঞ্চল বালকগণের উচ্চহাস্ত ও দ্রুতধাবনে শদিত হইতেছে। যেখানে তাহার বাল্য ও কৈশোর কত হর্ষ ও বিষাদের মধ্যে কাটিয়াছে, সেখানে আজিকার ক্রীড়াশীল বালক-বালিকাগণ বিস্ময়বিস্ফারিত মেত্রে তাহার পানে চাহিতে লাগিল । তাহদের কেহই আঞ্জ তাহাকে চেনে না । সেও তাহাদিগকে আজ জানে না । শৈলেনের মনে আঘাত লাগিল । তাহার মনে অনুশোচনা জাগিল । কেন সে বৎসরে অন্ততঃ একবার করিয়া দেশে আসে নাই ? এমন যুবক বৃদ্ধ সে কয়েকটিকে দেখিল সাহাদের কোন দিন সে এখানে দেখে নাই । তাহারা আজ এই বালক-বালিকাদিগের পরম আত্মীয় হইয়া গিয়াছে। আর সে আজ পর হইয়াছে। এমন করিয়াই পর আপন হইয়া যায়, আপন পর হয় । দুই-এক জন এই গ্রামেরই বৃদ্ধের সঙ্গে দেখা হইল । তাহারা কুশল প্রশ্ন করিলেন । পুরাতন নিয়মে বাড়ির সকলের কুশল প্রশ্ন করিলেন। শৈলেনের তৃষিত চিত্ত জুড়াইয়া গেল ! নদীর তীরে আসিয়া জুতা খুলিয়া নদীর জলে একবার নামিয়া সেই জল তুলিয়া একবার মুখে দিবার লোভ শৈলেন সম্বরণ করিতে পারিল না। সিক্ত হন্তে সিক্ত পদে জল হইতে উঠিয়া শৈলেন আবার জুতা পরিল এবং দুই জনে দক্ষিণ দিকে একটু দূর পর্য্যন্ত গেল । একটু পরেই উপরে পুরাতন মাইনর স্কুল। এই পুরাতন অৰ্দ্ধভন্ন গৃহে কত ছাত্র আসিয়াছে, কত গিয়াছে। আবার 8-سے oم $ কত আসিবে কত যাইবে । ভিতরের ঐ তৃণশ্বামল ভূমি, ঐ ছায়াবহুল বিশাল অশ্বখ বৃক্ষ এখনও যেন ছাত্রদের আহবান করিতেছে। পিছনের সেই পুরাতন বকুল বৃক্ষ এখনও তেমনই অজস্র পুপ, সস্নেহ ছায়া দান করিয়া আসিতেছে । দু-জনে ভিতরে আসিয়া তৃণশ্বামল ভূমিখণ্ডের উপর বসিল । মন ছটিয়া গেল স্বদুর সেই কৈশোরের দিনে যখন বাতাসের আগে আগে প্রাণ ছুটিয়া চলিত, লঘু পক্ষভরে বুঝি-বা মেঘের কাছাকাছি গিয়া পৌছিত যেখান হইতে ধরণীর ধূলি যেন কোথায় মিলাইয়। যাইত। কর্কশ বন্ধুর প্রান্তর। উন্নতাবনতাঙ্গ পৰ্ব্বতসঙ্কুল ভূমিখণ্ড স্নিগ্ধ শুামলঐমণ্ডিত সমতল ক্ষেত্র বলিয় প্রতিভাত হইত। শৈলেন ভাবমুগ্ধকণ্ঠে বলিল—এমন শাস্তির স্থান বুঝি শার নাই। কেন এতদিন এখানে আসি নি তাই ভাবছি । উপেন বলিল—বেশী এলে হয়ত এমন শান্তি পেতে না । আমি এখানে বরাবর আছি তাই তোমার দৃষ্টিতে একে দেখতে পাচ্ছি নে । শৈলেন। কত কাল হয়ে গেল, তবু যেন মনে হয় এসব মাত্র সেদিনকার ঘটনা । যেন সেদিন ওই ফাষ্ট ক্লাসে বসে গেছি ; এখনও ক্লাসে গেলে চোখ বুজে সেই জায়গায় গিয়ে বসতে পারি। হেডমাষ্টার-মশায়ের কথাবাৰ্ত্তা, তার কানমলা ও সস্নেহ চাপড়, অষ্ঠায় করলে তার বেতের আস্ফালন যেন সামনে ভাসছে। উপেন। তার পর প্রাকৃটিস্ কেমন চলছে বল । ভাগলপুরেই ত আছ এখন ? শৈলেন । আর কোথায় যাব, বল ? কুক্ষণে জেঠশ্বশুরের কথায় বাংলা দেশ ছেড়ে তার কার্য্যস্থান মুঞ্জেরে যাই। সেখানে কিছু হ'ল না। তার পর দুটো জায়গা বদলে শেষটা ভাগলপুরে এসে বসেছি। এ বয়সে আর জায়গা বদলাতে সাহস হয় না। এখানে তৰু হাকিমদের দয়ায় মাসে মাসে দুই-চারটা কমিশন পাই। প্র্যাকটিস্ নেই বললেই হয়। রাত্রে ছটা ছেলে পড়াই। ভাগ্যে মতিবাবুর ছাত্র ছিলাম তাই ইংরেজী অঙ্ক দুটো বিষয়ই এক রকম চালিয়ে নিতে পারি। প্রত্যেক বছরেই দুটি ছেলে পাই ।