পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশ্বিন সম্বন্ধে শিক্ষাদানই যে রোগ-নিবারণের একটি প্রকৃষ্ট উপায় তাহা আমাদের স্মরণ থাকে না । অনেকে হয়ত বলিবেন যে জনসাধারণ শিক্ষিত না হইলে রোগ সম্বন্ধে শিক্ষাদান সম্ভবপর নহে। ইহা কোন ক্রমেই স্বীকাৰ্য্য নয়। ইউরোপেও বহু অশিক্ষিত লোক আছে—বহু বিষয়ের তাহারা কিছুই জানে না । ইহা আমার কল্পনাপ্রস্থত উক্তি নহে—এখানে বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও তাহা স্বীকার করেন, এবং যে-কোন ভারতবাসী এখানকার নিম্ন শ্রেণীর লোকদের সংশ্রবে আসিয়াছেন তিনিই জানেন। ইহা আমাদের সর্বদাই স্মরণ রাখা কৰ্ত্তব্য যে ইউরোপীয় দেশসমূহে অন্য দেশের প্রোপাগাণ্ড মিনিষ্টার আছেন এবং তিনি নিজের দেশকে অন্য দেশের চক্ষে সৰ্ব্বদাই বড় করার চেষ্টা করেন। মৃতরাং সেন্সস্ এবং ষ্টাটিষ্টিক্সও সেইভাবে সংশোধন করেন। আর আমাদের দেশে হয় ঠিক বিপরীত। ভারতীয়রা সব বিষয়েই হীন ইহাই ভারতের বাহিরের দেশসমূহে প্রচারের জন্য রিপোর্টগুলিও সেইভাবে তৈয়ারী হয়। আর সেই রিপোর্টে আস্থা স্থাপন করিয়া আমরা ভাবি, অন্য দেশের তুলনায় আমরা কিরূপ অশিক্ষিত ! যত বেশী অশিক্ষিত আমরা নিজেদের ভাবি, ততটা কিন্তু আমরা নষ্ট । বিদেশে আসিলে তাহা সহজে বোধগম্য হয়। শিক্ষিত হউক বা অশিক্ষিত হউক, স্বাস্থ্যবিজ্ঞান ইহাদের মস্তিষ্কে বহুবার বহুরূপে প্রবেশ করান হয়—গভর্ণমেণ্ট করে । আর আমাদের দেশে জনসাধারণকে স্বাস্থ্যবিজ্ঞান শিক্ষা দিবার জন্য মোটেই চেষ্টা করা হয় না । চেষ্টা করিলে যে কোন ফল হইবে না ইহা অসম্ভব। মৌখিক জ্ঞানদানের জন্য কোনও প্রাথমিক শিক্ষার প্রয়োজন হয় না, যদি লোকের মস্তিষ্ক থাকে । সমস্ত মস্তিষ্ক g এই দেশেই আশ্রয় লইয়াছে ইহা ত স্বীকার করা যায় না । যাহা হউক, প্রচারকার্য্য স্বাস্থ্যবিষয়ক কশ্মিগণের চিস্তার বিষয়। ইহা মনে হয় যে সাধারণকে স্বাস্থ্যবিজ্ঞান সম্বন্ধে কিঞ্চিং জ্ঞান দান করা ব্যতীত এ ভয়াবহ রোগ হইতে নিষ্কৃতি লাভের কোনও উপায় নাই। এ-পর্য্যন্ত ইহার কোনও উপযুক্ত চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয় নাই—কোনও ফলপ্রদ প্রতিষেধকও নাই। কিন্তু তবুও ইউরোপীয় দেশসমূহ এ রোগকে বহুল পরিমাণে দমন করিতে পারিয়াছে সাধারণের শিক্ষা ও বিশিষ্ট প্রতিষ্ঠান দ্বারা । ইহাদের প্রচার-বিষয়ক ও প্রতিষ্ঠানসম্বন্ধীয় আলোচনাই এ-প্রবন্ধের মূল উদেশ্ব। বঙ্গদেশে ক্ষয়রোগ ዋvዊ প্রথমে বিবেচ্য, ইহারা কি শিক্ষা দান করে। জাৰ্ম্মান বিশেষজ্ঞগণের মতে খাদ্যাভাব, উপযুক্ত স্বৰ্য্যালোকের অভাব, অতিরিক্ত পরিশ্রম, দুষ্ট বায়ু নিঃশ্বাসের সহিত গ্রহণ করা প্রভৃতি কারণ দেহের রোগ-নিবারণী শক্তির হ্রাস করে। তার পর কোনও ক্ষয়রোগীর সংস্পর্শে আসিলে দেহ সহজেই ক্ষয়রোগ দ্বারা আক্রাস্ত হয় । এখন আলোচ্য বিষয়, এই সব কারণ আমাদের সম্বন্ধেও প্রযোজ্য কিনা । খাদ্যাভাব বঙ্গদেশে এখন খুবই হইয়াছে। তাহার অর্থ ইহা নহে যে, সকলেই অনশনে দিনযাপন করি। বৈজ্ঞানিক মতে খাদ্যাভাব মানে বুঝায় পুষ্টিকর ও শরীরের ইষ্টজনক খাদ্যের অভাব। পাকস্থলী একটি থলিয়া মাত্ৰ—ইহ লৌহদ্বারাও পূর্ণ করা যায় অথবা স্বর্ণদ্বারাও পূর্ণ করা যায়। আমরা এখন লৌহদ্বারাই পূর্ণ করিয়া থাকি—স্বণ-নির্ণয়ের ক্ষমতা আমাদের নাই । রেস্তরীর চপ, কাটলেট, চা, ছাত্ৰগণের সর্বনাশ সাধন করে,— অতিরিক্ত ভেজাল দ্রব্য সংযুক্ত আহার মেসের বাঙালীর ও অবস্থাপন্ন লোকের অনিষ্ট, করে, তাহারা সম্পূর্ণরূপেই চাকর-ঠাকুরের উপর নির্ভর করেন বলিয়। ;-মাতৃদুগ্ধাভাব বা অতিরিক্ত পেটেণ্ট ফুড শিশুর স্বাস্থ্য ধ্বংস করে । আমরা হয়ত অনেকেই ঐরুপ অনিষ্টকর খাদ্য পেট ভরিয়া খাই এবং ভাবি খুবই খাইলাম, কিন্তু থাইলাম সত্যঙ্ক বিষ এবং তাহার ফল হইল এই যে পেটের রোগে যন্ত্রণা পাইতে লাগিলাম, সতের-আঠার বছর বয়সে ডিসপেপসিয়া হইল, বহুপ্রকার দেশী-বিলাতী ঔষধ সেবন করিলাম, এদিকে পুষ্টির অভাবে শরীর ধ্বংস হইতে লাগিল—তার পর পচিশ-ছাব্বিশ বৎসর বয়সে অকালবৃদ্ধ সাজিয়া ত্রিশ বৎসর বয়সেই সংসার হইতে অবসর গ্রহণ করিলাম। কিন্তু আমাদের পিতৃপিতামহগণের ত এরূপ দুৰ্দ্দশার কথা শুনিতে পাই না । তাহারা রেস্তরায় কখনও আহার- করেন নাই । রেস্তরীর উৎপত্তি অতি আধুনিক। পাশ্চাত্য সভ্যতার অনুকরণ করিতেই ইহার উৎপত্তি। কিন্তু ইউরোপীয় রেস্তরীর ও আমাদের কলিকাতার অলিতে-গলিতে রেস্তরার অনেক প্রভেদ। কলিকাতার রেস্তারাতে কখনও ভাল খাবার পাওয়া যায় না, সেটা আমাদের রেস্তর"-ওয়ালাদিগের শিক্ষার দোষে ও স্বাস্থ্য-কৰ্ত্তাদিগের ক্রটির জন্য—নহিলে , কলিকাতার মেডিক্যাল কলেজের