পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আণশ্বিন ব্ৰহ্মদেশের ছেলেমেন্নে ԳԵած: ছেলেদের ফুঙ্গি চাউজে পড়তে দেন না, প্রথম থেকেই তাদের ইংরেজী স্কুলে পাঠিয়ে দেন। স্কুলে গিয়ে এদের ইংরেজী ভাষাটা শিক্ষার দিকেই ঝোক হয় বেশী, এবং স্কুলে যাবার বছর-খানেক পর থেকেই, শুদ্ধ-অশুদ্ধ নানা রকম উচ্চারণ করে এবং অনেক ভুল ক'রে ক'রে ইংরেজীতেই এরা পরস্পরের সঙ্গে কথোপকথন করতে আরম্ভ করে,—তার পর আরও দু-তিন ক্লাস পড়তে পড়তেই, কাজ চালিয়ে যাবার মত ইংরেজী ভাষা এর বেশ বলতে পারে। বৰ্ম্মা ছেলেমেয়ের সদাই সদানন্দ, জন্মাবধিই এর আনন্দের মধ্যেই মানুষ হতে থাকে। মানুষের জীবনের সব চেয়ে যা বড় দুঃখ, আত্মীয়-স্বজনের মৃত্যুতে শোকগ্রস্ত হয়ে থাকা, আমাদের দেশে এই রকম এক-একটা মৃত্যু, সংসারটাকে কতদিন যা আর মাথা তুলতেই দেয় না, প্রতিবেশী বন্ধুবান্ধদেরও এই সময়ে সময়োচিত দুঃখিত ব্যবহারে এবং আরও কত ভাবে পড়িটিকে যেন কত কাল ধরেই দুঃখের কালে একটি ছায় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। কথাবাৰ্ত্তায় চলাফেরায় - আত্মীয়-স্বজন বন্ধুবান্ধবদের আসা-যাওয়ায়, সকল কিছুতেই যেন প্রতিনিয়তই নূতন নূতন করে দুঃখ বেদন উচ্ছসিত হয়ে উঠে। মৃত্যু এদের দেশেও আছে, দুঃখ বেদন শোক তপ সে সব মানুষ মাত্রেরই আছে, কিন্তু সে শোক এরা সপ দিতে জানেন, শোকে বেদনায় মুহমান হয়ে পড়ে থাকা এদেশে কখনও দেখি নি । আলো বাতি ফুল সাজসজ্জা এলং পেলায় মৃতের গৃহে যেন একটি উৎসবের সমারোহ পড়ে যায়। উজ্জল বেশে বন্ধুবান্ধবদের আগমনে এবং চা সিগারেট ইত্যাদি । দিয়ে ওঁদের পরিতৃপ্ত করা, এগুলি এদেশের সামাজিক নিয়ম। মনের ভিতর যত শোকই থাক, সুসজ্জিত গৃহে বন্ধুবান্ধবদের অভ্যর্থনা করা এদের অপরিহার্য্য কৰ্ত্তব্য । বোধ হয়, এত বড় শোকটি এত সহজে জীবনের মধ্যে সহনীয় ক’রে নিতে পারার জন্তই, অন্য কোন রকম দুঃখ বেদন৷ এর গ্রাহুই করে না। ছোট ছোট শিশুরা এই জন্যই একটা সহজ আনন্দ নিয়েই জন্মগ্রহণ করে, এবং এই আনন্দই ওদের সারা জীবনে দুঃখ-দারিত্র্যের সহস্ৰ অভাবেও ক্লিষ্ট করে ফেলে না। এমন একটি স্বন্দর সন্ধ্যা বাদ যায় না, যেদিন না দেখতে পাই পাড়ার সব হৃষ্টপুষ্ট ফুলেরই মত স্বন্দর কচি কচি ছেলেমেয়েগুলি বাড়ির সম্মুখের রাস্তায় সবাই মিলে গ্রামোফোনের অনুকরণে গান গাইছে, এবং পোয়ে নাচের মত সমস্ত দেহখানিতে ময়ূরের প্যাখম তোলার চেষ্টা ক'রে করে নাচছে এবং এমন একটি সুন্দর চাদিনী রাতও বাদ যায় না, যেদিন না স্কুলের তরুণ ছেলেদের দেখতে পাই, বেহালা এবং ম্যাণ্ডোলিন কিংবা ব্যাঞ্জে নিয়ে নিয়ে সমস্ত শহরের রাস্ত ঘুরে ঘুরে কত রাত অবধি গান গেয়ে গেয়ে বেড়াচ্ছে । পরীক্ষায় ফেল হ’লেও এদের তত দুঃখ হয় না, যত দুঃখ হয়, শহরের একটি পোয়ে-নাচ দেখতে না পেলে কিংবা জ্যোৎস্নারাতে বন্ধুদের সঙ্গে গিয়ে গানের আডডায় যোগ দিতে না পেলে । ফুটবল খেল, সাতার কাটা - সব কিছুতেই এদের সমান উৎসাহ । বিকেলে নদীর চরে বেড়াতে গেলে দেখতে পাই দলে দলে ছেলেরা ইরাবতীর বুকে ঝাপিয়ে পড়ে সাতার কাটছে, সারাদিনের কাজের পর বৈকালিক আহার সমাপ্ত হলেই এদের স্বানের নিয়ম । নদীর বিস্তৃত চরে এখানেওপানে কোথাও ছেলেরা, কোথাও মেয়ের দল বেঁধে স্নান করতে এসেছে, মেয়েরা কেউ কেউ সাতার কাটছে, কেউ বা পাশ্ব বৰ্ত্তিনীর সঙ্গে গল্প করতে করতে কাপড়-কাচা, সাবান-মাখ শেষ ক’রে নিয়ে, স্বানশেষে কলসী মাথায় নিয়ে বাড়ি যাচ্ছে, ছোট ছোট মেয়েদের মাথায়ও একটি করে কলসী, আনন্দোজ্জল দীপ্ত মেয়েগুলি অবলীলাক্রমে কলসী ভরে জল নিয়ে বাড়ি যায়, গান গাইতে গাইতে আবার দল বেঁধে সব ফিরে আসে, বাড়ির যত জলের প্রয়োজন, তার বেশীর ভাগ এই ছোট মেয়েরাই চার বারে পাচ বারে নিয়ে পূরণ করে দেয়। অবশু সাধারণ গৃহস্থ ঘরেই এ রকম হয়, সরকারী কৰ্ম্মচারীদের বাড়িতে জল দেবার জন্যে কুরঙ্গী পানিওয়ালা আছে, বাড়ির যত জলের প্রয়োজন, তারাই তা তোলে । কোন কোন বিশেষ দিনে বা গরমের দিনে প্রায়ই দেখা যায়, পাড়ার বয়স্থ মেয়ের সবাই নিজেদের পাড়ার ফুঙ্গি চাউজে জল দিতে যাচ্ছে, এক-একটি দলে ত্রিশ-চল্লিশটি স্বসজ্জিত তরুণী, সবারই মাথার কলসী ধবধবে সাদা পাতলা কাপড়ে ঢাক, এই দিনটিতে অনেক সরকারী কেরানীর মেয়েরাও এদের সঙ্গে যোগ দেয়, কেন-ল, ফুঙ্গি চাউঙ্গে জল দিয়ে পুণ্য সঞ্চয় করবার লোভ সবারই আছে। কোন বড় বড় পুঞ্জ-পাৰ্ব্বণের আগে কতবার দেখেছি