পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ooهسty আবার বাইরের লোকজন আসবে কি না ? অার দেখ লুসিকেও বেশ ভাল কাপড়চোপড় গহনাগটি পরতে বলবে। সে যদি না এনে থাকে ত তোমার মাকে বলবে তাকে কিছু কিছু আলমারী থেকে বার করে দিতে। এক বাড়ির দুই মেয়ে দু-রকম সাজলে ভাল দেখায় না। একটি ছেলে আসছে তোমাদের সঙ্গে আলাপ করতে, তার সঙ্গে বেশ খোলাখুলি ভাবে আলাপ করবে, লঙ্গ বা সঙ্কোচ ক’রে না । সে ওসব ভালবাসে না, গান-বাজনা করতে বললে অবশ্য করবে।” বাপের এতখানি অনাবশ্যক উপদেশ পাইয়। মমতা একটু ভীতভাবেই ঘর হইতে চলিয় গেল । আগন্তুকের প্রতি মনটা তাহার আরও বিরক্ত হইয়া গেল। কে না আসিতেছেন নবাবপুত্র তাহার জন্য বাবার কাও দেথ না ? যাহা হউক, সে বাপের মুখের উপর ত কিছু বলিতে পারে না ? কাজেই ঘরে ফিরিয়া গিয়া সাজ-সজ্জায়ই মন দিল। লুসিকেও ডাকাডাকি করিয়া স্নানের ঘর হইতে বাহির করিল। যামিনীর কাছে চাবি চাহিয়া আনিয়া দু-জনে যথেচ্ছ শাড়ী, ব্লাউস টানিয়া বাহির করিয়া থাটের উপর রঙের বন্যা বহাইয়া দিল । অনেক গবেষণার পর লুসি একটি গাঢ় সবুজ রঙের দক্ষিণী শাড়ী বাছিয়া লইল, মমত সান্ধ্য মেঘের মত হাস্ক লালরঙের একখান রেশমের কাপড় বাছিয়া লইল, তাহাতে চওড়া স্বরাটি জরির পাড় বসান। চুলবাধা কাপড়-পরা খুব উৎসাত সহকারে চলিতে লাগিল । যামিনী মাঝখানে একবার আসিয়া উকি মারিয়৷ দেখিলেন। তিনি তখন গা ধুইতে যাইতেছিলেন। বলিলেন, “করেছিস্ কি রে? এ যে একেবারে শাড়ীর বাণ ডাকছে ।" মমতা বলিল, “আমরা আবার তুলে রাখব মা গুছিয়ে। তুমি যাও শীগগির, লোকজন এসে পড়লে বাবা এখুনি বক্‌বক্ করতে স্বরু করবেন। শুধু আমাকে সেই বড় মুক্তোর কষ্টট দিয়ে যাও, আর লুসিকে গলার জন্তে একট কিছু দাও।” যামিনী তাহাদের প্রাথিত জিনিষ বাহির করিয়া দিয়া চলিয়া গেলেন । নীচে চাকর ঝি, মালী সবাই মিলিয়া প্ৰৱাসী ১৩৪২ বিপুল কোলাহল সহকারে ড্রয়িং-রুম এবং ডাইনিং-রুম সাজাইতে লাগিল। কেবলমাত্র দেবেশকে একলা অতিথিরূপে ডাকিলে সে হয়ত সঙ্কোচ অনুভব করিতে পারে, তাই স্বরেশ্বর নিজের ছোট ভাই শিশিরকে এবং মিহির, প্রভা এবং বেটুকেও নিমন্ত্ৰণ করিয়া পঠাইয়াছেন। দেবেশ শুধু যে কন্যাটিকেই যাচাই করিবে তাহ নহে, সঙ্গে সঙ্গে কন্যার আত্মীয়-স্বজন সকলকেই যাচাই করিবার সুবিধা পাইবে। অতিথিদের আসিবার সময় হইয়া গিয়াছে, কৰ্ত্তা, গৃহিণী, ছেলে-মেয়ে সকলেই প্রস্তুত হইয়া অপেক্ষা করিতেছেন ; একখানা গাড়ী ত কারখানায়, আর একটা গাড়ী, যেটি স্বরেশ্বরের নিজস্ব বাহন, তাহা মিহিরদের আনিতে গিয়াছে, কারণ তাহাদের গাড়ী নাই। শিশির বড়মানুষ, সে নিজের গাড়ীতেই আসিবে । দেবেশকে প্রথমে গাড়ী পাঠাইবেন স্বরেশ্বর ভাবিয়াছিলেন, তাহার পর ভাবিলেন, অতটা আধিক্যত এখনই ভাল নয়, ছেলেটা ভাবিবে যে সে না জানি কোন সাত রাজার ধন এক মাণিক । বাড়ি ফিরিবার সময় না-হয় সুরেশ্বর তাহাকে নিজের গাড়ীতে পাঠাইবেন। প্রথমেই আসিল মমতার মামার-বাড়ির দল। প্রভ কথা বলে একাই এক-শ’র সমান, সে আসিবামাত্রই তাহার হাসিতে এবং গল্পে বাড়ি মুখরিত হইয়া উঠিল। এমন কি স্তরেশ্বরেরও মুখের এবং মনের উপরের মেঘ অনেকখানি কাটিয়া গেল । তাহার পরই আসিল দেবেশ । তাহার গাড়ী নাই, কাজেই সে ট্যাক্সি করিয়া আসিয়াছে। সাধারণতঃ সে হিসাবী মাচুর্য, কিন্তু আজ তাহাকে গুটি-তিন টাকা খরচ করিতেই হইয়াছে, কারণ জমিদার-বাড়িতে কিছু ভাবী জামাই ট্রামে চড়িয়া আবিভূত হইতে পারে না ? দেবেশ আসিতেই স্বরেশ্বর নীচে নামিয়া গিয়া, তাহাকে আদর করিয়া বসাইলেন । শিশির তখনও আসিয়া পৌছায় নাই বলিয় তাহার বিরক্তি বোধ হইতে লাগিল । তাহার শরীর ভাল নাই, অথচ দেবেশকে একেবারে মেয়ে-মজলিসে ফেলিয়া তিনি চলিয়া যাইতে পারেন না। শিশির থাকিলে সে-ই র্তাহার প্রতিনিধি হইতে পারিত, মিহির হাজার হউক অন্ত পরিবারের মানুষ, কস্তার মামা মাত্র। н যাহা হউক, সুরেশ্বর উপরে খবর পাঠাইয়া দিলেন,