পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

مسيStخه মমতা বলিল, “খেয়েই ত এলাম, আবার খাব কি ? আমি কি রাক্ষস ? ? লুসি বলিল, “সে ত শুধু চ খেয়েছিল, তাতেই পেট ভ'রে গেল ?” মমতা তাহার পাশে শুইয়। পড়িয়া বলিল, “লুচিটুচি অতগুলো খেলাম, আবার এই রাতে খাওয়া যায় নাকি ?” তাহার পর ফিসফিস্ করিয়া আরম্ভ হইল পার্টির গল্প। ঘটে নাই ত কিছুই, মাতব্বর মানুষ হইলে এই সন্ধ্যাটির বিষয় বলিবার মত কোনো কথাই হয়ত খুজিয়া পাইত না । অথচ দুইটি কিশোরীতে গল্প চলিল অনর্গল, পূর্ণ একটি ঘণ্টা ধরিয়া। কে কি বলিল, কে কি গান করিল, কে কেমন দেখিতে, গল্প নিজের গুণেই ক্রমে যেন জমিয় উঠতে লাগিল । যামিনী খানিক পরে আসিয়া বলিলেন, “এবার ঘুমো বাছার, আর রাত জাগিস নে, কাল আবার সারাটা দিন হৈ হৈ করেই যাবে।” মমতা জিজ্ঞাসা করিল, “কেন মা ? কাল কি ?” যামিনী বলিলেন, “কাল আবার উনি এক জনকে বিকেলে চ খেতে নিমন্ত্রণ করেছেন কিনা ?” তিনি চলিয়। যাইতেছিলেন, আবার ফিরিয়া আসিয়া বলিলেন, “এদিককার দরজাটা বন্ধ ক'রে দিস মা, আজ আমি ওঘরে থাকব । নিত্যকে বলব এ-ঘরে গুতে ?” নিত্যর বিপুল নাসিকাগর্জন মমতার ঘুমের ভারি বাধা জন্মায় । সে ব্যস্ত হইয়। বলিল, “না মা না, আমরা দু-জন রয়েছি, কিছু ভয় করবে না আমাদের।” যামিনী চলিয়া গেলেন। স্বরেশ্বর নিজে ঘুমাহতে না পাহলে যামিনীকেও পারতপক্ষে ঘুমাইতে দেন না। ছেলেমেয়েকেও জাগাইয়। রাখিতে ইচ্ছা করে, কিন্তু আবার মায়াও হয়। তাহার চাকর এবং যামিনীকে আজ রাত্রে জাগিয়াই কাটাইতে হইবে, তাহ তাহারা জানিয়াই রাখিয়াছেন। তবে দেবেশকে নিমন্ত্রণ করিতে পাইয় স্বরেশ্বর কিছু খুশী হইয়াছিলেন, তাহার উপর গোপেশবাৰু তাহার নিমন্ত্রণ-পত্রের উত্তরে এমন এক অতি অমায়িক চিঠি লিথিয়াছেন যে মুরেশ্বর একেবারে গলিয়া গিয়াছেন। স্বতরাং রাত্রে ঘুমাইয়া পড়াও তাহার পক্ষে অসম্ভব নয়। এখন ত প্রবাসী SNご8ミ. ঘুমাইয়াই আছেন, বারোটার পর না জাগেন, তাহা হইলেই রক্ষা। যামিনী নিঃশবে ঘরে ঢুকিয়, দরজা বন্ধ করিয়া, ক্যাম্পখাটের বিছানার উপর গুইয়া পড়িলেন। সে রাত্রে আসলে ঘুম হইল না খালি মুজিতের । তাহার অত্যন্তই রাগ হইয়াছিল, তবে সেটা কাহার উপর, তাহ সে নিজেও ভাবিয়া পাইতেছিল না। যাহা হউক, সেটা কাহারও উপর ভাল করিয়া ঝাড়িতে না পারিয়া, তাহার মাথাটা এমন গরম হইয়া রহিল যে রাত্রে ভাল করিয়া ঘুমান একেবারে অসম্ভব হইয়া উঠিল । সকালেই আবার হতভাগ ড্রাইভার গাড়ীটাকে লহয়, কারখানায় দিয়া আসিল । ইহাও স্বজিতের রোষের আগুনে খানিকটা ঘৃতাহুতি দিল । সারারাত স্বরেশ্বর সত্যই ঘুমাইয়াছিলেন, এবং মেজাজটাও তাহার ভালই ছিল । শরীরটাও অতএব খানিকট মুস্ত বোধ করিতেছিলেন । কিন্তু স্বভাব যাইবে কোথায় ? কতক্ষণে স্ত্রীর সহিত কিছু একটা লইয়া কথা-কাটাকাটি করিতে পারিবেন, তাহারই স্বযোগ খুজিয়া তিনি যেন বসিয়াছিলেন । যামিনী ইচ্ছা করিয়াই সারা সকালটা রান্নাবাড়ি এবং ভাড়ার-ঘরে কাটাইয়া দিলেন। উপরে গিয়া ঝগড়া করিবার মত উৎসাহ তাহার মনে বিন্দুমাত্রও আর ছিল না। স্বরেশ্বরের চিম্‌টিকাটা কথা শুনিলে, সহস্ৰ চেষ্টাতেও বিরক্তি তিনি দমন করিতে পারিবেন না, তাহী তিনি জানিতেন, স্বতরাং তাহার সান্নিধ্য একেবারে পরিহারই করিয়া চলিতেছিলেন । মাঝে মাঝে লুসি বা মমতাকে দিয়া দরকারী কথা দুই-চারিটা বলিয়া পাঠাইতেছিলেন । মমতার মন আজ বড় ভার হইয়া আছে । অতিথিটি যে কে, এবং কেন তাহার শুভাগমন হইতেছে, তাহা জানিতে মমতার বাকী নাই। লুসি থাকিতে সংবাদদাতার অভাব নাই। লুসির উৎসাহেরও অন্ত নাই, মমতা ধনীর কন্যা, তাহার উপর যদি ম্যাজিষ্ট্রেটের স্ত্রী হয়, তাহা হইলে পার্থিব মুখের চরম শিখরে চড়িতে আর তাহার বাকি রহিল কি ? কিন্তু মমতা বয়সে তাহার চেয়ে বড় হইলে কি হয় ? এখনও যেন খুকীই থাকিয়া গিয়াছে। নিজের ভাল-মন্দও নিজে বুঝিতে পারে না। এই বিবাহের সম্ভাবনায় তাহার মনে